স্টাফ রিপোর্টার: করোনা মহামারীকালে শিক্ষা গ্রহণে যে ক্ষতি হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তা একান্ত প্রচেষ্টায় পুষিয়ে নেয়ার উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘শিক্ষাবৃত্তি শিক্ষাগ্রহণে শুধু উৎসাহিতই করে না, শিক্ষা গ্রহণের পথও সুগম করে। শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের জন্য চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদকে ধন্যবাদ। শিক্ষাবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্র্থীরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ ও দশের কল্যাণে কাজ করলে আজকের এ আয়োজন স্বার্থক হবে।’
গতকাল বুধবার সকাল ১১টায় চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা পরিষদ প্রশাসক শেখ সামসুল আবেদীন খোকন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক বলেন, ‘বর্তমান সরকার দেশে শিক্ষা সম্প্রসারণে অকল্পনীয় উদ্যোগ নিয়ে তা সুচারুরূপে বাস্তবায়ন করে চলেছে। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিকের সকল শিক্ষার্থীর হাতে বছরের প্রথম দিনেই তুলে দেয়া হয় বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তুক। দেয়া হচ্ছে উপবৃত্তি। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা সুবিধা। যা উন্নত বিশ্বেও বিরল। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী শিক্ষাকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন মূলত নারী পুরুষের বৈষম্য দুর করার জন্য। একটি জাতি তখনই প্রত্যাশিত উন্নয়নে পৌঁছায় যখন, নারী-পুরুষের বৈষম্য থাকে না।’
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান সকলকে দেশ প্রেমে উদ্বুব্ধ হয়ে দেশের জন্য কাজ করার পুনঃ পুনঃ তাগিদ দিয়ে বলেন, ‘আমরা আমাদের অর্থায়নে নির্মাণ করতে পেরেছি আমাদের স্বপ্নের পদ্মাসেতু। প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ও তার সঠিক দিক নিদের্শনায় আগামী ২৫ জুন পদ্মাসেতু উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গাতেও উদ্বোধন উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। এ আয়োজনে অংশগ্রহণ করে পদ্মসেতু নির্মাণের সফলতাকে উদযাপন করার জন্য সকলকে আমন্ত্রণ।’
চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মুন্সি আবু সাইফের প্রাণবন্তু উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত আলোচনাসভায় স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মিজানুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত তিনি ছাড়াও উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন ৬ বিজিবি’র অধিনায়ক লে . কর্নেল শাহ মোহাম্মদ ইশতিয়াক পিএসসি সিগন্যাল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাজিয়া আফরিন, পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি আনিছুজ্জামান, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি সরদার আল আমিন, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা ইউনিট সভাপতি নাজমুল হক স্বপন প্রমুখ। বৃত্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে শিক্ষার্থী সামিয়া রহমান তৃপ্তি ও অভিভাকদের তরফে বক্তব্য রাখেন গর্বিত অভিভাবক টোকন আলী। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন জেলা পরিষদ জামে মসজিদের ইমাম বায়েজিত হোসাইন। অনুষ্ঠানে বলা হয়, ২৮৪ জনের আবেদন পাওয়া যায়। ১৭০ জনকে নির্বাচিত করে বৃত্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে আবেদনের মধ্যে ১৪১ জনের আবেদন নির্ভূল হওয়ায় তাদের মধ্যে ৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকার চেক বিতরণ করা হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের রাজস্ব খাত থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ৬ বিজিবি অধিনায়ক বলেন, শিক্ষাবৃত্তি অবশ্যই শিক্ষার্থীদের আত্মিক পরিতৃপ্তি দেয়। শিক্ষাগ্রহণে আরো আগ্রহী করে। বিশেষ অতিথি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বলেন, আমাদের সময় শিক্ষাগ্রহণের পরিবেশ এখনকার মতো এতো সহজ ছিলো না। আমাদের প্রত্যায় ছিলো। দৃঢ় প্রত্যয় থাকলে পরিবেশ পরিস্থিতি যেমনই থাক সাফল্য পাওয়া অসম্ভব নয়। আজকের শিক্ষার্থীদের ওইভাবে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে, যেভাবে যোগ্যতা অর্জন করলে উপযুক্ত চেয়ারে বসে যথযথভাবে কর্তব্য পালন করা যায়। অনুষ্ঠানের সভাপতি জেলা পরিষদ প্রশাসক শেখ সামসুল আবেদীন খোকন তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করে দেশের কল্যাণে সর্বাধিক শিক্ষাকেই গুরুত্ব দিয়েছিলেন। কৃষি ও শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে দেশকে যখন প্রত্যাশিত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই ষড়যন্ত্রকারীরা সে গতি থামিয়ে দেয়। দীর্ঘদিন ধরে দেশ ছিলো অনেকটা স্থবির অবস্থায়। বিলম্বে হলেও জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা দেশের উন্নয়নে হাল ধরেছেন। তিনি একের পর এক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি হাতে নিয়ে দেশকে বিশ্ব দরবারে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এতেই থামলে চলবে না বলে তিনি নিদের্শনা দিয়েছেন। বলেছেন, উন্নতির শিখরে নিতে হবে দেশকে। সে লক্ষ্যে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছি। আজকের শিক্ষার্থীরা আগামী দিনে দায়িত্ব পালন করবে।
আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান সমৃদ্ধ করার জন্য জেলা পরিষদ প্রশাসক সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে জেলা পরিষদের সকল কর্মকর্তাসহ সকল সহকর্মীদের আন্তরিকতার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করে অভিভূত হয়েছেন বলে অনুভূতি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, জেলা পরিষদের রাজস্ব খাত থেকে প্রতি বছর যে শিক্ষাবৃত্তি দেয়া হয় তা শিক্ষার্থীপ্রতি খুব একটা বেশি না হলেও এ বৃত্তি পেয়ে শিক্ষার্থীরা অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারবে বলে বিশ্বাস। আমি যখন ছাত্র ছিলাম, তখন এ ধরণের বৃত্তি কতটা কাজে লাগে তা জানি বলেই প্রতি বছর যাতে চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রকৃত মেধাবী আবেদক শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবৃত্তি পায় তা নিশ্চিত করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। সকলের সহযোগিতার ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে আরও বেশিজনের এবং বেশি পরিমাণের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করার উদ্যোগ নেয়া সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির পাশাপাশি উপস্থিত সকল শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাংবাদিকদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানানো হয়।