আবারও ধর্ষণ : এই ঘৃণ্য বর্বতার শেষ কোথায়

ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন, নারী নির্যাতনসহ নানা ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। একেকটি ঘটনা এতটাই ভয়ানক যে, আদিম বর্বরতাকেও যেন হার মানায়। ধর্ষকের ঘৃণ্য লোলুপ দৃষ্টি থেকে রেহাই পাচ্ছে না কোমলমতি শিশুরাও। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি কতোটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে তা যেমন অনুধাবন করা জরুরি, তেমনি এর পরিপ্রেক্ষিতে কঠোর পদক্ষেপ নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।
প্রসঙ্গত, মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া আট বছরে শিশু ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। মামলাটি করেছেন শিশুটির মা। তিনি মামলার এজাহারে অভিযোগ করেছেন, মেয়ের স্বামীর সহায়তায় তার বাবা (শ্বশুর) শিশুটিকে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি মেয়ের শাশুড়ি, ভাশুরও জানতেন। তারা ঘটনা ধামাচাপা দিতে শিশুটিকে হত্যাচেষ্টা চালান। চিকিৎসাধীন শিশুটির সঙ্গে ঢাকায় থাকায় শনিবার সকালে বড় বোন ও বাবাকে দিয়ে মাগুরা সদর থানায় এজাহার পাঠান শিশুটির মা। সেই অনুযায়ী বেলা ৩টার দিকে মামলা রেকর্ড হয়। তথ্য মতে, মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (৪) এর ক/৩০ ধারায় ধর্ষণ ও ধর্ষণের মাধ্যমে আহত করার অভিযোগ করা হয়। মামলায় শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়েছে। তাদের আগেই গ্রেফতার করে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছিলো। এছাড়া ধর্ষণের শিকার শিশুটির শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় তাকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়েছে। চারদিনেও জ্ঞান ফেরেনি শিশুটির। কৃত্রিম উপায়ে চলছে শ্বাস-প্রশ্বাস এমনটিও জানা গেছে। আমরা বলতে চাই, এই ঘটনা কতটা ভয়ংকর তা অনুধাবন করতে হবে। ধর্ষকের বিরুদ্ধে শুধু দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করাই নয়, বরং এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে ধরনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একের পর এক নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও সহিংসতা সমাজকে কোথায় নিচ্ছে সেই ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বলা দরকার, নির্যাতন, ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতার প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। গত শনিবার সারাদেশে কর্মসূচির মাধ্যমে নিপীড়কদের শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার দাবি তুলেছে নানা শ্রেণি-পেশার সংক্ষুব্ধ মানুষ। এই বিষয়গুলোর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে হবে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, অপরাধীরা পার পেয়ে গেলে আরও অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে। ফলে, দোষীর শাস্তির নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। লক্ষণীয়, শিশু ধর্ষণের শিকার এই প্রথম নয়। নানা সময়ে ধর্ষণ, নিপীড়ন ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। এই ধরনের ঘটনার মধ্যদিয়ে যে অবক্ষয়ের চিত্র স্পষ্ট হয় সেটাও আমলে নিতে হবে। ধর্ষণ একটি অসামাজিক ও শাস্তিযোগ্য নিকৃষ্ট অপরাধ-যা সমাজে নারীদের নিরাপত্তা ও মর্যাদাকে হুমকিতে ফেলে দেয়। আর যখন কোমলমতি শিশুও এরূপ ঘৃণ্য থাবার শিকার, তখন সামগ্রিকভাবে যে ভয়াবহতা সামনে আসছে তা কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই।
সর্বোপরি, এটা অনুধাবন করা জরুরি যে, কেন বারবার সমাজে এই ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা ঘটছে। কেন নৈতিক স্খলন, অধঃপতনের চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে দোষীর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।