রেলের দুর্নীতি অব্যবস্থাপনা বন্ধ হবে কবে

সম্পাদকীয়

রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশনে টিকিট কালোবাজারির অভিযোগে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রেললাইন অবরোধ করেছিলো। ফলে বুধবার সকাল ৮টা ৫৫ মিনিট থেকে বেলা ১২টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ ছাড়া দেশের সব রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিলো। ওই শিক্ষার্থীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিলেন। তাদের অভিযোগ-মঙ্গলবার রাত ৩টা থেকে টিকিটের জন্য বিমানবন্দর স্টেশনে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তারা। সকাল ৮টায় একজনকে চারটি টিকিট দিয়েই বলা হয় টিকিট শেষ। আগে থেকেই কালোবাজারিদের হাতে টিকিট চলে যাওয়াই এর কারণ বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা রেল কর্তৃপক্ষের টিকিট দেয়ার আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন। এ ঘটনা ঘটলো এমন এক সময়ে, যখন রেলে অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলা দূর করার দাবিতে রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে টানা ১১দিন অবস্থান করে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন হাওলাদার রনি।

অবশেষে রেলের অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে রনির অভিযোগের সত্যতা মেলে বুধবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রেলের টিকিট বিক্রির দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানি সহজ ডটকমকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করায়। টিকিট বিক্রিতে প্রতিষ্ঠানটির অবহেলা প্রমাণিত হয়েছে। চুয়াডাঙ্গাতেও একই দাবিতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আন্দোলনে বসেছেন। এসব ঘটনায় রেলের অব্যবস্থাপনারই প্রমাণ মেলে।

দেশে রেলের টিকিট কালোবাজারি চলে আসছে বহু বছর ধরেই। এ পরিস্থিতি এড়াতে এবং টিকিটপ্রাপ্তি সহজ করতে অনলাইনে টিকিট বিক্রির কার্যক্রম চালু করে সরকার। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এরপরও কালোবাজারি চক্রের তৎপরতা বন্ধ হয়নি। এ বছর এপ্রিলে ঈদুল ফিতরের সময় দেখা গেছে, অনলাইনে টিকিট বিক্রির দায়িত্বপ্রাপ্ত সহজ ডটকমের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার নিজেই টিকিট সংকটের মূলহোতা! এ কারণে সে সময় ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছিলো।

বস্তুত ভুক্তভোগীরা প্রায়ই অভিযোগ করেন, সকালে অনলাইনে টিকিট ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সব টিকিট শেষ হয়ে যায়। এর একটি বড় কারণ যে কালোবাজারিদের হাতে টিকিট চলে যাওয়া, সেটা এখন স্পষ্ট। দেখা গেছে, টিকিট কালোবাজারি চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশের কারণেই সাধারণ মানুষের টিকিট পেতে সমস্যা হয়। এই কালোবাজারি ও অসৎ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে তাদের প্রত্যেককে কঠোর শাস্তি দেয়া উচিত বলে মনে করি আমরা।

এ রকম মুষ্টিমেয় কিছু অসৎ কর্মকর্তার কারণে গোটা দেশবাসীকে রেলের টিকিট সংগ্রহে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তাই এই কালোবাজারি চক্রের মূলোৎপাটনের বিকল্প নেই।

যে কোনো পরিবহণ মাধ্যমের নির্বিঘেœ টিকিটপ্রাপ্তি জনগণের নাগরিক অধিকার। যারা এক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে, তাদের নির্মূল করা সরকারের দায়িত্ব। যে প্রতিষ্ঠানকে অনলাইনে টিকিট বিক্রির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, সে প্রতিষ্ঠানকেও সততা ও দক্ষতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ দিতে হবে। নয়তো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানও এ ধরনের দুর্নীতির দায় এড়াতে পারবে না। রেলে বিদ্যমান অব্যবস্থাপনা দূর করা না হলে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও প্রতিবাদ যে ক্রমেই বাড়বে, তা বলাই বাহুল্য।

Comments (0)
Add Comment