গুলির হিসেবে গড়মিল : পৃথক দু’মামলায় চুয়াডাঙ্গার বড়সলুয়ার ফারুক হোসেন গ্রেফতার
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বড়সলুয়া গ্রামের আরাফাত হোসেন স্মরণী বিদ্যালয়ের ভেতর লাইসেন্সকৃত রাইফেল দিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রী নাফিয়া ইয়াসমিনকে হত্যার উদ্দেশে গুলি চালিয়েছেন আলোচিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারুক হোসেন। তবে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় নাফিয়া ইয়াসমিন প্রাণে রক্ষা পান। গুলির শব্দে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় দর্শনা থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ফারুক হোসেনকে গ্রেফতার করে চুয়াডাঙ্গা আদালতে সোপর্দ করেছে। স্ত্রীকে গুলি করে হত্যা এবং আগ্নেয়াস্ত্রের গুলির হিসেব গড়মিল থাকায় ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন এবং অপর মামলাটি করেছেন দ্বিতীয় স্ত্রী নাফিয়া ইয়াসমিন। তবে ওই এলাকায় ব্যাপক জনশ্রুতি রয়েছে ফারুক হোসেন তার লাইসেন্সকৃত অস্ত্র দিয়ে যখন-তখন কোনো কারণ ছাড়াই মানুষের ওপর চড়াও হন তিনি। ফারুক হোসেন এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে এলাকাবাসী মুখ খুলতে সাহস পান না।
মামলার নথি ও এলাকাবাসীসূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের বড়সলুয়া গ্রামের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বিএম কলেজ ও আরাফাত হোসেন স্মরণী বিদ্যাপীঠ (মাধ্যমিক বিদ্যালয়) নামে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠন গড়ে তুলেছেন ওই গ্রামের সামসুল আলম ফরজন মাস্টারের ছেলে তিতুদহ ইউপি নির্বাচনের সম্ভব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী আলোচিত ফারুক হোসেন। এর মধ্যে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বিএম কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন ফারুক হোসেনের দ্বিতীয় স্ত্রী নাফিয়া ইয়াসমিন এবং আরাফাত হোসেন স্মরণী বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি নিজে। স্বামী স্ত্রী একই জায়গায় চাকুরী করার সুবাদে প্রায় সময় তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার বেলা ১১ টার দিকে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায় ফারুক হোসেন বিদ্যালয় থেকে বাড়িতে চলে যান। দুপুর ১২টার দিকে বাড়ি থেকে তার লাইসেন্সকৃত রাইফেল নিয়ে এসে স্ত্রী নাফিয়া ইয়াসমিনকে হত্যার উদ্দেশ্যে ৩ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করেন। এ সময় নাফিয়া ইয়াসমিন জীবন বাচাতে দৌড়ে বিদ্যালয়ের পেছনের ডোবার মধ্যে লুকিয়ে পড়লে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তাতে প্রাণে বেঁচে যায় নাফিয়া। এ সময় গুলির শব্দে এবং চিৎকার চেচামেচিতে এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনা জানাজানি হলে গতকাল বুধবার ভোর ৪টার দিকে দর্শনা থানা পুলিশ ফারুক হোসেনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে স্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত রাইফেল ও ১৩৪ রাইন্ড তাজা গুলি উদ্ধার করেন এবং ফারুক হোসেনকে গ্রেফতার করেন। তবে একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, পুলিশ রাতে ফারুক হোসেনের বাড়িতে গেলে ফারুক হোসেন পুলিশকে বাড়ি ঢুকতে বাঁধা প্রয়োগ করেন। এক পর্যায় পুলিশ বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে রাইফেল এবং গুলির তথ্য নিতে চাইলে রাইফেল চুয়াডাঙ্গাতে ভাইয়ের বাড়িতে আছে বলে জানায় ফারুক। রাতেই ফারুক হোসেনকে সাথে নিয়ে পুলিশ চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকায় ফারুক হোসেনের ভাইয়ের বাড়িতে যান। এক পর্যায় ফারুক মিথ্যা তথ্য দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করেছে বলে জানায়। পুলিশ পুনরায় বড়সলুয়া গ্রামে ফারুকের বাড়িতে ফিরে আসেন। এসময় ফারুক ঘর থেকে রাইফেল ও গুলি পুলিশের হাতে তুলে দেন।
পুলিশ জানায়, ফারুক হোসেন ২০০৯ সালে ১শ রাউন্ড গুলি ক্রয় করেন। অথচ তার বাড়ি থেকে পুলিশ ১৩৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে। এবং ঘটনার সময় সে আরও ২ রাউ- গুলি ব্যবহার করেছে। এ কারণে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ফারুক হোসেন অতিরিক্ত ৩৬ রাউন্ড গুলি কোথায় পেলো? এদিকে ফারুক হোসেনর স্ত্রী নাফিয়া ইয়াসমিন বাদি হয়ে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণ করায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন এবং রাইফেলের গুলির হিসেব গড়মিল থাকায় দর্শনা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) হারুন-উর-রশিদ বাদি হয়ে পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন। ওই দু’মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ফারুক হোসেনকে বুধবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।