আফজালুল হক/সাইদুর রহমান:
বিয়ের সবকিছু ঠিকঠাক। বাড়িতে চলছে আয়োজন। রাত পোয়ালেই বিয়ের পিঁড়িতে বসবে নিশান। হবু স্ত্রীর গয়না আনতে সন্ধ্যার দিকে নিজেই সিএনজি চালিয়ে যান নানাবাড়ি চুয়াডাঙ্গা শহরের হাটকালুগঞ্জে। স্বর্ণের দুল ও হাতের বালা নিয়ে ফিরছিলেন নিজবাড়ি আলমডাঙ্গার কয়রাডাঙ্গা গ্রামে। তবে বাড়ি ফেরা হয়নি নিশানের। ফেরার পথেই দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। রাত ১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কের ভালাইপুর-আলুকদিয়া গ্রামের মাঝামাঝি স্থানে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন নিশান। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। রাত পৌনে ৩টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় নিশানের।
নিহত যুবক নিশান আলী ওরফে জুইন হোসেন (২৫) আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের মল্লিকপাড়ার মৃত এস মোহাম্মদের ছেলে। তিনি পেশায় সিএনজি চালক ছিলেন। রাতে নিশানের মাসহ স্বজনরা হাসপাতালে পৌঁছুলে কান্নায় ভেঙে পড়েন। মা বিলকিসের আহাজারি দেখে উপস্থিত সকলের চোখের কোণেই পানি জমে যায়।
নিহতের খালাতো ভাই জুয়েল দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, দুই ভাইয়ের মধ্যে নিশান ছিলো বড়। বাবা মারা গেছে। সিএনজি চালিয়ে পুরো সংসার চালাতো নিশান। পরিবারের দেখাশোনার পর পার্শ্ববর্তী গ্রামে বৃহস্পতিবার বিয়ের দিন ধার্য ছিলো। আগের দিন বুধবার সন্ধ্যায় হবু স্ত্রীর জন্য গয়না আনতে চুয়াডাঙ্গা সদরের হাটকালুগঞ্জে যায় নিশান।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইন্দ্রজীত রায় বলেন, আনুমানিক রাত ১টার দিকে টহল দেয়ার সময় আলুকদিয়া-ভালাইপুরের মাঝামাঝি সড়কের ওপর রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি নিশানকে। খবর পেয়ে আহত অবস্থায় চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। তিনি আরও বলেন, ঘটনাস্থলে পুরো সিএনজিটা ধুমড়েমুচড়ে গেছে। দুর্ঘটনা কবলিত সড়কের চাকার সাফ দেখে মনে হচ্ছে বড় কোনো যানবাহন কিংবা ট্রাক সিএনজিকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে আহত জুইন হোসেনের কাছ থেকে একজোড়া স্বর্ণের দুল ও একজোড়া হাতের বালা উদ্ধার করা হয়েছে।’
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আহতের মাথাসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো। রাত পৌনে ৩টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত নিশানের চাচা সাইফুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার সেরোয়ানি পরে পার্শ্ববর্তী গ্রামে বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা ছিলো তার। ছেলের মৃত্যুতে মা যেন পাগলপ্রায়। বিয়ে দিন বউকে সঙ্গে করে নিশান বাড়িতে আসতো, তবে আসতে হলো লাশ হয়ে। সকালে মরদেহ বাড়িতে পৌঁছুলে নেমে আসে শোকের ছায়া। দুপুর ২টার দিকে জানাজার নামাজ শেষে গ্রামের কবরস্থানে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়।