আলমডাঙ্গার কলেজপাড়ায় এক সন্তানের জননীর রহস্যজনক মৃত্যু
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার কলেজপাড়ায় এক সন্তানের জননীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় স্বামী আলম হোসেনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। রাতভর মৃত স্ত্রীর লাশ পাশে নিয়ে বসে সময় কাটিয়ে সকালে থানায় হাজির হয়ে পুলিশকে তার স্ত্রী আত্মহত্যার কথা জানায় আলম। আলম হোসেন বাদী হয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন। স্ত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে আত্মহত্যাকে রহস্যজনক বলায় আলমকে আদালতে পাঠানো হয়। গতকাল বুধবার সকালে কলেজপাড়ার বিদ্যুৎ অফিসের পাশের ভাড়া বাসা থেকে পুলিশ গৃহবধূ খাদিজা খাতুনের লাশ উদ্ধার করে। গৃহবধূর পিতার পরিবারের দাবি তাদের মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এঘটনায় খাদিজার পরিবারের লোকজন আলম হোসেনের উপর চড়াও হন। তাকে মারধরের চেষ্ঠা চালান। এ সময় গণপিটুনির হাত থেকে বাঁচাতে পুলিশ আলম হোসেনকে পাশের একটি বাড়ির ভেতর নিয়ে যায়। এরপর আলম হোসেনকে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। নিহত খাদিজা খাতুন (২৭) উপজেলার হারদি ইউনিয়নের কৃষি-ক্লাবপাড়ার ভিকু মিয়ার মেয়ে। অভিযুক্ত স্বামী আলম হোসেন (৩২) একই উপজেলার কালিদাসপুর ইউনিয়নের মোনাকষা গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে। স্থানীয়রা জানান, এক বছর আগে খাদিজা-আলমের বিয়ে হয়। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। এটা দুজনেরই তৃতীয় বিয়ে। খাদিজা তার স্বামীর সঙ্গে পৌর এলাকার কলেজপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। গত পরশু মঙ্গলবার দিবাগত রাতে খাদিজাকে মারধর করে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঘরের জানালার গ্রিলে ঝুলিয়ে রাখেন তার স্বামী। সারারাত মরদেহ পাহারা দিয়ে ভোরে প্রতিবেশীদের জানান, তার স্ত্রী গলায় ফাঁস লাগিয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছেন। তারপর তিনি নিজেই থানায় উপস্থিত হয়ে স্ত্রীর ‘আত্মহত্যা’র ঘটনাটি পুলিশকে জানায়। প্রায় এক বছর আগে কালিদাসপুর ইউনিয়নের মোনাকষা গ্রামের পাখিভ্যান চালক আলম হোসেনের সাথে প্রেম করে বিয়ে করেন খাদিজা খাতুন। বিয়ের পর জানতে পারেন আলম হোসেনের আরও একজন স্ত্রী রয়েছে। জানা গেছে, স্বামী পরিত্যক্তা খাদিজা খাতুনের ৯ বছর পূর্বে চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় বিয়ে হয়। তার একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। সেই সংসার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে খাদিজা খাতুন আলম হোসেনকে বিয়ে করে। নিহত খাদিজার পিতা ভিকু মন্ডল জানান, তার মেয়ে খাদিজা গত ১ বছর পূর্বে মোনাকষা গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে আলম হোসেন’র সাথে প্রেমের সম্পর্ক করে পালিয়ে বিয়ে করে। বিয়ের পর জানতে পারে আলম হোসেনের আরও একজন স্ত্রী রয়েছে। গত কয়েক মাস আগে তারা আলমডাঙ্গায় বাসা ভাড়া করে বসবাস করছিল। কারণে-অকারণে আলম স্ত্রী খাদিজাকে প্রায় মারধর করতেন বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা। খাদিজার পিতা আরও জানান, সকালে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানতে পারি খাদিজা মারা গেছে। আমার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে আলম হত্যা করেছে বলে তিনি জানান। ভাড়াবাসার মালিকের স্ত্রী নার্গিস আক্তার খুশি জানান, গত অক্টোবর মাসে তারা বাসা ভাড়া নেয়। ঘটনার দিন ভোররাত ৬টার দিকে আলম হোসেন আমাদের বাসায় নক করে বলে খাদিজা মারা গেছে। সে পুলিশে সংবাদ দিতে যাচ্ছে। পরে আমরা নিচে এসে দেখতে পায় মেঝেতে খাদিজার লাশ পড়ে আছে। প্রতিবেশিরা জানান, খাদিজা খাতুনের মৃত্যু রাত ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে হয়ে থাকতে পারে। সে সময় কান্নাকাটির আওয়াজও শুনতে পায় প্রতিবেশিরা। প্রায় প্রতি রাতেই এরকম মারধর ও কান্নাকাটির আওয়াজ শুনতে পাওয়ায় গতরাতের আওয়াজকে প্রতিবেশিরা গুরুত্ব দেননি। রাত দেড়টার পর থেকে বাকি রাত স্ত্রীর লাশের পাশে বসে সকালের অপেক্ষা করতে থাকেন আলম হোসেন। সকাল হলেই তিনি থানায় হাজির হয়ে পুলিশকে তার স্ত্রীর আত্মহত্যার কথা জানান। পুলিশ আলম হোসেনের ভাড়াবাড়িতে গিয়ে খাদিজার লাশ উদ্ধার করে মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। এদিকে, খাদিজা খাতুনের পিতার পরিবার তাদের মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন। আলমডাঙ্গা থানার ওসি শেখ গণি মিয়া জানান, আলমডাঙ্গা কলেজপাড়ার বিদ্যুৎ অফিসের পাশে খাদিজা নামে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছে। এমন সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। লাশের সুরতাহাল রিপোর্ট সম্পন্ন শেষে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। খাদিজা খাতুনের স্বামী আলম হোসেনকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।