কালীগঞ্জ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ ১০নং কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নের ৩ ও ৫ নং ওয়ার্ডে ভোট কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। ভোট গ্রহণের পরবর্তী দুই দিনের ব্যাবধানে ওই ওয়ার্ডের দুটি ভোটকেন্দ্র থেকে ব্যালটের পেপারের ২১টি মুড়ি বই উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধারকৃত মুড়ি বইগুলো থানা হেফাজতে নেয়া হয়েছে। এদিকে ভোট গ্রহণের পরদিন মুড়ি বই উদ্ধার নিয়ে ওই দু’টি ওয়ার্ডের পরাজিত ছয়জন মেম্বার সদস্য পদের প্রার্থী পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবীতে কালীগঞ্জ নির্বাচন কমিশন বরাবর পৃথক পৃথক লিখিত অভিযোগ করেছেন।
ওই ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মিলন হোসেন, নাছির উদ্দিন, রাজিব আহম্মেদ, সোহাগ হুসাইন ও মাজহারুল হান্নান লিটন নামে ৫ পরাজিত প্রার্থী লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, ওই কেন্দ্রের অসাধু প্রিসাইডিং অফিসার আবু সাইদ ভোটে কারচুপি করেছেন। তিনি অপর মেম্বার সদস্য ফুটবল প্রতীকের আবু জাফর আলীর নিকট থেকে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে ব্যালট কারচুপির মাধ্যমে তাকে বিজয়ী করান। অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, ভোটের পরদিন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুপুর ২টায় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার আবু সাইদের রুমের ড্রয়ার খুললে ৮টি কাটা ব্যালটের মুড়ি বই দেখতে পান। এ সময় তিনি বিষয়টি জনপ্রতিনিধিসহ সকলকে অবহিত করলে মেম্বার সদস্য প্রার্থীগণ সেখানে হাজির হন। এর কিছুসময় পরই সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং অফিসার আবু সাইদ মোটরসাইকেল নিয়ে কেন্দ্রে এলে উৎসুক জনতা তাকে ঘেরাও করেন। পরিস্থিতি উতপ্ত হওয়াতে গ্রামবাসীরা পুলিশে খবর দেয়। এরপর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মুড়ি বই জব্দ ও প্রিসাইডিং অফিসারকে থানাতে নিয়ে আসেন। প্রার্থীদের অভিযোগ, ওই প্রিসাইডিং অফিসার গোপনে ওই বই ব্যালটে আবু জাফরের ফুটবল প্রতীকে সীল মেরে তাকে বিজয়ী করিয়েছেন। তারা এমন অনিয়মের সুষ্ঠু বিচারসহ পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবী জানান।
এদিকে অনুরূপভাবে ওই ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার সদস্য প্রার্থী কোরবান আলী তার কেন্দ্রে ভোটের ফলাফলে অনিয়মের অভিযোগ তুলে পুনঃগননার দাবী করেছেন।
অনুরুপভাবে মঙ্গলবার ৫নং ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্র এসবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে আরো ১৩টি মুড়ি বই উদ্ধার হয়েছে। অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়াদুদ স্কুল খুলে রুমের মধ্যে মুড়ি বইগুলো দেখতে পেয়ে প্রথমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অবহিত করেন। এরপর বিষয়টি তিনি থানা পুলিশে অবহিত করলে পুলিশ মুড়ি বইগুলো থানায় আনতে বলেন। পরে তিনি বইগুলো থানায় জমা দিয়ে আসেন।
৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার সদস্য পদের পরাজিত প্রার্থী কুরবান আলী অভিযোগে জানান, তার কেন্দ্রের প্রিসাইডিং ফিরোজ মামুন ভোট কারচুপি করে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী রাশেদুল ইসলামকে বিজয়ী করেছেন। এজন্য তিনিও পুনঃভোট দাবী জানিয়ে জেলা প্রশাসক ও নির্বাচন কমিশন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ওই ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার কালীগঞ্জ রুপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার আবু সাইদ জানান, ভোট শেষে তড়িঘড়ি করে ভোটের মালামাল বুঝ করতে গিয়ে ৮টি মুড়ি বই ভুল করে সেখানে ফেলে এসেছিলেন। পরদিন তিনি সেটা উদ্ধার করে এনে থানায় জমা দিয়েছেন। তবে, ঘুষ নিয়ে ভোটে অনিয়ম বা কারচুপির বিষয়টি সত্য নহে।
উক্ত ইউনিয়নের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার উপজেলা সমাজসেবা অফিসার কৌশিক আহম্মেদ জানান, কয়েকজন প্রার্থী অভিযোগপত্র নিয়ে তার কাছে এসেছিলো। তাদের অভিযোগে দাবির বিষয়টি আমাদের সমাধান করার একতিয়ার নেই। এমন বিষয়টি সমাধান করার মালিক একমাত্র ট্রাইব্যুনাল।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিসার আলমগীর হোসেন জানান, ভোটগ্রহণ শেষে প্রিসাইডিং অফিসারগণ ভুলবশত মুড়ি বইগেুলো সেখানে ফেলে এসেছিল। পরে মুড়ি বইগুলো উদ্ধার হয়েছে। তবে, এর বাইরে অন্য কিছুই নয় বলে তিনি যোগ করেন।
কালীগঞ্জ থানার ওসি মাহফুজুর রহমান মিয়া জানান, মুড়ি বই উদ্ধারের খবর পেয়ে তিনি সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে বইগুলো জব্দ করে থানায় এনেছেন। দু’দিনে উদ্ধার হওয়া মুড়ি বইগুলি জব্দ করে থানাতে জিডি এন্টি করা হয়েছে।