আরও একধাপ উচ্চতায় দৈনিক মাথাভাঙ্গা

সম্পাদকীয়

সময়ের সিঁড়ি মাড়িয়ে আরও একধাপ উচ্চতায় দৈনিক মাথাভাঙ্গা। এ উচ্চতা অভিজ্ঞতার, এ উচ্চতা হাজারো ঘেরাটোপ পার হয়ে ন্যায়ের পক্ষে থাকার অবিচল অভিলাসের। ৩২ বছর পেছনে ফেলে ৩৩ বছরে পদার্পণের শুভদিনে সকলকে সালাম ও প্রাণঢাল শুভেচ্ছা। হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা।

উৎসবের দিনে উল্লাসের রঙে ঘাটতি থাকলেও ভালোবাসায় কমতি নেই। বলতে দ্বিধা নেই, আজ শুধু আমাদের সমাজ নয়, পুরো পুথিবীরই বড্ড অসুখ। সভ্য বলে দাবিদার মানুষ মারণাস্ত্র নিয়ে ভয়ানক খেলায় মত্ত। অসুস্থ প্রতিযোগিতার প্রত্যক্ষ প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে নেমেছে অপ্রত্যাশিত মন্দা। প্রত্যক্ষ প্রভাবে দেশের সংবাদপত্রগুলোও পড়েছে চরম অনিশ্চয়তার মাঝে। সচেতন পাঠকের কাছে বিষয়টি অপরিষ্কার নয়। এরপরও মাথাভাঙ্গা পরিবারের দৃঢ়চিত্তে ঘোষণা, চেতনায় অমর একুশ, মহান মুক্তিযুদ্ধ। বাঙালিত্ব আমাদের সাহস। সুন্দর সমাজ গঠনে মাথাভাঙ্গার অগ্রযাত্রা ঠেকাবে কোন অশুভশক্তি?

১৯৯১ এর ২৬ মার্চ দৈনিক মাথাভাঙ্গা প্রথম আত্মপ্রকাশ করে। সেটা ছিলো প্রস্তাবিত সংখ্যা। ছাড়পত্র পাওয়ার পর একই বছরের ১০ জুন দৈনিক মাথাভাঙ্গার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। কুসংস্কারের অন্ধকার দূর করার মতো আলো ছড়ানোর প্রত্যয় আর ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সন্ত্রাস দমনের দুঃসাহসী প্রতিজ্ঞা হৃদয়ে ধারণ করে এক ঝাক টগবড়ে তরুণের সেই যাত্রা দিন দিন বলিষ্ঠ হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রকাশিত হলেও দৈনিক মাথাভাঙ্গা আঞ্চলিক পত্রিকায় উন্নীত হওয়ার গৌরব অর্জন করে থামেনি। চাররঙে সজ্জিত হয়েও পাঠক দরবারে হাজির হয়েছে। যদিও সেই ধারাবাহিকতায় অন্তরায় হয়েছে কোভিড-১৯। চরম প্রতিকূলতা পেরিয়ে যখন আবারও স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার তোড়জোড়, তখনই শুরু হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ৩৭ হাজার টাকা টনের কাগজের দাম ছাড়িয়েছে লাখ টাকা। এক বান্ডিল প্লেটের দাম ৬ হাজার ২শ টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা হয়েছে। দেড়শ টাকা পাউন্ডের কালি কিনতে হচ্ছে ৫শ টাকায়। এই যখন অবস্থা তখন তহবিলের অবস্থা কতোটা করুণ, তা নিশ্চয় নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। এরপরও পাঠককূলের সহযোগিতার ধারা অব্যাহত রয়েছে বলেই মাথাভাঙ্গার অগ্রযাত্রা চলছে মাথা উঁচিয়ে।

