স্টাফ রিপোর্টার: বৈশাখের প্রখর রোদে প্রকৃতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। মেঘহীন আকাশ, বৃষ্টির দেখা নেই। প্রকৃতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করছে। অস্বাভাবিক খরতাপে বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রচ- দাবদাহে আম-লিচুর গুটি ঝরে পড়ছে। ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেচনির্ভর বোরো ধান নিয়েও কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। বিদ্যুতের লোডশেডিং-ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া নানা রকম রোগ-বালাই ছড়িয়ে পড়ছে। গতকাল বুধবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো চুয়াডাঙ্গা ও ঈশ্বরদীতে ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ২৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া রাজশাহীতে ৪২ দশমিক ৫, কুমারখালীতে ৪১ দশমিক ৭ ও যশোরে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো টেকনাফে ২২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের চার জেলায় প্রচ- তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া চার বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বইছে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ। চলতি এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই গরম পড়তে শুরু করেছে। প্রথমে মৃদু থেকে মাঝারি, পরে বিভিন্ন এলাকায় প্রচ- তাপপ্রবাহ শুরু হয়। বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় ঘাম কম হলেও শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করতে থাকে। গত রোববার থেকে বাতাসে আর্দ্রতা বাড়তে থাকে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। পঞ্চগড়, রংপুর, নীলফামারী, মৌলভীবাজার, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলা এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশসহ ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতে তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। টানা তীব্র তাপদাহে চুয়াডাঙ্গার জনজীবন বিপর্যস্ত। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না কেউই। একদিকে প্রচ- রোদ, অন্যদিকে রমজান মাস-এই দুইয়ে মানুষের জীবন হাঁসফাঁস অবস্থা। দীর্ঘদিন ধরেই চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে বয়ে চলছিলো তীব্র তাপপ্রবাহ। সেই তীব্র তাপপ্রবাহ এখন প্রকট আকার ধারণ করে রুপ নিয়েছে অতি তাপপ্রবাহে। তীব্র তাপদাহে এ জেলার খেটে খাওয়া মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। তীব্র গরম ও রোদের তাপের কারণে শ্রমিক, দিনমজুর, ভ্যান-রিকশা চালকরা কাজ করতে না পেরে অলস সময়ও পার করছেন। একটু প্রশান্তির খোঁজে গাছের ছায়া ও ঠা-া পরিবেশে স্বস্তি খুঁজছে স্বল্প আয়ের মানুষরা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে রাস্তা ঘাটে লোকজনের চলাচল সীমিত হয়ে পড়ছে। আবার অনেকে জরুরি প্রয়োজন ও জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রচ- তাপদাহ উপেক্ষা করে কাজে বের হচ্ছেন। সেই সঙ্গে হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মোমিনপুর বাজারের ভ্যানচালক লিপু মিয়া বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত চার্জার ভ্যান চালাতে কষ্ট নেই। কষ্ট এ রোদে যাত্রী নিয়ে যেতে। বেশি তাপের (গরম) কারণে মানুষ বের হয় না। এজন্য আয়-রোজগার কমে গেছে।’ আলী হোসেন মার্কেটের ইলেকট্রনিক মিস্ত্রি শিলন আলী বলেন, ‘গরমে নাভিশ্বাস অবস্থা। মার্কেটে প্রচুর গরম থাকায় দিনের বেলা অনেকটা ফাঁকা থাকছে। তবে ঈদের কারণে জুতা-কাপড়ের দোকানে ভিড় আছে।’ ১৮দিন ধরে এ অবস্থা বিরাজ করছে। স্মরণকালের এমন গরমে মানুষসহ হাঁসফাঁস করছে পশুপাখি। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না অনেকেই। একদিকে খরতাপে হাঁসফাঁস, অন্যদিকে ঘন ঘন লোডশেডিং। এতে মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, বুধবার চুয়াডাঙ্গায় এ মরসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এ অবস্থা আরও ২-৩ দিন অব্যাহত থাকবে। আগামী ২২ এপ্রিলের পর অবস্থার উন্নতি হতে পারে। তীব্র গরমে ও তাপদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ ও স্থবির হয়ে পড়েছে।