বিরোধীদের কি কর্মসূচির অধিকার নেই

সম্পাদকীয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাস, সহিংসতা ও বিরোধী মত দমনের যে ঘটনা ঘটে গেলো, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। গত মঙ্গলবার বিরোধী দল বিএনপির ‘ভ্রাতৃপ্রতিম’ সংগঠন ছাত্রদলের মিছিলে বেপরোয়া হামলা চালিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘ভ্রাতৃপ্রতিম’ ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের কর্মসূচি ছিলো ছাত্রদলের। ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে সমবেত হয়ে মিছিল করে সেই কর্মসূচিতে আসার পথে শহীদ মিনারের সামনে তারা হামলার শিকার হন।

প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের ভাষ্য অনুযায়ী, কয়েকটি হলের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আগে থেকেই শহীদ মিনারের আশপাশে অবস্থান নিয়েছিলেন। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা টিএসসির দিকে এগোতে গেলে হকিস্টিক, পাইপ ও লাঠিসোঁটা দিয়ে হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে আহত করা হয়। এ সময় ছাত্রলীগের কারও কারও হাতে ধারালো অস্ত্রও ছিলো। এ হামলার জেরে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা কাঠ, লাঠি, বাঁশের টুকরা নিয়ে মিছিল বের করেন এবং ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। দুই পক্ষই পরস্পরের দিকে ইট ছুড়তে থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ছাত্রদলের এক নারী নেতাকে ছাত্রলীগের কয়েকজন মিলে পিটিয়ে আহত করছেন। রাস্তায় পড়ে যাওয়ার পরও তার ওপর হামলা অব্যাহত থাকে।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মো. রাকিবুল ইসলাম দাবি করেছেন, মিছিলে তারা সেøাগান পর্যন্ত দেননি। বিনা উসকানিতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন দাবি করেছেন, শিক্ষাঙ্গনে পরিবেশ অক্ষুণœ রাখা ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপদ শিক্ষাজীবন নিশ্চিতের স্বার্থে সব মতের প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ছাত্রদলের ‘সন্ত্রাসবাদী’ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

ছাত্রলীগ নেতার এই ভাষ্য সব অর্থেই বিপজ্জনক। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। সেই দায়িত্ব ছাত্রলীগকে কেউ দেয়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভাষ্য থেকে স্পষ্ট যে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলাটি ছিলো পরিকল্পিত। পত্রপত্রিকায় একজন অস্ত্রধারীর ছবি ও পরিচয় প্রকাশ করেছে, যিনি শহীদুল্লাহ্ হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী। অন্য যারা হামলায় অংশ নিয়েছেন, ভিডিও ও ছবি দেখে তাদের শনাক্ত করা কঠিন নয়। ছাত্রলীগ নিজেদের অপকর্মের দায় ‘প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের’ ওপর যেভাবে চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করেছে, সেটা অনৈতিক। বিরোধী দলের মিছিল সমাবেশে বাধা দেয়া হবে না এমন আশ্বাস মাত্র তিন সপ্তাহ আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু ছাত্রলীগের আচরণ ও কর্মকা-ে আমরা বিপরীত নীতির প্রতিফলন দেখতে পেলাম। গত এক সপ্তাহে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেটেও ছাত্রদলের ওপর হামলা করেছে ছাত্রলীগ।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যেকোনো সংগঠনের শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনের অধিকার রয়েছে। ছাত্রদলের নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচিতে যেভাবে হামলা চালানো হয়েছে, সেটা গণতান্ত্রিক রীতিবিরোধী। একটা সভ্য ও গণতান্ত্রিক সমাজে ভিন্নমতের ওপর এভাবে লাঠিসোঁটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার মতো ঘটনা অকল্পনীয়।

বিরোধী পক্ষকে দমনের এমন ঘটনায় আমরা নিন্দা জানাই। আমরা মনে করি, এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তবে মূল প্রশ্নটি হলো, বিরোধীদের কি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের অধিকার নেই?

গতকাল বৃহস্পতিবারও রাজধানীর হাইকোর্ট মোড়, দোয়েল চত্বরসহ আশপাশের এলাকায় ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গুলির শব্দ শোনা যায়। এছাড়া দেশের উচ্চ আদালত প্রাঙ্গণেও সংঘর্ষ ছড়িয়েছে। সাংবাদিকসহ কয়েকজন আহতের সংবাদ প্রকাশ হয়েছে গণমাধ্যমে। করোনা পরবর্তী উচ্চ শিক্ষাঙ্গণে এধরণের ঘটনা নেতিবাচক।

দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন সবার উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় শিক্ষাঙ্গণের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা খুবই জরুরি। আমাদের আশাবাদ, সংশ্লিষ্ট সবাই এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেবে।

Comments (0)
Add Comment