টিকার পাশাপাশি সচেতনতাও জরুরি

সম্পাদকীয়

চলতি বছরের শুরুতে যখন করোনা সংক্রমণের হার একেবারে কমে যায় এবং মৃত্যুর সংখ্যা শূন্যে নেমে আসে, তখনো বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, প্রাণঘাতী এ ব্যাধি একেবারে চলে যায়নি। যেকোনো সময়ে সংক্রমণ বাড়তে পারে। তাদের ভবিষ্যদ্বাণী যে সঠিক ছিলো, করোনা সংক্রমণের বর্তমান হারই তার প্রমাণ। চার মাসের বেশি সময় পর দৈনিক শনাক্তের হার ১৪ শতাংশ ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় এক হাজার ৩১৯ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। মারাও যাচ্ছেন দু একজন করে। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশে করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৬০ হাজার ৫২৮ জনে। করোনা সংক্রমণের হার দিয়ে সব সময় সংখ্যা বিচার করা যাবে না। উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক, আগে সবাই পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতেন। এখন উপসর্গ না হলে কেউ পরীক্ষা করাতে যান না। আবার অনেক সময় পরীক্ষায় ধরাও পড়ে না।

উল্লেখ্য, করোনার উপযুক্ত প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। টিকা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই ভরসা। টিকায় আমরা সফলতা দাবি করলেও এখনো সব নারী-পুরুষকে এ কর্মসূচির আওতায় আনা যায়নি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মোশতাক হোসেনের মতে, বাংলাদেশে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন কমবেশি ৭০ শতাংশ মানুষ। যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাদের সবাই দ্বিতীয় ডোজ নেননি। তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ নিয়েছেন আরও কমসংখ্যক মানুষ। বুস্টার ডোজও যেখানে করোনা সংক্রমণ থেকে শতভাগ সুরক্ষা দিতে পারে না, সেখানে প্রথম বা দ্বিতীয় ডোজ নেয়া ব্যক্তিদের কোনোভাবেই নিরাপদ ভাবা যায় না।

এখনো যারা টিকা নেননি, তাদের টিকা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে এ-ও মনে রাখতে হবে এক ডোজ, দুই ডোজ বা বুস্টার ডোজ নিলেই সেই ব্যক্তি সারা জীবনের জন্য নিরাপদ থাকবেন, এমন কথা নেই। সময়ের ব্যবধানে টিকার কার্যক্ষমতাও কমে যায়। অনেক দেশে বুস্টার ডোজ দেয়ার ছয় মাস পার হওয়ার পর চতুর্থ ডোজ টিকা দেয়া শুরু করেছে। করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে যারা অত্যন্ত ঝুঁকিতে আছেন, বিশেষ করে প্রবীণ ও বৃদ্ধ মানুষ, তাদের সবাইকে টিকার আওতায় আনার জন্য নতুন করে উদ্যোগ নিতে হবে। টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে দেখা যাবে ঢাকার তুলনায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে টিকা গ্রহণের হার অনেক কম। এই দিকটিতে বাড়তি নজর দিতে হবে।

করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষার আরেকটি উপায় হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, নিয়মিত মাস্ক পরা, দূরত্ব বজায় রাখা। দৈনন্দিন জীবনযাপনের জন্য অনেক সময় ভিড় বা জনসমাবেশস্থল এড়ানো যায় না। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সংক্রমণ উচ্চ মাত্রায় থাকাকালে অনেকেই মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেন, কিন্তু বর্তমানে সে ক্ষেত্রে শিথিলতা চলে এসেছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মোশতাক হোসেন মনে করেন, এ শিথিলতা দূর এবং সবাইকে নতুন করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় মনোযোগ দিতে হবে। নিজের ও অপরের সুরক্ষার জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২১ জুন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাস্ক পরা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে। তবে কেবল সরকারি অফিসে এ আদেশ প্রতিপালিত হলে হবে না, বেসরকারি অফিস, মার্কেট, জনসমাবেশস্থল, মেলা, পর্যটনকেন্দ্রেও সবাই যাতে মাস্ক ব্যবহার করেন, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। কাজটি করতে হবে ব্যক্তিগত, প্রাতিষ্ঠানিক ও সম্মিলিতভাবে।

সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে এমন ব্যক্তিও আছেন, যারা দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হয়েছেন। অতএব করোনার বিষয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে কোনো অবহেলা করা যাবে না। সচেতনতার পাশাপাশি টিকা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।

Comments (0)
Add Comment