সরকারের নানা উদ্যোগ ও তৎপরতার পরও নিত্যপণ্যের বাজার কোনোভাবেই স্বাভাবিক হচ্ছে না। একেক সময় একেক অজুহাত তুলে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো পণ্যেরে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে ভোজ্যতেলের বাজার অস্থির। ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। পাঁচ লিটার তেল কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। বিক্রেতারা বলছেন, সব বিক্রি হয়ে গেছে। প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয় রাতারাতি কারা তেল কিনে নিয়ে গেল। নাকি দোকানিরা মজুত করেছে অতি লাভের আশায়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়েছে। নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত দামে ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রির দায়ে বিভিন্ন স্থানে জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। আমরা মনে করি এই অভিযান জোরদার করা উচিত। কারণ ক্রেতাদের জিম্মি করে এভাবে দাম বাড়ানো এবং পণ্যসংকট সৃষ্টি করা গর্হিত অপরাধ। বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধি ছাড়াও শিপিং চার্জ বেড়ে যাওয়া এবং দেশে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে ভোজ্যতেলের দেশীয় বাজারও অস্থির হয়ে উঠেছে। মনে রাখতে হবে, ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি ক্রেতাদের মধ্যেও বাড়তি চাপ তৈরি করেছে। এমনিতেই চাল, সবজি ও পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে ভোজ্যতেল যোগ হয়ে বাড়তি অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
উল্লেখ্য, দেশে প্রায় ৯০ শতাংশ ভোজ্যতেলই আমদানিনির্ভর হওয়ায় বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধি এবং দেশে চাহিদার তুলনায় আমদানি কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে সরাসরি খুচরা বাজারে। অবাক ব্যাপার গত দুই বছরের ব্যবধানে দেশে ভোজ্যতেলের দাম অন্তত ২০ দফায় বেড়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ এক বছরে ভোজ্যতেলের বাজার ব্যবসায়ী ও সরকারি উদ্যোগে বেড়েছে ১০ বার। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বুকিংমূল্য বেড়ে গেলে দেশের বাজারেও দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় থাকে না বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, বৈশ্বিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের এ খাতে বিনিয়োগও বেশি করতে হচ্ছে। তাদের যুক্তি কতটা গ্রহণযোগ্য। এক লিটার তেল কী করে দোকানভেদে ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা হয়, তা আমাদের বোধগম্য নয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বর্তমানে দ্রব্যমূল্য নিয়ে একটা কথা আসছে। এটা শুধু বাংলাদেশে না, করোনার কারণে বিশ্বের অর্থনীতি মন্দা। যে কারণে পৃথিবীর সবদেশে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। এখন একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করেছে। সেটা নিয়েও একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সারাবিশ্বে। যার কুফলটা আসছে। এখন আমরাও তার কুফল ভোগ করছি। আমাদের এখানেও কিছু জিনিসের দাম বাড়ছে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে যখন বেড়ে যায়, তখন এটার স্বাভাবিক কিছু প্রভাব পড়ে। তাছাড়া এখানে কিছু লোক আছেই, যারা ব্যবসা করে দুই পয়সা বেশি কামাই করতে চায়। সেখানে মনিটরিং করার ব্যবস্থা আমরা করছি। আমরা প্রত্যাশা করছি মনিটরিং ব্যবস্থা যাতে আরও জোরদার করা হয়। এটা সত্য আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৯১ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার অর্থ এই নয় যে ব্যবসায়ীরা জনসাধারণকে বারবার জিম্মি করবে। এ ব্যাপারে সরকারের কার্যকর কঠোর উদ্যোগই কেবল পারে জনগণকে হয়রানি ও দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে।