চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার
সরোজগঞ্জ প্রতিনিধি: ‘বর্তমানে বাল্যবিয়ে সম্পর্কে আমাদের মেয়েরা অনেকটাই সচেতন। এখন ১৮ বছরের আগে মেয়েরা বিয়ে করতে চায় না। বাল্যবিয়ে আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। এখন মেয়েরা নিজের বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে প্রশাসনের সহযোগিতা নিচ্ছে। মাদককে না বলতে হবে। খারাপ সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। লেখাপড়াই মনোযোগী হলে সুশিক্ষাই শিক্ষিত হয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করতে পারবে।’
চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে অভিভাবক সমাবেশ, মাদক, বাল্যবিয়ে ও ইভটিজিং প্রতিরোধে সচেতনতামূলক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত মন্তব্য করেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ইসমাইল হোসেন।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময়টা অনেক কষ্টে পার করেছে মানুষ। আল্লাহ অশেষ রহমতে কোভিডের বিপদ অনেকটাই কেটে গেছে। এখন সময় এসেছে ঘুরে দাঁড়ানোর। দুই বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এখন ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ায় মনোযোগী হতে হবে। শিক্ষার মূল কাজ হলো ভাল মানুষ হওয়া। কর্মক্ষম মানুষ হওয়া। তুমি যেন নিজের কাজ নিজে করে সমাজে সাবলম্বী হতে পারো। আর সঠিকভাবে কর্মক্ষেত্র পরিচালনা করায় শিক্ষার স্বার্থকতা। কোন কাজকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। আত্মবিশ^াস, পরিশ্রম ও কৌশল নিয়ে কাজ করতে হবে। লেখাপড়ার পাশাপাশি বিকল্প বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ইভটিজিং কিন্তু অনেক কমে গেছে। আসলে আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। আসুন আমরা সবাই মিলে সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলি।
তিনি আরও বলেন, চুয়াডাঙ্গা একটি শান্ত জনপদ। এখানে আসলেই মন ভাল হয়ে যায়। সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫টি শ্রেণির ছাত্রীদের আলাদাভাবে ৫টি বাইসাইকেল দেয়া হবে। খেলার মাঠটি সংস্কারের জন্য আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা হবে। বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে। এছাড়া বিদ্যালয়ের লাইব্রেরির বই কেনার জন্য ১ লাখ টাকা দেয়ারও আশ্বাস দেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খান। প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ইসমাইল হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাজিয়া আরফীন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু তারেক, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম ভুইয়া, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আতাউর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান ও বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক। সদর উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ের নাজির সাজেদুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আকবার আলী। অভিভাবকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জহুরুল আলম। ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন এসএসসি পরীক্ষার্থী সুমাইয়া ইসলাম।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শারমিন আক্তার, আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রনি আলম নূর, জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাজহারুল ইসলাম, দামুড়হুদা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুদীপ্ত কুমার সিংহ, আলমডাঙ্গা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেজওয়ানা নাহিদ, জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) জাকির হোসেন, সহকারী কমিশনার বিএম তারিক-উজ-জামান, শেখ মোহাম্মদ রাসেল, মোহাম্মদ সাদাত হোসেন, নুর পেয়ারা বেগম, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দার (এনএসআই) উপ-পরিচালক জামিল সিদ্দিক, জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক শরিয়ত উল্লাহ, সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ কুমার সাহা, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন, সরোজগঞ্জ পুলিশ ক্যাম্পের পরিদর্শক শিকদার মতিয়ার রহমান, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান নান্নু, জেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি আজিজুল হক, কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আহম্মদ হাসানুজ্জামান মানিক, গড়াইটুপি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম রাজু, ছাদেমান নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সালেহ, কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জহুরুল আলম প্রমুখ।
অনুষ্ঠান শেষে ১০ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ছাত্রীদের মাঝে বাইসাইকেল বিতরণ করেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার। এর আগে বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন তিনি। পরে বৃক্ষরোপণ শেষে বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা, ক্যাম্পাস ও বিএনসিসি সদস্যদের কুচকাওয়াজ দেখে মুগ্ধ হন তিনি।