মজুতদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সরকারের দায়িত্ব

সম্পাদকীয়

নিত্যপণ্যের বাজারে ভোজ্যতেল, চিনি, মাছ-মাংস, আটা-ময়দা, সবজিসহ সব ধরনের খাদ্যের দাম ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। কোনো কোনো পণ্যের (যেমন চিনি) দাম বাড়িয়ে সরকারিভাবে যে দর নির্ধারণ করা হচ্ছে, বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে এর চেয়ে অনেক বেশি দামে। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, বাজারে কর্তৃপক্ষের কোনো নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারি নেই। সাধারণত পণ্যের সংকট থাকলে দাম বাড়ে। কিন্তু দেশে এখন খাদ্যপণ্যের কোনো সংকট না থাকলেও দাম বাড়ছে, এমনকি আমদানিকৃত যে পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে, দেশের বাজারে সে পণ্যের দামও ঊর্ধ্বমুখী। ফলে স্বল্পআয়ের মানুষ বাজারে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছে। তারা প্রয়োজনীয় পণ্য না কিনেই ফিরে যাচ্ছে। অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে খোদ শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেছেন, মানুষ বাজার করতে গিয়ে এখন কাঁদছে। পরিস্থিতি অনেকটাই তাই। এ পরিস্থিতির জন্য শুধু বৈশ্বিক সংকটকে দায়ী করা যায় না।

বরং বাস্তবতা হলো, সংকটকে পুঁজি করে একশ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অতিমুনাফায় মেতে উঠেছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রকৃত ব্যবসায়ীরা। শিল্প প্রতিমন্ত্রী যেমনটা বলেছেন-অর্থনীতি ও বাজার এ দুই জায়গায় তৈরি হয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট, যার কারণে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঝরে পড়ছে এবং পণ্যের মূল্য বেড়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, ‘এই সিন্ডিকেট ধরতে ও ভাঙতে না পারলে আমাদের মতো মন্ত্রীদের দায়িত্বে থাকা উচিত নয়।’ তার এ উপলব্ধিকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আশাকরি, বাজারে সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে সরকার এবার তৎপর হবে। এবার বোরোর ফলন ভালো হওয়ায় বাজারে চালের দাম সামান্য কমলেও এ পরিস্থিতি কতোদিন বজায় থাকবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ আমরা এখন ভরা মরসুমেও চালের দাম বাড়তে দেখি। বস্তুত, যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি, সেসব খাদ্যপণ্য চলে যায় সিন্ডিকেটের কব্জায়। এ প্রবণতা উদ্বেগজনক। খাদ্যপণ্যের ক্রমাগত দামবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছে। কাজেই জনস্বার্থে এদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া সরকারের জরুরি দায়িত্ব হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে প্রথমেই যা করা দরকার তা হলো, খাদ্যপণ্য কারা অবৈধভাবে মজুত করছে, তা অনুসন্ধান করে বের করা। আমাদের কথা হলো-ব্যবসা করা ভালো; তবে অতিমুনাফার জন্য অনৈতিক ও বেআইনিভাবে বেশি পণ্য মজুত করে মানুষের পকেট কাটা একটি অপরাধ। যারা এ অপরাধ করছে, তাদের আইনের আওতায় আনা জরুরি।

বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার একটি আইন করেছে। এতে বলা হয়েছে-চাল, পেঁয়াজ, লবণ, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের অবৈধ মজুত করলে সংশ্লিষ্ট মজুতদারের বিচার হবে বিশেষ খাদ্য আদালতে। কাজেই যারা অবৈধভাবে পণ্য মজুত করবে, আইনের দৃষ্টিতে তারা অপরাধী। তাদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেয়া সরকারের দায়িত্ব। সিন্ডিকেট ও অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে এখনই অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন এবং বিষয়টি জনস্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত বিধায় এ ব্যাপারে কালক্ষেপণের সুযোগ নেই। যেসব অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফার জন্য সময় ও সুযোগ বুঝে সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়, বাজারে প্রকৃত তদারকির মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে নিতে হবে ব্যবস্থা।

Comments (0)
Add Comment