শিক্ষা একটি জাতির মেরুদ-। সঙ্গত কারণেই এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দেশ ও মানুষের সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জন ও উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে শিক্ষার অগ্রগতির কোনো বিকল্প নেই। সম্প্রতি ২০২২ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাব ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এবারে নয়টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ড মিলে পাসের হার ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, গত বছর এসএসসিতে পাসের হার ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ ছিল। অর্থাৎ এ বছর পাসের হার কমেছে। আমরা মনে করি, এই বিষয়টিসহ ফলাফল সংক্রান্ত যে চিত্র তা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। চলতি বছর উত্তীর্ণ সব শিক্ষার্থীকে আমরা অভিনন্দন জানাই। উল্লেখ্য, এ বছর নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট ২০ লাখের বেশি পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। মোট তিন হাজার ৭৯০টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে শুধু সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর অধীনে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলো প্রায় ১৬ লাখ।
তথ্য মতে, এবারে ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৯০.০৩ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৮৬.৭ শতাংশ, রাজশাহীতে ৮৫.৮৮ শতাংশ, কুমিল্লায় ৯১.২৮ শতাংশ, বরিশালে ৮৯.৬১ শতাংশ, সিলেটে ৭৮.৮২ শতাংশ চট্টগ্রামে ৮৭.৫৩ শতাংশ, যশোরে ৯৫.০৩ শতাংশ দিনাজপুরে ৮১.১৪ শতাংশ। অন্যদিকে এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ পরীক্ষার্থী। প্রকাশিত ফলাফলে ৯টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডে গড় পাসের হার ৮৮ দশমিক ১০ শতাংশ। আর মাদরাসা বোর্ডে পাসের হার ৮২ দশমিক ২২ শতাংশ, কারিগরি শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৮৪.৭ শতাংশ। প্রসঙ্গত বলা দরকার, গত ১৫ সেপ্টেম্বর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছিলো। করোনা পরিস্থিতি ও বন্যার কারণে দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর অনুষ্ঠিত হয় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। আমরা বলতে চাই, শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে সরকার নানা ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছে এবং শিক্ষার উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপও নিশ্চিত হচ্ছে। নানা সমস্যা ও নেতিবাচকতার মধ্যেও শিক্ষা ক্ষেত্রে অগ্রগতি হচ্ছে। ফলে সার্বিক বিষয়কে আমলে নিয়ে শিক্ষার অগ্রগতি এবং যথাযথ মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ কথা ঠিক যে, শিক্ষার অগ্রগতি হচ্ছে, বিস্তৃত হচ্ছে। কিন্তু বারবার শিক্ষার মান সংক্রান্ত আলোচনাও বারবার সামনে এসেছে। সঙ্গত কারণেই শিক্ষার মান বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরকেই। এর আগে এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছিল যে, শিক্ষার গুণগত মানের দিক থেকে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে। ফলে এই বিষয়টি এড়ানোর সুযোগ নেই। মনে রাখা দরকার, কেবল পরিমাণগত বা সংখ্যা বৃদ্ধিই শিক্ষার মানোন্নয়নের স্মারক নয়। শিক্ষার মানোন্নয়ন দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আজকের দিনে বৈশ্বিক বিবেচনায় উন্নত বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে আমাদের শিক্ষার মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। আর সেই লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টাও অব্যাহত রাখতে হবে। এবারের ফলাফলে জানা গেছে, দেশের মোট ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষার্থীই পাস করেনি। গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় মোট ১৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। অর্থাৎ গত বছরের চেয়ে শূন্য পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেড়েছে ৩২টি। ফলে আমরা মনে করি, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করতে পারেনি সেগুলোকে আমলে নিয়ে সংকট খতিয়ে দেখে গ্রহণযোগ্য ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি বলতে চাই, দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মানসম্মত শিক্ষকও নিশ্চিত করা দরকার। ভুলে গেলে চলবে না, আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। দেশের সেই ভবিষ্যৎ নাগরিকদের গড়ে তোলার দায়িত্ব যাদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে তাদের মান নিশ্চিত হওয়া অপরিহার্য। আর এই লক্ষ্যে সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ নিতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে শিক্ষা বিস্তৃত হওয়ার পাশাপাশি যথাযথ মানও নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।
খুব ভালো