চড়াই উৎরায় পেরিয়ে বত্রিশ বছর পার করার পথে মাথাভাঙ্গা পরিবারের বেশ কিছু সদস্যকে হারাতে হয়েছে। প্রতিষ্ঠাকালীন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম পিনু, নীলমণিগঞ্জ প্রতিনিধি সদরুল নিপুল, দর্শনার এক সময়ের দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী ব্যুরো প্রধান আব্দুল্লাহ আল সাঈদ, আলমডাঙ্গার হাফিজ উদ্দীন মাস্টার, মুন্সিগঞ্জের তছলিম আহমেদ পেনুসহ যাদেরকে মাথাভাঙ্গা পরিবার হারিয়েছে। পরিবারের সদস্য দৈনিক মাথাভাঙ্গার সকল পাঠক, বিজ্ঞাপন দাতা ও শুভানুধ্যায়ী। এদের মধ্যেও নাম জানা, না জানা অনেকেই ইন্তেকাল করেছেন। সকলের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আজকের বিশেষ দিনে, বিশেষভাবে স্মরণীয় দৈনিক মাথাভাঙ্গা প্রতিষ্ঠাতা প্রকাশক ও বর্তমান সম্পাদক সরদার আল আমিনের মাকে। তিনিই ছিলেন মাথাভাঙ্গা প্রকাশের প্রথম লগ্নিকারী ও প্রেরণা। তিনিও ধরিত্রীর বুক থেকে আড়াল হয়েছেন। ইহকাল থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন প্রতিষ্ঠাকালীন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম পিনু পত্মি নাজমা খাতুন মমতা। এদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনাসহ মাথাভাঙ্গা পত্রিকা প্রতিষ্ঠাকালে যাদের অগ্রণী ভূমিকা ছিলো তাদেরও আজ বিশেষভাবে স্মরণ করতেই হয়। এদের মধ্যে অনেকে এখনও সামিল রয়েছেন পত্রিকার অগ্রযাত্রা তরান্বিত করার যুদ্ধে, কেউ কেউ রয়েছেন দূরে। কাছে দূরের সকলের প্রতি অকৃত্তিম কৃতজ্ঞতা।

করোনার আগে মাথাভাঙ্গার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন হয়েছে ধুমধামের সাথে। করোনার মধ্যে ভাবনাজুড়ে ছিলো সুস্থ থেকে সংকট কাটিয়ে উঠে আবারও ব্যাপক আয়োজনের মধ্যদিয়ে মেতে উঠবো সৃষ্টিসুখের উল্লাসে। ইচ্ছে থাকলেই তো আর সবসময় পরিস্থিতি অনুকূলে থাকে না। নেই। এবারও হলো না বলে হতাশা নয়, পরবর্তীতে বড় ধরনের উৎসবের প্রত্যাশা নিয়েই আজকের শুভদিনে মন ভালো রাখার প্রত্যয়ী আমরা। প্রতিষ্ঠালগ্নের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে মাথাভাঙ্গা পরিবার হাতের মুঠোয় নিয়েছে প্রাণ। একটা সময় ছিলো যখন এই জনপদে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানিতে তটস্থ থেকেছে, বন্দুকের নল থেকেছে মাথাভাঙ্গা পরিবারের সদস্যদের পেছনে তাক হয়ে, তখনও সন্ত্রাস বিরোধী কলম ছুটেছে দুরন্ত গতিতে। যেখানেই কুসংস্কারের ফাঁদ, যেখানেই পাতা হয়েছে প্রতারণার দোকান, সেখানেই শক্ত পায়ে উপস্থিত হয়েছে মাথাভাঙ্গার কলম সৈনিক। এ সংগ্রামে কতোটা সফল, কতোটা ব্যর্থ তার বিচারের দায়িত্ব অবশ্যই পাঠকূলের। কারণ, দৈনিক মাথাভাঙ্গা প্রতিদিন প্রস্তুত হয়, পরেরদিন প্রভাতে পাঠককূলের কাঠগায় দাঁড়িয়ে স্বপক্ষে রায় নেয়ার প্রচেষ্টায়।

একটি সংবাদপত্র নিজ গরিমায় সজ্জিত হয়ে, যথসময়ে পাঠকের হাতে পৌঁছুনোর মধ্যে থাকে অসংখ্য মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম। সংবাদ সংগ্রহ করা, তা পাঠ উপযোগী করে প্রস্তুত করা, ছাপার মতো করে গড়ে তোলার পর তা রাতভর ছাপা। এরপর পাঠকের হাতে পৌঁছুনো। পাঠকূলেরই অভিমত, দৈনিক মাথাভাঙ্গা ছাড়া সকালের ধুমায়ীত চা কেমন যেন বিশ্বাদ লাগে। আমরা সকল পাঠকেরই সকালটাই শুধু নয়, পুরো দিনটাকেই উপভোগ্য তথা যাপনের উপযোগী করার চেষ্টায় ব্রত। মাথাভাঙ্গা সময়ের সাথে এগিয়ে থাকে, এগিয়ে দেয় আরও একধাপ।

পরম আনন্দের দিনেও চরম কষ্ট লুকিয়ে দৈনিক মাথাভাঙ্গা পরিবার আজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উচ্ছ্বাস প্রকাশে পাশে চায় সকল পাঠক, শুভানুধ্যায়ীসহ বিজ্ঞাপনদাতাদের। যাদের অকৃত্তিম ভালোবাসা, সময় অসময়ে পাশে থাকা নিয়েই মাথাভাঙ্গা পরিবারের নিরন্তর পথচলা। সকলকে আবারও সালাম ও শুভেচ্ছা।

Comments (0)
Add Comment