কাদামাটির রাস্তার ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট : ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা
গাংনী প্রতিনিধি: ইটভাটায় মাটি বহনকারি ট্রলির ফেলে দেয়া মাটি রাস্তায় পড়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে মেহেরপুরের বিভিন্ন এলাকার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। একদিনের গুড়িগুড়ি বৃষ্টির পানিতে রাস্তাগুলো পরিণত হয়েছে মরণ ফাঁদে। বুধবার সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে কাদামাটির রাস্তার ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন পথচারিরা। পথচারিদের অভিযোগ কৃষি জমির মাটি কেটে ভাটাই বিক্রি করার ধুম চলছে। সেই মাটি বহনের সময় জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় মাটি পড়লেও পরিস্কার করেনি ভাটামালিক কিংবা ট্রলি চালকেরা। এর খেসারত দিতে হচ্ছে পথচারিদের। অনেকেই সাইকেল ও মটরসাইকেল চালাতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। প্রশাসনকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলেও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। তবে প্রশাসন বলছে বিষয়টি সম্পর্কে আমরা বিভিন্নভাবে অবগত হয়েছি; দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
জানাগেছে, মেহেরপুর জেলার তিন উপজেলায় ১০৩টি ইটভাটা রয়েছে। এসকল ইটভাটা শীতের শুরুতেই মাটি কেনা শুরু করেছে। জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমির ওপরের (টপ সয়েল) কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্কেবিটর মেশিন দিয়ে মাটিকাটা হয়। উক্ত মাটি ট্রলি দিয়ে ভাটায় বহন করে নিয়ে যায় ট্রলি চালকেরা। মাটি বহনের সময় ট্রলির মাটি রাস্তায় পড়ে। গত মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হয় গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। বৃষ্টির পানিতে পাকা রাস্তাগুলো পিচ্ছিল হয়ে মারণফাঁদে পরিণত হয়। মেহেরপুর সদর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের শাকিল আহম্মেদ জানান, শ্যামপুর কালিগাংনী মাঠের মধ্যে একসপ্তাহ যাবত পুকুর খননের কাজ করছে মাটি বিক্রেতারা। পুকুর খননের জন্য কোনো অনুমতি নেয়া হয়নি। সেই পুকুরের মাটি বিক্রি হচ্ছে গাংনী উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রামের নাজমুল ইসলামের মা ইট ভাটায়। শ্যামপুর থেকে নওয়াপাড়া-কুলবাড়িয়া রাস্তাটি এখন মারণফাঁদ। তিনি তার ফেসবুক ওয়ালে রাস্তায় কাদামাটির একটি ছবিও পোস্ট করে প্রশাসনকে নজরে নিতে অনুরোধ করেছেন। তার দাবি গত বছরে শ্যামপুর কালিগাংনী মধ্যবর্তী স্থানে একই সাথে ৩টি পুকুর খননের ফলে এমন দুর্ভোগে পড়েছিলো স্থানীয়সহ পথচারিরা। এবার শীতের শুরু থেকেই পুকুর খনন কাজ শুরু হয়েছে। যার কোনো অনুমোদন নেয়া হয়নি। মুজিবনগর এলাকার চিত্র এমনই। গাংনী উপজেলার কুষ্টিয়া প্রধান সড়কের আকুবপুর এলাকায় রাস্তায় কাদামাটিতে যান চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছে। পথচারিদের সাথে কথা হলে গাংনীর ইদ্রিস আলী জানান, আমি সকালে মোটরসাইকেল নিয়ে কুষ্টিয়ায় রোগী দেখতে যাচ্ছিলাম। আকুবপুরের কাছাকাছি পৌঁছুলে পিচ্ছিল রাস্তায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রক্তাক্ত জখম হয়ে কুষ্টিয়াতে যেতে হয়েছে। ধানখোলা রাস্তায় পিচের রাস্তার ওপর কাদা পড়লে তার ওপর রাবিশ দেয়া হয়। তার ওপর আবারও কাদা পড়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। ধানখোলা গ্রামের রবিন আলী জানায়, গাংনী থেকে ধানখোলা রাস্তায় অন্তত তিনটি ভাটা রয়েছে। ভাটাগুলো বিভিন্ন এলাকা থেকে মাটি বহন করে নিয়ে আসছে। একবার অভিযোগ করা হলে কাদা পরিস্কার না করেই কাদার ওপর রাবিশ ফেলে কাদা ঢেকে দেয়া হয়েছিলো। তার ওপর আবারো কাদা পড়ে। গতকালের বৃষ্টিতে আবারও এই জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি চলাচলের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, গাংনীর এক একটি রাস্তা যেনো মারণফাঁদ। বিভিন্ন এলাকার শত শত পথচারিদের অভিযোগের অন্ত নেই। তাদের দাবি জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় মাটি বহন বন্ধ না হলে অনেকেই প্রাণ হারাবেন।
ইটভাটা মালিক শান্ত জানান, আমরা মাটি বহনের সাথে সাথে রাস্তা পরিস্কার করে রাখি। কিন্তু গ্রাম অঞ্চলের অনেক ভাটা মালিকেরা গুরুত্ব দেয় না। তাদের জন্য আমাদের বদনাম। গাংনী ইটভাটা মালিক সমিতির নেতা মনিরুজ্জামান আতু বলেন, আমরা বিষয়টি দেখেছি এবং প্রতিটি ইটভাটা মালিককে তাদের স্ব-স্ব এলাকার রাস্তা পরিস্কারের নির্দেশ দিয়েছি। যারা করবে না তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন আইনগত ব্যাবস্থা নেবেন।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী খানম বলেন, অনেকেই আমাকে ফোন করেছিলেন। ভাটা মালিক সমিতির নেতাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দ্রত সময়ের মধ্যে রাস্তা পরিস্কার করার জন্য। যদি না করে তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড.মুনসুর আলম খানকে জনদুর্ভোগের বিষয়ে করনীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি।