উন্নয়নশীল দেশের সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা নিয়ে রয়েছে নানা মুণির নানা মতো। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা উন্নয়নশীল বিশ্বের সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করতে চেষ্টা করে থাকে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে। ইউনাইটেড ন্যাশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বা আংকটাড মনে করে, দুর্নীতি, জ্বালানি সংকট, আমদানি-রপ্তানি জটিলতাগুলো বড় সমস্যা। আবার ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন বা ফাও মনে করে, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারা প্রধান একটি অন্তরায়। দারিদ্র্যের কারণে এবং খাদ্যের অপ্রতুলতার কারণে উন্নয়নশীল বিশ্ব তার পপুলেশন নিয়ে এগোতে পারে না।
অন্যদিকে ইউনাইটেড ন্যাশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম বা ইউএনডিপি মনে করে, দারিদ্র্য বিমোচন, লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন, স্থিতিশীল সমাজব্যবস্থা, বিচার সুনিশ্চিত করা এবং সাশ্রয়ী জ্বালানি উৎস নিশ্চিত করতে পারা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আবার ইউনাইটেড ন্যাশনস এডুকেশনাল, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন বা ইউনেসকো মনে করে, সঠিক শিক্ষা প্রদান করতে না পারা, উন্নত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকার কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো জাতীয়ভাবে পিছিয়ে থাকে। বিভিন্ন সংস্থা থেকে বিভিন্নভাবে সমস্যা চিহ্নিত করা হলেও, তার সবগুলোই সত্যি। কিন্তু আরও একটি বড় সমস্যার কথা অনুল্লিখিত রয়ে যায়, যা আমরা নিবিড়ভাবে দেখতে পাই। আর তা হলো, উন্নয়নশীল দেশগুলো তাদের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে না। এ সমস্যা অন্যান্য অনেকগুলো সমস্যার জন্ম দিয়ে থাকে। সরকারে যারাই থাকুক না কেন, একটা সংস্কৃতি দাঁড়ায়ে রয়েছে ভুল থেকে শিক্ষা না নেয়ার। এ যে ভুলভ্রান্তি হয়, তা কারো নিকট অজানা নেই। কিন্তু সে ভুল শুধরানোর কোনো তাগিদ লক্ষ্য করা যায় না। ফলে যা হওয়ার তাই হয়। জনগণের অভিযোগের পাহাড় জমতে থাকে। তার কোনো প্রতিকার হয় না। জনগণও সে কারণেই জনপ্রতিনিধিদের, সরকারি কর্মকর্তাদের সকলকেই নেতিবাচক অবস্থানে দাঁড় করিয়ে থাকে।
দুর্বলতা রয়েছে, সত্য। একটি দুর্ঘটনায় পর দেখা যায় তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। পত্রপত্রিকায় তা ফলাও করে প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু সে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অতল গহ্বরে ঢুকে যায়। কি অ্যাকশন হয়েছে, অথবা আদৌ হয়েছে কি-না তা জানার আর উপায় থাকে না। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে যে গাফলতি, যে অনিয়মগুলো দেখা যায় তার চেহারা পূর্বেও যে রকম ছিলো, এখনও সে রকমই রহেছে। তার অন্যতম কারণ হলো কোনো অ্যাকশন না হওয়া। জগতের কেই জবাবদিহি হতে চায় না, জবাবদিহি করতে হয় এ সত্য উপলব্ধি করতে না পারিলে কোনো কিছুই ঠিকমতো কাজ করবে না। সরকারের প্রতিটি অফিসে লোকবল রয়েছে। প্রধান কার্যালয় থেকেত শুরু করে বিভাগীয়, জেলা, থানা পর্যায়ে কয়েক স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছেন। তাদের ওপর অর্পিত সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব রয়েছে। কেউ কি দাবি করতে পারবেন যে সর্বক্ষেত্রে তা পালন হচ্ছে? বাস্তব হলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হচ্ছে না! এ ক্ষেত্রে তাও সত্য যে জনগণের সচেতনতার অভাব রয়েছে। তাদের বেশির ভাগই জানে না কোনটা তার অধিকার আর কোনটা তার দায়িত্ব। এ সচেতনতা যতো দিন না আসবে ততোদিন পুরো জাতিকেই ধুঁকতে হবে। সুতরাং এক দিকে যেমন সরকারের পক্ষ থেকে অ্যাকশন বা প্রতিকারের ব্যাপারে কঠিন হতে হবে, অপরদিকে জনগণকেও সচেতন হতে হবে। তাহলেই উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলোর ভাগ্যের পরিবর্তন হতে পারে।