বাসের সাথে অ্যাম্বুলেন্সের ধাক্কায় বাবা-ছেলেসহ নিহত ৩ : চালকসহ মৃত্যুশয্যায় দুজন

স্টাফ রিপোর্টার: অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় পৌঁছুনোর আগেই মৃত্যু হয়। স্ত্রীর মরদেহ নিয়ে ওই অ্যাম্বুলেন্সেই ফিরছিলেন বৃদ্ধ গোলাম রসুল। ফেরার পথেই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান গোলাম রসুল ও তার ছেলেসহ তিনজন। আকিজ টেক্সটাইল মিলের বাসের সাথে মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের ধাক্কায় তাদের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুজন। গতকাল সোমবার সকাল ৮টার দিকে মানিকগঞ্জের গ্লোরা বাস্ট্যান্ড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। হতাহতদের সকলেই চুয়াডাঙ্গার বাসিন্দা।
নিহতরা হলেন, দামুড়হুদার জুড়ানপুর ইউনিয়নের মজারপোতা গ্রামের মৃত দীন মোহাম্মদ ম-লের ছেলে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম রসুল (৭৫), তার ছেলে গোলাম সোহরাব শিপলু (৪৫) ও অ্যাম্বুলেন্সের হেলপার চুয়াডাঙ্গা শহরের দক্ষিণ হাসপাতালপাড়ার আব্দুল আজিজ ওরফে মোহাম্মদ পুটের ছেলে শাহাবুল (২০)। এছাড়াও দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন গোলাম রসুলের মেয়ে বিথি খাতুন (৪০) ও চুয়াডাঙ্গা শহরের গুলশানপাড়ার ইসমাইল হোসেনের ছেলে অ্যাম্বুলেন্স চালক সাইফুল ইসলাম (২৪)।
জানা গেছে, দামুড়হুদার মজারপোতা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিহত গোলাম রসুলের স্ত্রী হাজেরা খাতুন (৬৫) অসুস্থ ছিলেন। গত রোববার দামুড়হুদার চিৎলা নিউ ডিজিটাল হসপিটাল ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি দেখা দেয়। সেখান থেকে হাজেরা খাতুনকে চিকিৎসার জন্য ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় তথা পিজি হাসপাতালে রেফার করেন চিকিৎসক। রোববার রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল এলাকা থেকে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন রোগীর স্বজনরা। সাথে ছিলেন রোগী হাজেরা খাতুনের স্বামী গোলাম রসুল, ছেলে গোলাম সোহরাব শিপলু, মেয়ে বিথি খাতুন।
হাজেরা খাতুনকে নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার পথে মানিকগঞ্জ অতিক্রম করার কিছুক্ষণ পরই তার মৃত্যু হয়। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্স ঘুরিয়ে মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তারা। সকাল ৮টার দিকে মানিকগঞ্জ জেলার গ্লোরা বাসস্ট্যান্ড এলাকার হাকিম স্টোরের সামনে পৌঁছুলে সেখানে থাকা আকিজ টেক্সটাইল মিলসের শ্রমিক পরিবহন করা বাসের সাথে অ্যাম্বুলেন্সের ধাক্কা লাগে। এতে দুমড়েমুচড়ে যায় মরদেহ ও স্বজনদের বহন করা অ্যাম্বুলেন্সটি। পুলিশ স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে হাজেরা খাতুনের ছেলে গোলাম সোহরাব শিপলু ও অ্যাম্বুলেন্সের হেলপার শাহাবুলকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া গুরুতর আহত হন গোলাম রসুল, তার মেয়ে বিথি খাতুন, অ্যাম্বুলেন্স চালক সাইফুল ইসলাম।
হাসপাতালসূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনার পর ৬ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়। তাদের মধ্যে হেলপারসহ দুজনের আগেই মৃত্যু হয়েছে। আহত অবস্থায় চিকিৎসা দেয়া হয় গোলাম রসুল, বিথি খাতুন, সাইফুল ইসলাম ও তায়িবা নামের আরও এক নারীকে। আহত তায়িবা দর্শনার দোস্তগ্রামের হাফিজুর রহমানের স্ত্রী। তবে নিহতদের সাথে তার সম্পর্ক নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গুরুতর জখম ও আহত গোলাম রসুল, বিথি খাতুন এবং সাইফুল ইসলামকে পঙ্গু হাসপাতালে রেফার করা হয়। এরপর বৃদ্ধ গোলাম রসুলের মৃত্যু হয়। এখনও মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন বিথি খাতুন ও সাইফুল ইসলাম। জুড়ানপুর প্রতিনিধি শরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, মরদেহ নিয়ে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের আরও দুজনের মুত্যর খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহত গোলাম রসুল ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। তার একমাত্র ছেলে নিহত গোলাম সোহরাব শিপলু স্কয়ার কোম্পানিতে চাকরি করতেন। জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন ছোট মেয়ে বিথি খাতুন। এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মানিকগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রউফ বলেন, দুর্ঘটনার কবলে পড়া বাস এবং অ্যাম্বুলেন্স আটক করা হয়েছে। এছাড়া এ ঘটনায় সড়ক পরিবহন আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাত ১২টার দিকে নিহত হেলপার শাহাবুলের লাশ নিজবাড়িতে পৌঁছায়। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তার পরিবারের লোকজন। শাহাবুলের অকাল মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গার জান্নাতুল মওলা কবরস্থানে তার দাফন হওয়ার কথা রয়েছে।
অপরদিকে, মজারপোতা গ্রামের একই পরিবারের তিনজনের মরদেহ আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টার সময় মজারপোতা মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন হবে বলে জানা গেছে।

Comments (0)
Add Comment