স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার ত্রাণ সমন্বয়কারী ও খাদ্য সচিব ড. নাজমানারা খানুম বলেছেন, ‘ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম ও আত্মসাৎ না হয়। জনপ্রতিনিধিরা ত্রাণ আত্মসাৎ করলে আইন প্রয়োগ করা হবে। জীবন ও জীবিকা পাশাপাশি রেখে কাজ করতে হচ্ছে। যতোটুকু সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে অনেক রোগ থেকে রোগমুক্ত থাকতে পারবো। যার যার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করি।’ গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ প্রতিরোধ, ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে জেলা পর্যায়ে চলমান ত্রাণ কার্যক্রম এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুসমন্বয়ের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত মতবিনিময়সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্য সচিব ড. নাজমানারা খানুম এসব কথা বলেছেন।
জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ প্রতিরোধ, ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে জেলা পর্যায়ে চলমান ত্রাণ কার্যক্রম এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুসমন্বয়ের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত মতবিনিময়সভায় খাদ্য সচিব ড. নাজমানারা খানুম প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। মতবিনিময়সভায় পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম, সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধি লে. কর্ণেল আসিফ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইয়াহ ইয়া খান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মনিরা পারভীন, সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান, সাবেক পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস, সদর ইউএনও মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান, জেলা খাদ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রেজাউল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আলী হাসান, মার্কেটিং অফিসার শহিদুল ইসলাম, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার ফিরোজ হোসেন ও মমতাজ খাতুনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথি খাদ্য সচিব ড. নাজমানারা খানুম আরও বলেন, আমরা এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য প্রস্তত ছিলাম না। স্বাস্থ্য বিভাগের স্বল্পতা ছিলো। সেই প্রস্তুতি ছিলো না। যারা ফ্রন্ট লাইনের যোদ্ধা চিকিৎসক চেষ্টা করে যাচ্ছেন। পুলিশ-সেনাবাহিনী সাহায্য করছে। পুলিশের সদস্য, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক ও সাংবাদিক অনেকে মারা গেছেন। তাদের জন্য শোক প্রকাশ করছি। আক্রান্ত পরিবারের কিছু দুর্দশা হতে পারে। অমানবিকভাবে বিদায় নিতে হচ্ছে। আমরা চাই কেউ যেন আর না মারা যায়। মানুষের জীবনটা রক্ষা করতে চাই। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ডিসিপ্লিন মেনে চলতে হবে। পেটে ক্ষুধা থাকলে ডিসিপ্লিন রাখা যাচ্ছে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৩১টি নির্দেশনা দিয়েছেন। তা যদি মেনে চলতে পারি এ পরিস্থিতি বাড়বে না। ত্রাণের তালিকা যাচাই-বাছাই চলছে। কোনো অনিয়ম হলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ধরে ফেলবো। জনপ্রতিনিধিদের স্বজনপ্রীতি থাকতেই পারে। দেখতে হবে যাদের পাবার কথা না, তারা পাচ্ছে কিনা। মানবিকতা সহায়তা যারা পাচ্ছে তারা বাদ যাবে। কোনোভাবেই যারা প্রাপ্য নয়, তারা বাদ যাবে। কোথাও কোনো অনিয়ম হচ্ছে কি-না। কেউ যেন অভুক্ত না থাকে। যে প্রাপ্য না, তাকে বাদ দিতে হবে। জনগণকে একত্রিত করে যুদ্ধাবস্থা মোকাবেলা করা। দুর্যোগ মুহূর্তে বোঝা যায় কি কার্যক্রম হচ্ছে। সমাজের দানশীল ব্যক্তি ও সংসদস্যবৃন্দ সবাই চেষ্টা করছেন। সরকার সর্বোচ্চ ত্রাণ দিচ্ছে।
জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, খাদ্য সচিব জেলার দায়িত্ব পাবার পর থেকে খোঁজ খবর রাখছেন। এর আগে ভিডিও কনফারেন্সে কথা হয়েছিলো। স্বচক্ষে দেখতে সরাসরি তিনি ঢাকা থেকে এসেছেন। এ সময় জেলার করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরেন। এ পর্যন্ত ১৮ জন করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন একজন। বেড প্রস্তুত রয়েছে ১৯৫টি। সরকারি চিকিৎসক ৩০ জন, বেসরকারি চিকিৎসক ১০ জন একং নার্স ২৭ জন প্রস্তুত আছে। পিপি ৩৮৪১টি বিতরণ করা হয়েছে এবং হাতে রয়েছে ৩১১৪ টি। হোটেল ভিআইপিতে করোনা চিকিৎসায় কর্মরতদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হোম কোয়ারেন্টিনে ছিলো ১৮১৯ জন এবং ছাড়পত্র পেয়েছে ১৫৫৫ জন। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে ১৬ জন, আইসোলেশন ১৮ জন। এর মধ্যে হাসপাতালে ৮ জন এবং বাড়িতে ২ জন। বিদেশ ফেরত ছিলো ৮২৬ জন। সরকারি ৪৮ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৪৭ লাখ টাকা ১ লাখ ৯১৬টি পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। জিআরের ১৪৮৩ মে.টন চালের মধ্যে ১০০৯ মে.টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। ১০ কেজি চাল ও ২ কেজি করে আলু দেয়া হয়েছে। ২৮ মার্চ থেকে ২৮৬টি মোবাইলকোর্টে ১১২৮টি মামলা হয়েছে। এখাতে ১২ লাখ ২৮ হাজার টাকা জরিমানা আদায় হয়েছে। কোভিড-১৯ আক্রান্তদের বাড়ি ইফতার পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, আগামী ১০ মে থেকে মার্কেটগুলো চালু হওয়ার কথা রয়েছে। আমি ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলেছি। কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ছোট ছোট যানাবাহন চলাচল করলে মানুষের ভীড় বাড়বে। সেজন্য উপজেলা ভিত্তিক যান চলাচল করবে। জেলা শহরে কোনো যান বাহন ঢুকবে না।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন বলেন, বর্তমানে দেশে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ চলছে। জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণে স্বচ্ছতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। জনপ্রতিনিধিরা ব্যবসা শুরু করেছে। স্বজনপ্রীতি ও ভোটের রাজনীতি হচ্ছে। যারা ভোট দেয়নি তাদের নাম তোলা হচ্ছে না। ইম্ম্যাচিউট দ্বারা ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। অর্ধেক চাল বিক্রি করা হচ্ছে। চেয়ারম্যানদের মধ্যে আলমডাঙ্গার চিৎলা, খাদিমপুর, আইলহাঁস, সদর উপজেলার মধ্যে পদ্মবিলা ও বেগমপুর ইউনিয়নে অনিয়ম হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় চরম অনিয়ম হচ্ছে। সরকারি নীতিমালা মেনে চলা হচ্ছে না। ওএমএস’র লিস্টের তালিকা সঠিক হচ্ছে না। ৪নং ওয়ার্ডের মল্লিকপাড়ার কাপড় ব্যবসায়ী দোতলা বাড়ির মালিক আরিফুল শ্রমিক নাম লিখে ১০ টাকা কেজি দরে চালের তালিকায় নাম তুলেছেন। একইভাবে ৮নং ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর তার চার ভাইকে কার্ডের তালিকায় নাম তুলেছেন। ৭নং ওয়ার্ডে দোতলা বাড়ি আছে এমন অনেকের নাম আছে। স্বজনপ্রীতি হচ্ছে, দল এখানে আসবে না। আসতে দেয়া উচিৎ নয়। যারা দুস্থ সবাই পাক এটা সরকারি নির্দেশ। দলমতের ঊর্ধ্বে উঠতে পারে না। তারা ব্যাপক নোঙরামিতে মেতে উঠেছে। সবাইকে সমান চোখে দেখবো।