বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কোনো বিকল্প নেই

সম্পাদকীয়

করোনা মহামারির কারণে গোটা বিশ্বের অর্থনীতিই বিপর্যস্ত। সেই ধাক্কা সামাল দিতে গিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে একের পর এক পণ্যের দাম বাড়ছে। ফলে আমদানিনির্ভর পণ্যগুলোর মূল্যবৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠে গেছে মানুষের। টিসিবির ট্রাকের পেছনে স্বল্প আয়ের মানুষের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশে উৎপাদিত পণ্য কিছুটা স্বস্তি দিতে পারতো; কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে সেটি কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। কৃষি খাতে সরকার বিপুল ভর্তুকি দিলেও তার সুফল পাচ্ছে না জনগণ। একদিকে দেখা যায় কৃষকের উৎপাদন খরচ ওঠে না, উৎপাদিত পণ্য রাস্তায় ফেলে দিতে হয়, অন্যদিকে কয়েক গুণ দামে বাজার থেকে ভোক্তাকে কিনে খেতে হচ্ছে। এ সমস্যা দীর্ঘদিনের হলেও মহামারি পরবর্তী এ সময়ে বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। সাধারণ মানুষের কাছে করোনা মহামারির তুলনায় বড় সংকট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি। এ নিয়ে সরকারের কোনো ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ আমরা দেখছি না। দেশে এখন চাল ও গমের মজুত সর্বোচ্চ, উৎপাদনও ভালো; এরপরও বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অল্প কিছু জায়গায় কম দামে টিসিবির পণ্য বিক্রি করে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কোনোভাবে সম্ভব নয়, সেটিই আমরা দেখতে পাচ্ছি। এ মুহূর্তে বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কোনো বিকল্প নেই। এর মধ্যে অযৌক্তিকভাবে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ার চাপ সহ্য করতে হচ্ছে ভোক্তাকেই। অন্যদিকে মধ্যস্বত্বভোগী ও ফড়িয়া ব্যবসায়ীর দৌরাত্ম্য এবং পুলিশ ও পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আছে।
সবজির বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ও পুলিশের চাঁদাবাজির বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে বহু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এবার তা সরকারি সংস্থার প্রতিবেদনেই উঠে এল। যেখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি পণ্য পরিবহন ও ক্রয়-বিক্রয়ের সময় বিভিন্ন জায়গায় মধ্যস্বত্বভোগী ও পুলিশকে চাঁদা দিতে হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরাই মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে ফয়দা লোটেন। পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলার জন্য পুলিশের চাঁদাবাজিকে অন্যতম কারণ হিসেবে দেখে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। রাস্তায় রাস্তায় পণ্যবাহী গাড়ি থেকে পুলিশের চাঁদাবাজি ওপেন সিক্রেট। অভিযোগ আছে সেই চাঁদার ভাগ পুলিশের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা পান। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সরাসরি বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। কিন্তু পথে পথে চাঁদাবাজি ও নানা বাধার কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে সেটা সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না, তা তো মেনে নেয়া যায় না। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে কৃষিপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে সাতটি সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে পাইকারি বাজারে তদারকি বাড়ানো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বাজার কমিটির কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং পরিবহন ব্যয় কমানোর বিষয়গুলো রয়েছে। এখন এসব সুপারিশ কি বরাবরের মতো কাগজে কলমে পড়ে থাকবে, নাকি কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

Comments (0)
Add Comment