খুলনায় বিএনপির শনিবারের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই বাস মালিকরা শুক্রবার থেকে সেখানে বাস না চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন, তাতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির বিষয়টি বলার অপেক্ষা রাখে না। ময়মনসিংহে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেও একইভাবে জনসাধারণকে জিম্মি করা হয়েছিলো। তখন অবশ্য পরিবহন মালিকরা অগ্রিম ঘোষণা দেননি। এবার তারা আগেই ঘোষণা দিয়ে পরিবহন বন্ধ রেখেছেন। বিএনপির কর্মসূচিতে বাসে ভাঙচুর ও অগ্নিকা- ঘটনোর আশঙ্কা রয়েছে। বোঝাই যায়, এটা খোঁড়া অজুহাত মাত্র। অথচ বিরোধী দলগুলো আহূত হরতাল কিংবা ধর্মঘটে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ভিন্ন চরিত্র প্রকাশ পেয়ে থাকে। তখন তারা এমনকি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মালিক-শ্রমিকদের জীবিকা ও জনস্বার্থে গাড়ি চলাচল অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে থাকেন। তার পশ্চাতে যে ক্ষমতাসীনদের চাপ রয়েছে, তা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার আবশ্যকতা নেই। এরআগে দেখা গেছে যখনই বিরোধী দলের কোনো কর্মসূচি গৃহীত হয়, সরকার তা নিরুৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন অপকৌশলের আশ্রয় নিয়ে থাকে। বলা বাহুল্য, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিলো তখনও একইভাবে বিরোধী দলের কর্মসূচি প্রতিহত করতে জনবিরোধী পদক্ষেপ নিয়েছিলো। তাই বলে আওয়ামী লীগ একই পথে হাঁটবে কেন?
আমরা মনে করি, রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির সভা-সমাবেশ করার অধিকার রয়েছে। তাতে সরকার কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে পারে না। পূর্বে বিএনপি মাঠে দাঁড়াতেই পারতো না। এখন তারা যেভাবে সভা-সমাবেশ করিছে; নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। খুলনায় সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। তারপরও গণপরিবহন বন্ধ করার এ অপকৌশল কেন? স্বাভাবিকভাবেই বিএনপি জনসমর্থন দেখাতে বৃহৎ জমায়েত করতে চাইবে। বাস বন্ধ করেও যে জনসমাগম বহুলাংশে আটকানো যায় না- বিএনপির ময়মনসিংহ সমাবেশই তার প্রমাণ। তারপরও জনগণকে দুর্ভোগে ফেলে গণপরিবহন বন্ধের কৌশল ক্ষমতাসীনদের জন্য কোনো অর্থেই মঙ্গলজনক হতে পারে না।
মনে রাখতে হবে-গণপরিবহন এভাবে বন্ধের ঘোষণা বেআইনিও বটে। রুট পারমিটের শর্ত অনুযায়ী, যাত্রী পরিবহনের জন্য নিবন্ধিত গাড়ি মালিকরা মর্জিমাফিক তা বন্ধ করতে পারেন না। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ তথা বিআরটিএর একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাস বন্ধ রেখে যাত্রীদের দুর্ভোগ সৃষ্টি করার এখতিয়ার মালিক-শ্রমিকদের নেই। তারপরও কেন পরিবহন মালিকরা উৎসাহিত হয়ে জনসাধারণকে জিম্মি করার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেবেন! আমরা মনে করি, এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের তো বটেই, বাস মালিকদেরও বোধোদয় হওয়া দরকার।
শুক্র ও শনিবার দুইদিন খুলনাগামী কিংবা খুলনা থেকে অন্যান্য জেলায় বাস চলাচল বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি চাকরিপ্রার্থীরাও বিপদে পড়েছেন। গতকাল শুক্রবার কয়েকটি সরকারি নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওইদিন সমাজসেবা অধিদপ্তরের ইউনিয়ন সমাজকর্মী নিয়োগ পরীক্ষায় খুলনার অন্তত এক ডজন কেন্দ্রে সাড়ে ১৩ হাজার পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করা কথা ছিলো। বাস চলাচল না করায় অনেক প্রার্থীই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। এই সময়ে অসুস্থদের দ্রুত হাসপাতালে নিতে বেগ পোয়াতে হচ্ছে।
শুধু বাস মালিকরাই না; ইতঃপূর্বে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও মাঠে নেমেছিলো; মোড়ে মোড়ে তল্লাশি চালানো হয়েছিলো। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও ছিলো মাঠে তৎপর।
মানুষকে জিম্মি কিংবা জনভোগান্তির এরূপ কৌশল কদাচ উত্তম ফল এনে দিতে পারে না। তা ক্ষমতাসীনদের প্রতি জনসাধারণের অসন্তোষ বৃদ্ধিরই কারণ হতে পারে। কাজেই বিএনপিকে খুলনায় শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার সুযোগ দেয়া যেতো। জনসাধারণের দুর্ভোগ দূর করতে অবিলম্বে বাস মালিকদেরও এহেন সিদ্ধান্ত থেকে পশ্চাদপসরণ করে গণপরিবহন চালু করা জরুরি। একই সঙ্গে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রেখে বিএনপি নেতাকর্মীরও দায়িত্বশীল আচরণ কাম্য।