সকল বাবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা

সম্পাদকীয়

দুটি বর্ণের খুব ছোট একটি নাম বাবা। বাস্তবতায় তার গভীরতা আর বিশালতা সীমাহীন। আদর-শাসন, স্নেহ-মায়া-মমতা, সন্তানকে ভালো রাখতে নিজের জীবনটুকুও যিনি দিতে সদা প্রস্তুত থাকেন, তার নাম বাবা। প্রতিটি বাবার মাধ্যমেই সন্তানের জীবনের শুরু, যার ঋণ পরিমাপ করার ক্ষমতা সন্তানদের প্রকৃতি দেয়নি। মা দিবস কয়েকশ’ বছর ধরে পালন করা হচ্ছে। বাবা দিবসটি অনেক নতুন। বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিক থেকে শুরু হয় বাবা দিবস পালন। মায়েদের পাশাপাশি বাবারাও যে সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল, এটা বোঝানোর জন্যই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। মা দিবস বা বাবা দিবস সন্তানের চোখের সামনের পর্দাটি খুলে পিতা-মাতার প্রতি তার দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করতে মা দিবস ও বাবা দিবসের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। মোটকথা, আমাদের পরিবার তথা সমাজে বাবার যে গুরুত্ব, তা আলাদাভাবে তুলে ধরাই বাবা দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য। বাবার প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা জানানোর জন্যই প্রতিবছর ‘বিশ্ব বাবা দিবস’ পালিত হয়ে থাকে। পৃথিবীর সব বাবার প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশের ইচ্ছা থেকে যার শুরু। বাবা দিবস হলো বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রকাশের একটি অন্যতম দিন। সারাবিশ্বে বাবাদের বিশেষভাবে সম্মান জানানোর জন্য জুন মাসের তৃতীয় রোববার বাবা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। সেই হিসেবে এ বছর আজ ১৯ জুন পালিত হচ্ছে বাবা দিবস। সারা পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশেও দিনটি উদযাপন করা হয়। আমাদের বিশ্বস্ততার জায়গা হলো মা-বাবা। এ পৃথিবীতে তাদের মতো আপনজন আর কেউ নেই। তারা আমাদের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ রহমত। সন্তানের প্রতি বাবার ভালোবাসা চিরন্তন। বাবা মানে ভরসার জায়গা, পরম নির্ভরতার প্রতীক, এক সাগর ভালোবাসা। বাবা মানে উত্তপ্ত সূর্যের নিচে সন্তানের শীতল ছায়া, নির্ভরতার আকাশ, নিরাপত্তার চাদর। বাবা শাশ্বত চির আপন। বাবা সন্তানের মাথার ওপর বটবৃক্ষের ছায়ার মতো, যার স্নেহ অবারিত ধারায় শুধু ঝরতেই থাকে। বাবা যখন শিশুর কচি হাতটি আঁকড়ে ধরে হাঁটতে থাকে, আদর করে কোলে তুলে দুগালে দুটো চুমু দেয়, তখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয় যে, তাদের এ অটুট সম্পর্ক কতোটা গভীর। বাবা সব সন্তানের কাছেই পরম পূজনীয়, সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল। বাবার মাধ্যমেই সন্তানের জীবনের শুরু। বাবার ছায়ায় বড় হওয়া সন্তান জানে কতটা নির্ভরতায় বেড়ে উঠেছে সে। আবার জীবন কত কঠিন তাও জানে বাবাহীন বড় হওয়া সন্তানরা। যার বাবা নেই একমাত্র সেই জানে বাবা না থাকার বেদনা। বাবা শব্দটি পৃথিবীর সর্বত্র নিখাদ ভালোবাসার সঙ্গেই উচ্চারিত হয়। কারণ, সন্তানের ভালোর জন্য জীবনের প্রায় সবই নির্দ্বিধায় ত্যাগ করতে হয় বাবাকে। বাবার রূপে ফুটে ওঠে কখনো শাসন, কখনো ভালোবাসা। যুক্তরাষ্ট্রে বাবা দিবসটি প্রথম পালন করা হয়। যদিও শুরু নিয়ে বেশ কয়েকটি গল্প প্রচলিত আছে। ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই আমেরিকার পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় দিনটি প্রথম পালিত হয়। ডড নামের ওয়াশিংটনের এক ভদ্রমহিলার মাথায় পিতৃ দিবসের ধারণাটা আসে। ডড এই ধারণাটা পান গির্জার এক পুরোহিতের বক্তব্য থেকে। সেই পুরোহিত আবার মা’কে নিয়ে অনেক ভালো কথা বলছিলেন। ডডের মনে হয়, তাহলে বাবাদের নিয়েও তো কিছু করা দরকার। ডড তার বাবাকে খুব ভালোবাসতেন। তিনি সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগেই পরের বছর ১৯ জুন, ১৯১০ সাল থেকে বাবা দিবস পালন করা শুরু করেন। সন্তানের পক্ষ থেকে বিশ্ব বাবা দিবসে সকল বাবার প্রতি রইলো সম্মান, শ্রদ্ধা ভালোবাসা ও শুভকামনা। ছোট-বড়, অখ্যাত-বিখ্যাত সবার কাছেই বাবা অসাধারণ। নির্ভরতা ভরসার গভীর সম্পর্কের নাম বাবা। বাবার স্নেহ-ভালোবাসা সবারই প্রথম চাওয়া আর পাওয়া। সন্তানের প্রতি বাবার যেমন ভালোবাসা, তেমনি বাবার প্রতিও সন্তানের হৃদয়ে পুঞ্জীভূত থাকুক গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রতিদিন প্রতিক্ষণ।

Comments (0)
Add Comment