স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গাসহ ৭ জেলায় ১৩ ব্যক্তির শরীরে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট বি-১৬১৭ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৭ জনই চাঁপাইনবাবগঞ্জের। জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জার (জিআইএসএআইডি) ওয়েবসাইট থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সেখানে জিনোম সিকোয়েন্সের তথ্য আপলোড করেছে ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর, আইদেশি এবং আইসিডিডিআর-বি।
জিআইএসএআইডি’র ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাড়া অন্য জেলাগুলো হচ্ছে- চুয়াডাঙ্গা, গাইবান্ধা, ঝিনাইদহ, বাগেরহাট, পিরোজপুর এবং খুলনা। এদের নমুনা গত ১৩ মে থেকে ২২ মে এর মধ্যে সংগ্রহ করা হয়। এ নিয়ে দেশে ভারতীয় ধরণে আক্রান্ত মোট ২০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আট জনই সম্প্রতি ভারতে যাননি। স্থানীয়ভাবে এই ভেরিয়েন্ট ইতোমধ্যে ছড়াতে শুরু করেছে বলেই মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বিষয়টি নিশ্চিত করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন শনিবার সকালে বলেন, ‘সম্প্রতি ভারতে যাননি, এমন সাত জনের শরীরেও করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। সুতরাং এটি নিশ্চিত যে, স্থানীয়দের মধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়াতে শুরু করেছে।’ গত ৮ই মে ভারত থেকে আসা দুই জনের শরীরে প্রথম করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, ঈদুল ফিতরের পর থেকে দেশে সংক্রমণ বেড়েছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে। ইতোমধ্যেই চাঁপাইনবাবগঞ্জে লকডাউন দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে সীমান্তবর্তী অন্য জেলাগুলোতে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এরইমধ্যে বাংলাদেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের রোগী পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হওয়া রোগীদের কন্টাক্ট ট্রেসিং করা হচ্ছে। তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম জানান, সীমান্তবর্তী অন্য জেলাগুলাতেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর কোনও জেলায় লকডাউন দেয়া হবে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর। তবে এতে দ্বিধার সুযোগ নেই জানিয়ে নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘যেখানে পরিস্থিতি যেমন হবে, সেই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য, সরকার যেকোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে বিশেষ নজর রাখছে অধিদফতর।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ন্যূনতম ২২টি জেলায় সংক্রমণের হার বেড়েছে। এর মধ্যে ১৫টিই সীমান্তবর্তী জেলা।
এদিকে, কোন জেলার সংক্রমণকে অ্যালার্মিং বিবেচনা করা যায় প্রশ্নে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ এবং যশোরে গত সপ্তাহে সংক্রমণ খুব বেশি ছিলো। এগুলো সব সীমান্তবর্তী জানিয়ে তিনি বলেন প্রতিটি জেলাতেই সংক্রমণের হার ২০ শতাংশের বেশি। সম্প্রতি যেসব জেলায় রোগী বাড়ছে সেখানে কন্টাক্ট ট্রেসিং করে আইইডিসিআর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে জানিয়ে অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন বলেন, প্রতি সপ্তাহেই রোগী বিশ্লেষণ করা হয়। আগামী সপ্তাহে যখন দেশজুড়ে পর্যালোচনা করা হবে তখন হয়তো আরও পরিবর্তন আসতে পারে।
তবে যশোর জেলার সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, তার জেলায় এপ্রিলের চেয়ে মে’তে সংক্রমণ কমেছে। এপ্রিলে সংক্রমণের হার ছিল ২৫ শতাংশের মতো। মে’তে ১৫-২০ শতাংশে নেমেছে। ‘এখন পর্যন্ত যশোর নিয়ে আমি সেভাবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত নই’ জানিয়ে ডা. আবু শাহীন বলেন, তবে পর্যবেক্ষণে রয়েছে। জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ না যাওয়া পর্যন্ত আগাম কিছু বলা যাচ্ছে। আপাতত যশোরকে অ্যালার্মিং বলে ভাবছেন না তিনি।
সংক্রমণের হার বেড়েছে বলে জানান কুষ্টিয়া জেলার সিভিল সার্জন ডা. এইচএম আনোয়ারুল ইসলাম। আগে প্রতিদিন সংক্রমণে হার ছিল ১১ শতাংশ পর্যন্ত, কিন্তু চলতি সপ্তাহে সেটা ১৭ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে। ডা. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে ভর্তিও বেড়েছে। গতকাল ভর্তি আছেন ৩১ জন, যা আগে দুই থেকে তিনজন ছিল। কিন্তু একদিনেই ভর্তি হয়েছেন ১০ জন। এর আগে রোগী কম থাকলেও তাদের অবস্থা খারাপ ছিল। তবে এখন রোগী বাড়লেও খারাপ অবস্থা হয়েছে এমন রোগী কম।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গত ১৬ মে থেকে ২২ মে পর্যন্ত এক সপ্তাহে তার আগের সপ্তাহের চেয়ে সংক্রমণ বেড়েছে। তার আগের সপ্তাহে (৯ মে থেকে ১৫ মে) রোগী শনাক্ত হয় সাত হাজার ৬৬৯ জন আর পরের সপ্তাহে রোগী শনাক্ত হয় সাত হাজার ৯৩০ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে খুলনা বিভাগে। যা শতকরা ১১৭ শতাংশ। এর আগের সপ্তাহে এই বিভাগে শনাক্ত ছিলেন ৩৭৬। যা পরের সপ্তাহে দাঁড়ায় ৮১৬ জনে।
এদিকে, পরিস্থিতি বিবেচনায় সাতক্ষীরা, রাজশাহী ও খুলনাতেও লকডাউন দেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম। তিনি বলেন, প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ সংক্রমণ হার বাড়ার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জে লকডাউন দেওয়া হয়েছে। আশেপাশের জেলা যেমন সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী ও খুলনাতেও সংক্রমণের হার বাড়ছে। তবে এখনও সেখানে সংক্রমণের হার ২০ এর নিচে। আমরা চিন্তা করছি, সেখানে লকডাউন দেয়া হবে কিনা। অধ্যাপক খুরশিদ আলম বলেন, ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে এমন আটজন রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের। তাদের প্রত্যেকে ভারতে গিয়েছিলেন। তবে এখনও তারা সবাই ভালো আছেন।
সংক্রমণের হার ধীরে ধীরে বাড়ছে বলে মন্তব্য করে আইইডিসিআর এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, সংক্রমণের হার এক অর্থে বাড়তির দিকে। বর্ডার এলাকা খোলা থাকা এবং ঈদের আগে ও পরের যাতায়াতকেও সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য দায়ী করেছেন এই মহামারী বিশেষজ্ঞ।