৮ দিনের মাথায় শিশু মারিয়ার মৃত্যু : সৎ মা লিমা গ্রেফতার

চুয়াডাঙ্গায় পিতার বিরুদ্ধে শিশু কন্যাকে বিষ মেশানো চিপস খাওয়ানোর অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা আদালত চত্বরে পিতা শাকিল আহমেদের বিষ মেশানো চিপস খাওয়ার ৮দিনের মাথায় মারা গেছে সেই ছোট্ট শিশু মারিয়া খাতুন (৪)। গতকাল বুধবার সকাল ৬টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সদর থানার একটি মামলা দায়ের করলে শিশুটির সৎ মা লিমা খাতুনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবারই লিমাকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করলে বিচারক জেলহাজতে প্রেরণ করেন।

এদিকে, একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা রুশিয়া খাতুন। স্বজনদের আহাজারিতে হাসপাতাল চত্বর ভারি হয়ে ওঠে। গতকাল বুধবার ময়নাতদন্ত শেষে শিশু মারিয়া খাতুনের মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করে পুলিশ। এর আগে ১৮ জুলাই মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে চুয়াডাঙ্গা আদালত চত্বরে সবার অগোচরে বাবা শাকিল এ ঘটনা ঘটায় বলে অভিযোগ ওঠে। এরপরই শিশুটিকে গুরুতর অবস্থায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে পরদিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে পরিস্থতি আরও খারাপ হলে গতকাল মঙ্গলবার পরিবারের সদস্যরা শিশুটিকে বাড়িতে নিয়ে এসে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। গতকাল বুধবার ভোরে শিশুটি মারা যায়। এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে শিশুটির মা রুশিয়া খাতুন বাদী হয়ে দুজনের নামে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি মামলা করেন। এরপরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে সৎ মা লিমাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

জানা যায়, প্রায় ৬ বছর আগে দামুড়হুদার উপজেলার নতিপোতা ইউনিয়নের হোগলডাঙ্গা গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে শাকিল আহমেদের সঙ্গে একই উপজেলার রুশিয়া খাতুনের বিয়ে হয়। বছর ঘুরেই ঘরে আসে শিশু মারিয়া। বিভিন্ন কারণে গত ৩ বছর তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর শাকিল আবারো বিয়ে করেন। দামুড়হুদা পারিবারিক আদালতে একটি মামলাও চলমান রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন রুশিয়া খাতুনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাজমুল হাসান লাভলু।

ঘটনার দিন রুশিয়া খাতুন দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেছিলেন, সেদিন (১৮ জুলাই) আদালতের আসার নির্ধারিত দিন ছিলো। সেই মোতাবেক মেয়ে মারিয়াকে নিয়ে আদালতে আসি। অপর দিকে মেয়ের বাবা শাকিলও আসেন। সকলের অগোচরে মেয়েকে ডেকে নিয়ে চিপসের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খাওয়ায় শাকিল। এরপরই মেয়ে আমাকে বলে তার মাথা ঘোরছে। সাথে সাথে নীল রঙের বমি ও মলত্যাগ শুরু করে মেয়ে। শরীর নেতিয়ে যেতে শুরু করলে মুহুরি কবির উদ্দিনের সহযোগিতায় মারিয়াকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

শিশুটির খালা দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, ঘটনার পরদিন উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশু মারিয়াকে নেয়া হয় রাজশাহীতে। সেখানে কয়েকদিন থাকার পর পরিস্থিতির অবনতি হলে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। গত পরশু মঙ্গলবার আবারো সদর হাসপাতালে ভর্তি করি। পরদিন ভোরে অর্থাৎ গতকাল বুধবার ভোরে মারিয়া মারা যায়। তিনি আরও বলেন, যে যাবার (শিশু মারিয়া) চলেই গেছে। আমরা অভিযুক্তদের কঠিন শাস্তির দাবি করছি। ঘটনার দিন রুশিয়া খাতুনের আইনজীবী নাজমুল হাসান লাভলু জানিয়েছিলেন, আমি বিষয়টি জেনেছি। মূলত ভরণপোষণ থেকে রেহাই পেতেই আদালত প্রাঙ্গণে চিপসের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে নিজ মেয়েকে হত্যার চেষ্টা করেন শাকিল। ২০২২ সালে দামুড়হুদা পারিবারিক আদালতে ভরণপোষণের মামলা করেন রুশিয়া। সেই মামলার কিস্তি বাবদ ৮ হাজার টাকাও পরিশোধ করেছে। মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত এই কিস্তির দিতে হবে। এই কারণেই মেয়েকে চিপসের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে হত্যা চেষ্টা করেন শাকিল।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি মাহব্বুর রহমান বলেন, গতকাল ভোরে শিশু সদর হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় মারা গেছে। গত মঙ্গলবার শিশুটির মা বাদী হয়ে দুজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এরপরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে আসামি লিমা খাতুনকে (মারিয়ার সৎ মা) গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা দুজনে মিলে পরিকল্পনা করেছে বলে জানা গেছে। শাকিলকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Comments (0)
Add Comment