মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুরে প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সেই সাথে সচেতন মানুষের মাঝে বাড়ছে উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা। গেলো ২৪ ঘণ্টায় মেহেরপুর জেলায় করোনা আক্রান্ত একজন রোগি মারা গেছেন। নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৪১জন। আক্রান্তের হার শতকরা প্রায় ৩৬ ভাগ। এ পরিস্থিতিতে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে মেহেরপুরে ২ সপ্তাহের লকডাউন শুরু হয়েছে। কঠোরভাবে লকডাউন পালনে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। তবে সফলভাবে শহরে লকডাউন পালিত হলেও অধিকাংশ গ্রামে ছিলো না তৎপরতা।
একদিনে মেহেরপুর জেলায় করোনা আক্রান্ত একজন রোগী মারা গেছেন। তিনি জেলার গাংনী উপজেলার বাসিন্দা। প্রায় এক সপ্তাহ পূর্বে তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। এদিকে জেলায় নতুন করে ৪১ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে মেহেরপুর সদর উপজেলায় ২২ জন, গাংনী উপজেলার ১৩ জন ও মুজিবনগর উপজেলা ৬ জন রয়েছেন। এ নিয়ে বর্তমানে জেলায় মোট করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৮৩ জন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সিভিল সার্জন ডা. মোঃ নাসির উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মেহেরপুর সিভিল সার্জন অফিস আরো জানায়, ল্যাব থেকে ১১৩টি নমুনা পরীক্ষা শেষে সবগুলি রিপোর্ট মেহেরপুরে এসে পৌঁছে। এর মধ্যে ৪১ জন করোনা রোগি চিহ্নিত হয়েছেন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন মোট ৩৮৩ জন করোনা রোগির মধ্যে সদর উপজেলার বাসিন্দা ১৫৪ জন, গাংনী উপজেলার বাসিন্দা ১৪৫ জন ও মুজিবনগর উপজেলার বাসিন্দা ৮৪ জন । এছাড়া ট্রান্সফার্ড হয়েছেন ১০৫ জন। এদের মধ্যে সদর উপজেলার ৬৪ জন, গাংনী উপজেলার ১৭ জন ও মুজিবনগর উপজেলার ২৪ জন রয়েছেন। এ ছাড়া এ পর্যন্ত সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এক হাজার ৫৩ জন । যার মধ্যে সদর উপজেলায় ৫৮৮ জন, গাংনী উপজেলায ৩৩৫ জন ও মুজিবনগর উপজেলায় ১৩০ জন রয়েছেন। এছাড়া এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৩৮ জন। যার মধ্যে (নতুন একজন সহ) সদর উপজেলায় ১৩ জন, গাংনী উপজেলার ১৬ জন ও মুজিবনগর উপজেলার ৯ জন রয়েছেন।
এদিকে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় দফায় উদ্বেগজনক হারে সংক্রমণের প্রেক্ষিতে মেহেরপুর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের জনসচেতনতা ও প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে। ‘মাস্ক পরার অভ্যেস, করোনামুক্ত বাংলাদেশ’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে মেহেরপুর পুলিশের উদ্যোগে সাধারণ মানুষের মধ্যে শতভাগ মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতকরণে সচেতনতামূলক কার্যক্রমসহ জনসাধারণের মাঝে মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে মেহেরপুর পুলিশের একটি দল মেহেরপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালান। অযাথা ঘরের বাইরে বের না হওয়ার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়। একই সাথে সকলকে মাস্ক ব্যবহার করার জন্য আহ্বান জানানো হয়।
এদিকে মেহেরপুরে ১৪ দিনের লকডাউন সফল করতে সরকারি ঘোষণা মোতাবেক ওষুধের দোকান সারাদিন, খাবারের দোকানসহ নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বেলা ১২টা পর্যন্ত আর বাকী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সারাদিন বন্ধ ছিলো।
লকডাউন কার্যকর করতে মাঠে মেহেরপুর প্রশাসনের ভূমিকা ছিল চোখে পরার মত। এদিন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদুল আলমের নেতৃত্বে সদর থানা পুলিশের সহযোগিতায় মেহেরপুর শহরের হোটেল বাজার মোড় থেকে শুরু করে সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযান চলাকালে মাস্কবিহীন চলাচলকারীদের সতর্ক করে দেয়া হয়। মেহেরপুর সদর থানার ওসি (তদন্ত) আমিরুল ইসলাম এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এদিকে মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিথিলা দাসের নেতৃত্বে অপর একটি দল শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালান। তবে বিকেল থেকে রাত অবধি গ্রাম-গঞ্জের চায়ের দোকানসহ সব ধরণের দোকান-পাঠ খোলা ছিলো।