দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়টি বহুদিন ধরেই দেশে বিশেষ আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাঁচ কারণে দেশে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়া এবং বিশ্ববাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে দেশের বাজারে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ও করোনার পর থেকে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব ফেলেছে। গ্যাস-বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিচ্ছে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, এখন যে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে, তা নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খুব বেশি কিছু করার নেই। কারণ, এখন যে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে, তা টাকার প্রবাহ বৃদ্ধিজনিত কারণে হয়নি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দামে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় বিভিন্ন পণ্যের ক্ষেত্রে আমদানিনির্ভরতা পরিহার করে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে গুরুত্ব বাড়াতে হবে। আমরা জানি, সব ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সম্ভব নয়। কাজেই যেসব ক্ষেত্রে সম্ভব সেসব ক্ষেত্রে সফল হওয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে। দীর্ঘ সময় ধরে মূল্যস্ফীতি ও ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হারে ঊর্ধ্বগতি থাকলে মানুষের আয় ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে। এতে মানুষ মূল্যস্ফীতি ও টাকার অবমূল্যায়নের ফাঁদে পড়ে যায়। অবমূল্যায়নজনিত কারণে টাকার প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে তা মূল্যস্ফীতিকে যাতে আরও উসকে দিতে না পারে, সেজন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এর অংশ হিসাবে দেশে খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিলাসী পণ্যে নিয়ন্ত্রণ কঠোর করতে হবে। টাকা পাচার বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো সম্ভব না হলে পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবিলা করা কঠিন হতে পারে। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে ইতোমধ্যে দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। এসব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে নিত্যপণ্যের দামেও। এ অবস্থায় নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। লক্ষ্য করা গেছে, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ভোক্তাদের যখন দম বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তখনও নানা অজুহাতে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট অতিরিক্ত মুনাফা করে মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। বস্তুত, বাজার তদারকি সংস্থাগুলোর দুর্বলতার কারণেই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বেপরোয়া মুনাফা করার সুযোগ পায়।
অভিযোগ রয়েছে, বাজার পর্যবেক্ষণে নিয়োজিত অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের যোগসাজশের কারণেই অসাধু ব্যবসায়ীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজির কারণেও নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। বস্তুত, বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণেই মধ্যস্বত্বভোগীরা এতোটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এ দুর্বলতা কাটাতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দুঃখজনক হলো, সরকারের পক্ষ থেকে পণ্যের দাম বেঁধে দেয়া হলেও তা কার্যকর হয় না। এতে ভোক্তাদের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। পণ্য ও সেবার দাম যাতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে, সেজন্য সরকারকে নানামুখী পদক্ষেপ নিতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে সেসবের কার্যকারিতা।