জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমগ্র বিশ্বে বিপুলসংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে; সমুদ্রের নিকটবর্তী দেশে এ সমস্যা অতিরিক্ত দুর্ভোগ সৃষ্টি করবে-এসব আশঙ্কার কথা আমরা অনেকদিন ধরেই শুনে আসছি। সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের এক কোটি ৩৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে বিশ্বে নানামুখী সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবাই দায়িত্বশীলতার পরিচয় না দিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের শস্য উৎপাদনে ইতোমধ্যেই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আমাদের দেশের বিপুলসংখ্যক কৃষক অশিক্ষিত বা স্বল্পশিক্ষিত হলেও বংশপরম্পরায় তারা যে শিক্ষা পেয়েছেন, তা কাজে লাগিয়ে একসময় দেশে বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হতো। কৃষকদের অভিজ্ঞতা এখন আর কাজে লাগছে না। কয়েক বছর ধরে বর্ষা মরসুমে বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে; অসময়ে বৃষ্টিপাত হচ্ছে; অল্প সময়ে বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এ পরিস্থিতির সঙ্গে তারা পরিচিত নন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী দিনে কীটপতঙ্গের উৎপাত আরও বাড়বে। কাজেই এসব পরিস্থিতি মোকাবেলায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বাস্তচ্যুতির কারণে মানুষকে কী ধরনের দুর্ভোগ পোহাতে হয়, তা ভুক্তভোগীমাত্রই জানেন। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিজনিত বাস্তচ্যুতির কারণে আগামী দিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে মানুষের চাপ বাড়বে। উপকূলীয় এলাকার মানুষকে সামুদ্রিক ঝড়ের তা-বসহ নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। আগামী দিনে এ সংকট আরও বাড়বে। লবণাক্ততার কারণে উপকূলীয় এলাকায় খাদ্যশস্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় শস্যের নতুন জাত আবিষ্কার করতে হবে। বস্তুত বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাব বহুমুখী। আমাদের সব ধরনের পরিকল্পনার ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আরও বাড়বে। এ দেশের মানুষ দুর্যোগের সঙ্গে পরিচিত। তবে সিডরের মতো ভয়াবহ সামুদ্রিক ঝড় মোকাবেলার কাজটি সহজ নয়। সামুদ্রিক ঝড় বা অন্য যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এবং দুর্যোগের পর গরিব মানুষকে সহায়তা করার জন্য সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। উন্নত দেশের পক্ষে যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করা যতোটা সহজ; উন্নয়নশীল দেশের জন্য ততোটা নয়। আধুনিক প্রযুক্তির দিক দিয়ে আমরা যদি পিছিয়ে থাকি, তাহলে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হবে। কাজেই বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাব মোকাবেলায় আধুনিক প্রযুক্তিতেও আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।