কাজের বিনিময খাদ্য কর্মসূচির চাল বলে দাবি করা হলেও প্রকল্প চেয়ারম্যানদের বক্তব্যে অসঙ্গতি
স্টাফ রিপোর্টার: কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির এক হাজার ২৬৬ বস্তা সরকারি চাল জব্দ করে গোডাউন সিলগালা করে তদন্ত শুরু হয়েছে। চাল জব্দের সময় গুদামের মালিক নজরুল ইসলাম বলেন, এসব চালের বিষয়ে মেহেরপুর-২ গাংনী আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন ‘ভালো জানেন।’ এরই প্রেক্ষিতে ঢাকার একটি নিউজপ্যাটেল বিস্তারিত জানতে চাইলে এমপি সাহিদুজ্জামান খোকন বলেন, “কতজন কত কিছুই বলবে। সব কিছু বিশ্বাস করলে কি হবে?” তিনি জানান, প্রকল্প চেয়ারম্যানরা সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নে ৬০ ভাগ চাল বিক্রি করতে পারেন। তবে বরাদ্দের ‘পুরো চাল কীভাবে বিক্রি হল তা জানিনা। অপরদিকে চাল জব্দ করে চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর প্রশাসনের তরফে পৃথক দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক। চুয়াডাঙ্গা শহরের চাল ও গম ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামের সাতগাড়ীতে ২টি খাদ্যগুদাম রয়েছে। রোববার রাতে ট্রাকে করে নিয়ে ওই গুদামে সরকারি চাল রাখা হয়। একটি গুদামে ৬০০ এবং অপরটিতে ৬৬৬ বস্তা চাল রাখা হয়। সরকারি সিল মারা খাদ্য অধিদপ্তরের প্রতিটি ৩০ কেজি ওজনের চালের বস্তার গায়ে লেখা রয়েছে-শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ।’ ঘটনা জানাজানি হলে সোমবার সকালে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন ও জেলা খাদ্য অধিদপ্তরের একটি দল তল্লাশি অভিযান চালিয়ে এ চাল জব্দ করে। গুদামটির মালিক নজরুল ইসলাম বলেন, “গাংনী সাংসদের অনুকূলে বরাদ্দের এ চালের মালিক বিক্রয়সূত্রে চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার ব্যবসায়ী গৌতম ও অশোক। তারা মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে চালগুলো উত্তোলন করে এখানে রেখেছে।” তবে নজরুলের কথায় অসংগতি ও তথ্য গোপনের আলামত পেয়েছেন মন্তব্য করেছেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিকুর রহমান। এই ১২৬৬ বস্তায় ৩৭ টন চালের একটা হিসাব দিতে গিয়ে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান জানিয়েছেন, এ চাল এমপি বিভিন্ন প্রকল্পের চেয়ারম্যানের নামে বরাদ্দ দিয়ে থাকেন। প্রকল্প চেয়ারম্যানরা সাধারণত ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা হয়ে থাকেন। এমপি সাহিদুজ্জামানের নামে বিশেষ বরাদ্দে প্রায় ১৬০ টন কাবিখার চাল রয়েছে। তিনি বলেন, সেই চালের প্রথম কিস্তি এটা। খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা আরো জানান, প্রথম কিস্তি এই ৩৭ টন চালের তিন টন গাংনী উপজেলার কাথুলী ইউপি সদস্য ভাবিবরন নেছার নামে, ৩ দশমিক ৫৫ টন মটমুড়া ইউপি সদস্য লাভলী খাতুনের নামে, ৬ টন মটমুড়া ইউপি সদস্য সাজাহান আলীর নামে, ৬ টন ধানখোলা ইউপি সদস্য বসির উদ্দীনের নামে, ৯ টন বামুন্দী ইউপি সদস্য জিয়ারুল ইসলামের নামে, ৬ টন বামুন্দী ইউপি সদস্য নাজমিন সুলতানার নামে এবং ৩ টন বামুন্দী ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
গত রোববার (৭ জুন) সকালে এসব প্রকল্পর সভাপতিরা উপস্থিত থেকে চাল বুঝে নিয়ে ট্রাকে করে নিয়ে যান দাবি করেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা মতিয়ার। তবে তার দাবি অস্বীকার করেছেন এসব প্রকল্পের কয়েকজন চেয়ারম্যান। গাংনীর কাথুলী ইউপি সদস্য ভাবিবরন নেছা বলেন, তিন টন চাল বরাদ্দ হয়েছে শুনেছি। তবে তিনি শুধু স্বাক্ষর করেছেন এর বাইরে তিনি কিছু জানেন না জানিয়ে তিনি বলেন, “চালের মুখও দেখিনি।” মটমুড়া ইউপি সদস্য সাজাহান আলী জানান, তাকে ৫শ ফুটের একটি রাস্তার পিআইসি করেছিলেন এই এমপি। তিনি বলেন, সেই রাস্তার অনুকূলে ৬ টন চালের বরাদ্দের আবেদনে এমপি সাহেব সাক্ষর করিয়ে নিয়েছেন। এখন কোথায় কি হয়েছে, সেটা এমপি সাহেবই জানেন।
“আমি সরকারি গুদাম থেকে সরকারি কোনো চাল উত্তোলন করিনি।” খাদ্যগুদাম থেকে ১২ টন চাল তুলেছেন বলে জানান ধানখোলা ইউপি সদস্য বসির উদ্দীন। তবে তার নামে কাগজে কলমে বরাদ্দ রয়েছে ছয় টন। দ্বিগুণ পরিমাণ চাল কীভাবে তুললেন জানতে চাইলে বসির বলেন, এসব এমপি সাহেব আর গুদাম কর্মকর্তাদের প্রশ্ন করলে সঠিক উত্তর পাবেন। এসব চাল তিনি স্থানীয় গম ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেছেন বলেও জানান।
এ ব্যাপারে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, বিষয়টি জানা মাত্রই তিনি ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন। “তদন্তে কোনো অনিয়ম ধরা পড়লে সে যে-ই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।” মেহেরপুরের ডিসি আতাউল গনি বলেন, “অনেক সময় পকেট কমিটির গঠন করে পুরো চালই আত্মসাৎ করা হয়। সরকারি বরাদ্দের পুরো চাল কীভাবে বাইরে গেল সেটা তদন্ত কমিটি খতিয়ে বের করবে। তদন্ত কমিটিকে আগামী বৃহস্পতিবার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন জেলা প্রশাসক ।