গ্যাসের অযৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ কাম্য নয়

সম্পাদকীয়

এবার বাড়ানো হচ্ছে গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম। চলতি সপ্তাহেই বাড়ানো হয়েছে জনগুরুত্বপূর্ণ আরেকটি জ্বালানি পণ্য বিদ্যুতের দামও। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো-কমানোর ক্ষেত্রেও এ সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রণকারী সরকারি সংস্থা বিইআরসিকে পাশ কাটিয়ে এবারও গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে সরকারের নির্বাহী আদেশে। যে সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে বিইআরসির কার্যকারিতাকে আরও দুর্বল করে দিতে পারে। একই সঙ্গে লাগামছাড়া নিত্যপণ্যের ঘোড়া নিশ্চিতভাবেই আরও লাগামহীন হয়ে উঠবে। বৈশ্বিকভাবেই চলছে অর্থনৈতিক সংকট। সেই সংকটের ঢেউ এসে লেগেছে দেশের অর্থনীতিতেও। মুদ্রাস্ফীতি এখন গোটা বিশ্বের জন্যই সমস্যা। এমন সময় নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী যদি গ্যাসের দাম আবার বাড়ানো হয়, তাহলে গ্রাহকের ঘাড়ে নতুন করে আরেকটি চাপ এসে পড়বে। শুধু বাসাবাড়ির রান্নার খরচ বাড়বে না, বাড়বে সার কারখানা ও শিল্পের উৎপাদন খরচও। এমনিতেই নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দাম জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। মানুষের জীবনে উঠেছে নাভিশ্বাস। বিতরণ কোম্পানিগুলো বাসাবাড়ির গ্রাহকদের ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ১৭ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, এক চুলা ব্যবহারে প্রতি মাসে খরচ ৯৯০ থেকে ১৬৮ টাকা বেড়ে হবে ১ হাজার ১৫৮ টাকা। আর দুই চুলা ব্যবহারের বর্তমান খরচ ১ হাজার ৮০ থেকে ১৮৩ টাকা বেড়ে ১ হাজার ২৬৩ টাকা হবে। গেল বছরও গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল। ওই সময় সিএনজি ছাড়া সব শ্রেণির গ্রাহকের গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। রান্নার গ্যাসের জন্য দুই চুলার (ডাবল বার্নার) মাসিক বিল ৯৭৫ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৮০ এবং এক চুলার মাসিক বিল ৯২৫ থেকে বাড়িয়ে ৯৯০ টাকা করা হয়। আর প্রিপেইড মিটারে প্রতি ইউনিটের খরচ ১২ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৮ টাকা করা হয়। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ভাষ্যে, গ্যাসের এ দাম বৃদ্ধির পেছনে কোনো কারণ তাদের কাছে স্পষ্ট নয়। দাম বাড়ানোর বিষয়ে সরকার কর্তৃক তাদের নির্বাহী ক্ষমতার ব্যবহার জ্বালানি খাত ভবিষ্যতে পঙ্গু হয়ে যাবে এবং কোনো স্বচ্ছতা থাকবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নানারকম সংকটের মধ্যে বিদ্যুতের পর গ্যাসের দাম বৃদ্ধি হবে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পর গ্যাসের দাম বাড়ালে ভোক্তাদের ওপর চাপ অনেক বেড়ে যাবে।

এমনিতেই মূল্যস্ফীতির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ক্রমেই বাড়ছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে আসছে। এ অবস্থায় গ্যাসের দাম বাড়লে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি এ ধরনের প্রক্রিয়ার কারণে বিইআরসি কার্যকারিতা হারাবে। মুদ্রাস্ফীতির কারণে দেশের মানুষ এমনিতেই বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। জীবিকা নির্বাহের নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় জিনিসের জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পর জ্বালানি পণ্য গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে সব শ্রেণিপেশার মানুষের জীবনকেই দুর্বিষহ করে তুলবে। এমতাবস্থায় আমাদের প্রত্যাশা, সবার যাতে কল্যাণ হয় সরকারের সংশ্লিষ্টরা দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিচার-বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এ ক্ষেত্রে কোনোরকমের অযৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ কাম্য নয়।

Comments (0)
Add Comment