স্টাফ রিপোর্টার: এমনিতেই সড়কে চলাচলের বৈধতা নেই। তার উপর ঠাসাঠাসি করে যাত্রী নিয়ে বীরদর্পে ছোটে ওইসব অবৈধযানের অদক্ষ আনাড়ি চলকেরা। ইঞ্জিনের শব্দ কমানোর বদলে কেউ কেউ সাইল্যান্সার পাইপ কেটে বিকট শব্দে চালাতেও পছন্দ করে। ঘুরে ফিরে প্রশ্ন ওঠে, অবৈধ যানগুলো একের পর এক মানুষ হত্যা করেও প্রধান প্রধান সড়কে উপচেপড়া যাত্রী নিয়ে চলে কীভাবে? গতকাল শনিবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্বরের অদূরে ঠাসাঠাসি যাত্রী ভর্তি আলমসাধুর চালকের পাশেও বসানো যাত্রী নিয়ে ছোট চালককে যখন প্রশ্ন করা হয়, এতো যাত্রী কেনো, মিষ্টি হাসি দিয়ে বলেন ‘সমস্যা নেই’। পুলিশ ধরবে না? মিচকি হাসি মাখা মুখে বললেন ‘ম্যানেজ করে নেবো’।
শ্যালোইঞ্জিন চালিত অবৈধ যান প্রধান প্রধান সড়কে চলাচল বারণ। মন্ত্রণালয়ের একাধিক পরিপত্র রয়েছে। উচ্চ আদালতেরও স্পষ্ট আদেশ, সড়কে অবৈধ যান চলাচল করতে দেয়া যাবে না। তারপরও অবৈধ যান সড়ক থেকে উচ্ছেদে স্থান কাল পাত্র ভেদে নমনিয়তা। কেনো? তীব্র কমংস্থানের সমাজে ওরা যদি এসব চালিয়ে কৃষিপণ্য বহন করে তা হলে চালকের যেমন বেকরাত্ব ঘোচে, তেমনই কৃষিপণ্য বহন সহজলভ্য হলে ভোক্তা সাধারণ স্বল্পমূল্যে কৃষিপণ্য পাবেন। কৃষকদেরও উৎপাদিত পণ্য ঘরে বসে বিক্রি করার সুবিধা মিলবে। যক্তিগুলো খোড়া না হলেও ওইসব অবৈধ যান যেহারে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে, মানুষ মারে, পঙ্গুত্বের অভিশপ্ত জীবনে ঠেলে তা হিসেব করলে অবৈধযান সড়কে চলাচল বন্ধের দাবিই সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্যতা পাবে। বাস্তবে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহসহ পাশর্^বর্তী এলাকার চিত্র ভিন্ন। সড়কের ধারেই অসংখ্য অবৈধ যান তৈরির কারখানা, প্রকাশ্যেই শত শত অবৈধ যান। অবাক হলেও সত্য, বৈধ যানের কাগজপত্র চেক করার জন্য যখন পুলিশ কড়া হয়, রাস্তায় দাঁড়ায় তখনও পাশগলিয়ে দিব্যি ছুটে চলে অবৈধ যান। বিষয়টি হাস্যকর হলেও দৃশ্যপট পাল্টায় না। পাল্টাচ্ছে না। ফলে সড়ক দিন দিন ভয়ানক থেকে ভয়াবহ হয়ে উঠছে। সড়কে বের হয়ে সুস্থ সুহালে ফেরার ন্যূনতম নিশ্চয়তা নেই। নেই স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা। মাত্র পক্ষকালে চুয়াডাঙ্গাতেই পৃথক ৪টি দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে এক দম্পতিসহ ৫ জনের। গত শুক্রবার সকালে দর্শনা-চুয়াডাঙ্গা সড়কের ভিমরুল্লাহ নামকস্থানে আলমসাধু উল্টে আরোহী নিহত হন। তিনি চুয়াডাঙ্গা শহরতলী দৌলাতদিয়াড় বিএডিসি গোডাউন তথা কোরিয়াপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন। নাম সাহাদত হোসেন। পেশায় ছিলেন কাঠমিস্ত্রি। ১৯ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গা থেকে ফ্রিজ কিনে মেহেরপুর ফেরার পথে আলমসাধুর ধাক্কায় নিহত হন স্বামী-স্ত্রী। ১০ জানুয়ারি ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ হারান আলমসাধু আরোহী ইটভাটা শ্রমিক জালশুকার জোহর আলী। ৭ জানুয়ারি আলমসাধু দুর্ঘটনায় নিহত হন পুরন্দপুর দত্তরবেড় পাড়ার জয়নাল আবেদিন। এভাবে যখন সড়কে ঝরছে তরতাজা প্রাণ, হচ্ছে পঙ্গু তখন প্রকাশ্যে ঠাসাঠাসি করে যাত্রী নিয়ে নিজের আসনের পাশে আরও একজন যাত্রী বসিয়ে গতকাল দুপুরে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের প্রধান সড়কে ছুটছিলেন অবৈধ যান চালক। চালকের বসা দেখে বুঝতে বাকি ছিলো না, তিনি কতটা ঝুঁকি নিয়ে শ্যালোইঞ্জিন চালিত যান চালাচ্ছেন। তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, অতো যাত্রী নিয়ে কেনো? তিনি বলেন, সমস্যা নেই। পুলিশের কথা বলতেই তিনি মিচকি হাসি দিয়ে বলেন, ম্যানেজ করে নেবো। এ উক্তি কিসের ইঙ্গিত? বোদ্ধাদের বুঝতে নিশ্চয় বাকি থাকার কথা নয়।