ঈদযাত্রায় সড়কে তদারকি ও নজরদারি বাড়ানো হোক

সম্পাদকীয়

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ও যাত্রীকল্যাণ সমিতি প্রতি মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের পরিসংখ্যান দিয়ে থাকে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলেছে, মার্চ মাসে সড়কে মারা গেছেন ৫৬৪ জন। যাত্রীকল্যাণ সমিতির মতে, ৫৩৮ জন। তাদের দেয়া তথ্যে কিছুটা অমিল থাকলেও মোটামুটি দুর্ঘটনার চিত্রটা উঠে এসেছে ধারণা করি।

দুই সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারির চেয়ে মার্চে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেলচালক ও আরোহী ১৯৪জন (৩৪.৩৯%), বাসযাত্রী ৫৩ জন (৯.৩৯%), ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি আরোহী ৪৯ জন (৮.৬৮%), মাইক্রোবাস-প্রাইভেট কার-অ্যাম্বুলেন্সযাত্রী ২২ জন (৩.৯০%), থ্রি হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা) ১০৪ জন (১৮.৪৩%), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নছিমন-ভটভটি-আলমসাধু-পাখিভ্যান-মাহিন্দ্রা-টমটম) ২৪ জন (৪.২৫%) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান আরোহী ১১জন (১.৯৫%) নিহত হয়েছে। যেসব যানবাহনে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে, সেসব বাহন চলাচলে বেশি সতর্ক থাকা প্রয়োজন এ কথা সত্য। এর অর্থ এই নয় যে অন্য যানবাহনের প্রতি কম গুরুত্ব দিতে হবে। এপ্রিলের তৃতীয়-চতুর্থ সপ্তাহে ঈদুল ফিতরের ছুটি। এ সময় সড়কে যাত্রী ও যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। স্বাভাবিকভাবে সড়কে যানবাহন তদারকি বাড়াতে হবে।

অনেক পরিবহন সংস্থা এ সময় প্রতিযোগিতায় নামে, কে কার চেয়ে আগে যাবে। আবার যাত্রী বেশি থাকায় পরিবহন সংস্থাগুলো চালকদের একটানা বেশি সময় যানবাহন চালাতে বাধ্য করে। মার্চে পদ্মা সেতুর কাছে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেস সড়কে যে বাসটি দুর্ঘটনায় পড়ে, এর চালক একনাগাড়ে অনেক ঘণ্টা গাড়ি চালাচ্ছিলেন। ঈদের সময়ে এই প্রবণতা আরও বাড়তে পারে।

যাত্রীকল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে বলা হয়, চালকদের অদক্ষতা ও বেপরোয়া গাড়ি চালানো, বেপরোয়া গতি ও বিপজ্জনক ওভারটেকিংয়ের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এ ছাড়া ত্রুটিপূর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন সড়কে নামানোর কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, ঈদের সময় সব সড়কে একই সময়ে যানবাহনের চাপ থাকে না। কোনো কোনো সড়কে হঠাৎ করে চাপ বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে সড়কে তদারকি ও নজরদারি বাড়ানোর বিকল্প নেই।

ঈদের সময় যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সড়কে মোটরসাইকেল নামার প্রবণতাও বাড়বে, এটাও কর্তৃপক্ষকে মনে রাখতে হবে। অনেকেই দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছুতে এই হালকা বাহনটি ব্যবহার করবেন। মহাসড়কে হালকা যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও এ সময় এর ব্যবহার বেড়ে যায়। যাত্রীর তুলনায় গণপরিবহনের অপ্রতুলতায় অনেকে ঝুঁকি নিয়ে হালকা যানবাহনে চলাচল করতে বাধ্য হন।

ভারী হোক, হালকা হোক কিংবা ছোট সড়ক হোক আর বড় সড়ক হোক, যানবাহন চলাচলের জন্য যে আইন ও বিধিনিষেধ আছে, সেটা সবাইকে মেনে চলতে হবে। সবাইকে মনে রাখতে হবে, নিজে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছুতে যেন অন্যের যাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ না করে ফেলি।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এটা দ্বিতীয় ঈদ ও প্রথম ঈদুল ফিতর। সে ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীদের ঈদযাত্রা স্বাচ্ছন্দ্য হওয়ার কথা। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে ফেরির ওপরও চাপ কম পড়বে। তবে ঈদযাত্রার স্বস্তি নিশ্চিত করতে হবে প্রতিটি সড়ক ও মহাসড়কে শৃঙ্খলার সঙ্গে যানবাহন চলাচল করতে দিতে হবে। আনন্দের ঈদযাত্রা যেন শোকের যাত্রা না হয়, সে বিষয়ে পরিবহনমালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।

Comments (0)
Add Comment