স্টাফ রিপোর্টার: ভারত থেকে গরু আনার এবার সুযোগ নেই। কোরবানির আগে ভারত থেকে গরু যাতে কেউ আনাতে না পারে সে লক্ষে সরকার শক্ত পদক্ষেপ নিয়েছে। এ খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরসহ এলাকার ক্ষুদ্র খামারিসহ ঘরে ঘরে গরু পালনকরা কৃষকেরা স্বস্তির শ্বাস ছেড়েছে। বলেছে, করোনার কারণে যখন গরু পালনকারীরা গরুর দাম ও তা বিক্রি করা নিয়ে যখন চরম অনিশ্চয়তা বিরাজ করছিলো তখনই সরকার ভারত থেকে গরু আনার পথ বন্ধ করেছে। এখন ভারত থেকে গরু পাচার রোধে সীমান্ত প্রহরীরা কঠোর হলে গরুপালনকারীদের লোকসান থেকে রক্ষা পাবে।
জানা গেছে, সীমান্তে ‘বিট খাটালের’ মাধ্যমে গরু আনার অনুমতি এ বছর দেয়া হয়নি। চামড়াশিল্প নিয়ে সরকারের এক টাস্কফোর্সের সভায় সোমবার এ তথ্য জানান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (আনসার ও সীমান্ত) মো. সাহেদ আলী। তিনি বলেন, এবার দেশীয় খামারিরা যাতে গবাদিপশুর ভালো দাম পান, তা নিশ্চিত করতে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
বিট খাটাল কি? বিট খাটাল হলো একটি খোয়াড়ের মতো স্থান। এলাকার অনেকেই গরু আনার কারিডোরও বলে। যেখানে ভারত থেকে আনা গরু জড়ো করা হয়। এরপর শুল্ক কর্মকর্তারা মালিকানাবিহীন দেখিয়ে গরু গুলোকে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করেন। এটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে বাজেয়াপ্ত করার জন্য কাগজে-কলমে সংক্ষিপ্ত বিচার দেখানো হয়। এরপর ‘রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাজেয়াপ্ত’ গরু মাত্র ৫শ টাকার বিনিময়ে গরু ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়। বৈধভাবে এটাই গরু আনার ব্যবস্থা। তবে ভারতের কাছে এ ব্যবস্থার কোনো স্বীকৃতি নেই। তবে ২০১৪ সালের মে মাসে ভারতে নরেন্দ্র মোদির সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সীমান্তে গরু বাণিজ্য অনেকটাই কমে গেছে। এর আগে বছরে ২০ লাখের বেশি গরু আনা হতো। এদিকে ভারতীয় গরু আনা কমে যাওয়ার পর বাংলাদেশেও গবাদিপশু পালন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তবে বেড়েছে গরুর গোস্তের দাম। সাড়ে ৫শ টাকার কমে এক কেজি গরুর গোস্ত মেলে না। ফলে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ মাংসের স্বাদ নেয়া ভুলতে বসেছে। গ্রাম বাংলায় ঘরে ঘরে গরুপালনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও গোস্তের দাম বেশি কেনো? খামারিদের অধিকাংশের অভিন্ন অভিমত, গোবাদি পশু খাদ্যের দাম আকাশ ছোঁয়া। এক আটি বিচুলিও কিনতে হয় চড়া দামে। আগে মাঠে গরু চরানোর বাঁচড়া ছিলো। এখন তা নেই। সবই খামারে রেখে চড়া দামে খাদ্য কিনে খাওয়ায়ে বড় করতে হয়। খামারে গরু মোটা তাজা করতে হলে বাড়তি পরিচর্যার প্রয়োজন হয়। ফলে গরুর দাম কম হয়ার কারণ নেই।
চামড়াশিল্পের উন্নয়নে সুপারিশ প্রদান ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়সে টাস্কফোর্সের সভাটি সোমবার অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়। এতে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় সাভারের চামড়াশিল্প নগরের পরিস্থিতি ও আসন্ন ঈদুল আজহায় চামড়া কেনা নিয়ে আলোচনা হয়।
এদিকে কোরবানির হাটে গরু বিক্রি নিয়ে এবার চরম দুশ্চিন্ত রয়েছেন গরু পালনকারীরা। করোনা পরিস্থিতির কারণে কোরবানির হাটে গরু কেনা বেচা একেবারেই কম। কোরবানির হাট কেমন হবে তা বুঝতে না পেরে এখন থেকেই বড় করা গরু বিক্রির চেষ্টা করছেন তাঁরা। কিন্তু অন্যান্য বছরের মতো এবার বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু কেনায় আগ্রহী ব্যাপারীদের উপস্থিতি এখনও পর্যন্ত খুবই কম।