মাছ ধরা ও খাওয়া থেকে বিরত থাকার উপজেলা প্রশাসনের শর্তকতা জারি : তদন্তের জন্য সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তাকে দায়িত্ব
স্টাফ রিপোর্টার: গত মধ্যরাত পর্যন্ত মাথাভাঙ্গা নদীতে নেমে মাছ ধরার উৎসবে মেতে ছিলেন অসংখ্য মানুষ। হঠাৎ করেই মাছ নদীর তীরবর্তী পানিতে খাবি খাচ্ছে দেখে গতকাল সোমবার দুপুর থেকে মাছ ধরা শুরু হয়। নদী তীরে শিশু কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সীদেরই ভীড় জমে। চুয়াডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনের ফেসবুক পেইজে উপজেলা নির্বাহী অফিসার একটি পোস্ট দিয়ে মাছ ধরা ও খাওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রথমে মুন্সিগঞ্জের কৃষ্ণপুর, আকন্দবাড়িয়া, হাতিকাটা, তালতলা হয়ে ইসলামপাড়ার পর যখন রহস্যবৃত পানির স্রোত চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের মাথাভাঙ্গা ব্রিজের নিকট পৌঁছুয় তখন রাত সাড়ে ৮টা। হঠাৎ করে মাথাভাঙ্গার পানি বিষাক্ত হলো কেন? কেউ কি বিষ দিয়ে মাছ শিকারের নৃশংসতায় মেতেছে। গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ প্রশ্নের জবাব মেলেনি। জবাব নেয়ার জন্য মৎস্য বিভাগের তরফে কিম্বা প্রশাসনের পক্ষে তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কিনা তাও নিশ্চিত করে জানা যায়নি। গতরাতে জেলা মৎস্য কর্মকর্তার সেল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
এলাকার একাধিকসূত্র বলেছে, সোমবার দুপুরে প্রথম আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জ অদূরবর্তী কৃষ্ণপুর নামকস্থানে মাথাভাঙ্গা নদীতে তেলের মতো কিছু একটা ভাসতে দেখা যায়। একই সাথে নদীর তীরবর্তী পানিতে ছোট বড় মাছ খাবিখাচ্ছে দেখে কেউ ঠেলাজাল, কেউ মশারির অংশ, কেউ শাড়ি কিম্বা গামছা নিয়ে মাথাভাঙ্গা নদীতে নেমে মাছ ধরতে শুরু করেন। মাথাভাঙ্গার স্র্রোত ক্রমশ হাজরাহাটির দিকে এলে একইভাবে মাছ খাবি খাচ্ছে দেশে মানুষের ঢল নামে। হাজরাহাটির পর আলুকদিয়া, আকন্দবাড়িয়া হয়ে স্রোত সন্ধ্যার দিকে পৌঁছুয় হাতিকাটা-তালতলায়। খবর ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষের মধ্যে যেমন কৌতুহল বাড়ে, তেমনই কেউ কেউ প্রশ্ন তুলে বলেন, নদীতে পাটজাগ দেয়ার কারণেই পানি বিষাক্ত হয়ে মাছ খাবি খেতে শুরু করেছে? নাকি কেউ বিষ দিয়ে মাছ ধরার ষড়যন্ত্র করেছে? জবাব না মিললেও গতরাত ১২টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মাথাভাঙ্গা নদীতে অসংখ্য মানুষকে মাছ ধরতে দেখা গেছে।
মাথাভাঙ্গা নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী বয়স্ক একাধিক ব্যক্তি বলেছেন, গত শতকের আশির দশকের একবার মাথাভাঙ্গার পানি দূষিত হতে দেখা যায়। এই সময়ই অনাবৃষ্টির কারণে নদীতে পাটজাগ দেয়ার হিড়িক পড়ে। নদীর পানি চরমভাবে দূষিত হয়ে সব রকমের মাছ ভেসে ওঠে। নদীর গভীরে মাটিতে শরীর ঢুকিয়ে রাখা কুচেও নদী তীরে খাবি খায়। ওই সময়ও মাছ ধরার হিড়িক পড়ে। তেমনই এবার হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত নই। এবার স্রোত এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে পানি দূষিত হওয়া এবং মাছ ভেসে ওঠার বিষয়টি সন্দেহজনক। পানি পরীক্ষা করে দেখে যদি বিষপ্রয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায় তা হলে মামলা রুজু করে তদন্ত করা প্রয়োজন। আর অনাবৃষ্টির কারণে নদীর পানি দূষিত হয়ে মাছ খাবি খাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হলে সংশ্লিষ্ট দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিষয়টি জানানো দরকার।
গতরাত সাড়ে ৯টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের মাথাভাঙ্গা ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে মাথাভাঙ্গা নদীর মাছ ধরার দৃশ্য দেখতে গেলে চোখে পড়ে অসংখ্য আলোর ঝলকানি। অধিকাংশ আলোই মোবাইলফোনের। কেউ কেউ হারিকেন নিয়েও মাছ ধরতে নেমেছেন মাথাভাঙ্গা নদীতে। টচলাইটের ব্যবহারও চোখে পড়েছে। কেউ ঠেলাজাল, কেউ গামছা, শাড়ি কিম্বা মশারি ছেড়া দিয়ে মাছ ধরছে দেখা গেলেও গতরাতে অবশ্য খুব বড় মাছ ধরাপড়ার খবর মেলেনি। তবে দিবালোকে যেসব এলাকায় মাছ ধরার হিড়িক পড়ে সেখানে ছোট থেকে মাঝারি মাছ ধরা পড়েছে বলে অনেকেই জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সী উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, মাথাভাঙ্গা নদী আমাদের প্রাণের সাথে মিশে আছে। এই নদীর মাছ হঠাৎ করে মারা যাওয়ার কারণ আমরা এখনো জানতে পারিনি। এটা কি প্রাকৃতিক সমস্যা? নাকি নদীতে কোনো বিষপ্রয়োগের ঘটনা ঘটেছে। তা অতি দ্রুত তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এদিকে, গতকাল সোমবার রাতে চুয়াডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনের ফেসবুক পেইজে উপজেলা নির্বাহী অফিসার একটি পোষ্ট দিয়ে মাছ ধরা ও খাওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি লিখেছেন, মাথাভাঙ্গা নদীতে মাছ ভেসে উঠছে। এটা কোনো সাধারণ বিষয় নয়। মাছ ধরা ও খাওয়া থেকে সকলকে অনুরোধ করা হলো। চুয়াডাঙ্গা সদর, আলমডাঙ্গা ও দামুড়হুদা এলাকায় এ অস্বাভাবিক ঘটনা লক্ষ্য করা গেছে। ঘটনাটি তদন্তের জন্য সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সবাইকে সর্তক থাকার অনুরোধ জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম ভূইয়া।