চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমিতির পক্ষে বিশেষ সম্মাননা প্রদানকালে সাহিদুজ্জামান টরিক ও দিলীপ কুমার আগরওয়ালা
স্টাফ রিপোর্টার: ‘চুয়াডাঙ্গা কেন অবহেলিত থাকবে। তরুণ প্রজন্ম দেশে, দেশের বাইরে নিজেদের দক্ষতায় শক্ত অবস্থান গড়ে নিচ্ছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা আমাদের চুয়াডাঙ্গাকে আর অবহেলিত থাকতে দেবো না। অবহেলিত শব্দটি চুয়াডাঙ্গার সাথে আর রাখতে চাই না। চুয়াডাঙ্গায় এমন কিছু গড়ে তোলা হবে যা দেশ-বিদেশে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। অন্যের পরিচয়ে নয়, চুয়াডাঙ্গা নিজের গৌরবেই পরিচিতি লাভ করবে।’
চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব ও বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা ইউনিট আয়োজিত বিশেষ সম্মাননা অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত অতিথি আলহাজ মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামন টরিক উপরোক্ত আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমরা সকলেই নিজ নিজ অবস্থানে গুণী। প্রত্যেকের অপর অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করলে আমাদের সমাজ সুন্দর হতে বাধ্য। লক্ষ্য নির্ধারণ করে কঠোর অধ্যবসায়ে সাফল্য আসে। এটা শুধু শুনে বসে থাকলে চলে না, স্বপ্ন দেখতে হয়, স্বপ্ন বাস্তবায়নে পরিশ্রম করতে হয়। চুয়াডাঙ্গার তরুণ সমাজ নিজেদের প্রচেষ্টায় অনেক দূর এগিয়েছে। এদর সুসংগঠিত করে চুয়াডাঙ্গার প্রতি ভালোবাসা জাগাতে পারলে চুয়াডাঙ্গা অবহেলিত থাকবে কেন। চুয়াডাঙ্গার জন্য যারা করবে, চুয়াডাঙ্গাবাসীকেও তার বা তাদের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা দিতে হবে। ন্যায়ের পক্ষে কাজ করতে হবে। ন্যায়ের পক্ষে লড়াই করা নৈতিক দায়িত্বেরই অংশ। আমাদের সকলেরই সামাজিক দায় রয়েছে। সমাজের জন্য আমাদের সকলকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে কিছু করা উচিত।
অপর সংবর্ধিত অতিথি দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, চুয়াডাঙ্গা আমার জেলা। যখন যেখানেই থাকি না কেন চুয়াডাঙ্গার জন্য কিছু করার চেষ্টা থাকে। ব্যক্তি হোক, প্রতিষ্ঠান হোক চুয়াডাঙ্গার কথা শুনলেই উপকার করার চেষ্টা করি। তারা দেবী ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সর্বস্তরে সর্বাত্মক সহযোগিতার ধারা অব্যাহত রয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে যখন যেটুকু পারি করি। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবকে সবসময়ই নিজের প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখেছি। ক্লাবের সদস্যদের সাথে সবসময় থেকেছি। এখনও আছি। আগামীতেও থাকবো। সকলকে সাথে নিয়ে পাশে রেখে আগামীদিনে অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল পরিষ্কার পরিছন্নতার জন্য মাসে মাসে অনেক টাকা দিয়েছি। এখন আর নেয়া হয় না। দেব কোথায়? চুয়াডাঙ্গায় যারা সাংবাদিকতার মতো মহান পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন; তাদের লেখনীর মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গার সমস্যা তুলে ধরতে হবে। আমরা যে যেখানে থাকি তা দেখে সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবো।
সাহিদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান টরিক বিভাগীয়ভাবে আবারও রেমিটেন্স সেরা হওয়ায় এবং ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এফবিসিসিআই পরিচালক দিলিপ কুমার আগরওয়ালা তৃতীয় বারের মতো বাংলাদেশ জুয়েলার্স মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব ও বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের পক্ষে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি সরদার আল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা চেম্বার সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিক, স্থানীয় সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদের আহ্বায়ক আজাদ মালিতা, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা ইউনিট সভাপতি নাজমুল হক স্বপন, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সেক্রেটারি রাজীব হাসান কচি ও বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের সহসাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান চাঁদ। প্রেসক্লাব সদস্য এমএম আলাউদ্দিন পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রেসক্লাব সেক্রেটারি রাজীব হাসান কচি। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের সাবেক সভাপতি অ্যাড. রফিকুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম সনি, দামুড়হুদা প্রেসক্লাব সভাপতি এম নুরুন্নবী, দর্শনা প্রেসক্লাব সভাপতি আওয়াল হোসেন প্রমুখ। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের পক্ষে সংবর্ধিত দুজন অতিথিকে বিশেষ সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। সমগ্র অনুষ্ঠান উপস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সহসাধারণ সম্পাদক ইসলাম রকিব।
বক্তারা তাদের বক্তব্যে দিলীপ কুমার আগরওয়ালার নানা কৃতিত্বের বর্ণনা তুলে ধরে বলেন, দিলীপ কুমার আগারওয়ালা তার মায়ের নামে তারা দেবী ফাউন্ডেশন গড়ে সমাজের অবহেলিত মানুষের নানামুখী কল্যাণকর কর্মযজ্ঞ অব্যাহত রেখেছেন। প্রসূতিদের জরুরিভাবে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেয়ার জন্য সম্পূর্ণ নিখরচায় অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু রেখেছেন। যখনই কোনো সংকট দেখা দেয় তখনই তিনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে সমাজে স্বস্তি ফেরার সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। শীতবস্ত্র বিতরণ তো অব্যাহত রয়েছেই। কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে অক্সিজেনসহ চিকিৎসা উপকরণ যেমন দিয়েছেন, তেমনই তিনি খাদ্য সহায়তা দিয়েও অসংখ্য পরিবারে স্বস্তি ফিরিয়েছেন। আলহাজ মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান টরিকের চুয়াডাঙ্গার প্রতি ভালোবাসা এবং নিজ গ্রাম আলমডাঙ্গার পাঁচকমলাপুরে গড়ে তোলা মাদরাসার মাধ্যমে অসংখ্য শিক্ষার্থীর লেখপড়ার সুযোগ সৃষ্টির বর্ণনাও তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি চেম্বার সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিক বলেন, দিলীপ আমাদের চুয়াডাঙ্গার গৌরব, গর্ব। দেশের ৪ কোটি ব্যবসায়ীর নেতা দিলীপকে দেখেছি সবসময়ই চুয়াডাঙ্গার উন্নয়ন-ত্বরান্বিত করার কথা ভাবে। বাস্তবেও তার সাধ্যমতো সে করে। টরিক সিঙ্গাপুরে থেকেও সবসময় আমাদের খোঁজখবর রাখে। চুয়াডাঙ্গার উন্নয়নে টরিকের চেষ্টায় কমতি নেই। টরিক-দিলীপ এখন অভিন্ন আত্মা। এদের সমৃিদ্ধ-অর্জন মানেই চুয়াডাঙ্গার মঙ্গল। তোমাদের পাশে আমরা আছি। থাকবো। এগিয়েও যাও তোমরা।
সংবর্ধিত অতিথি সাহিদুজ্জামান টরিক তার বক্তব্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দৈনিক মাথাভাঙ্গার প্রতিষ্ঠাকালীন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম পিনুর কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে বলেন, সাইফুল ইসলাম পিনু নিজের কথা না ভেবে সবসময় অন্যের উন্নয়নের কথা ভেবেছেন। চুয়াডাঙ্গার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করেছেন। আমরা তাকে অনুসরণ করি। তিনি কখনো কোথাও অন্যায় দেখলে শক্ত হাতে প্রতিবাদ করেছেন। আমাদেরও করতে হবে। সংবর্ধিত অতিথি দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, সমাজে যারা পিছিয়ে পড়েছেন তাদের জন্য আমাদের অনেক কিছু করার রয়েছে। আজও প্রতিবন্ধী শিক্ষালয়ে ওদের পরিবহন ব্যবস্থা করেছি।