স্টাফ রিপোর্টার: ভূমি সংক্রান্ত সেবা পেতে সরকার যে সেবামূলক প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে তা তৃণমূল পর্যায়ে সকলকে জানানোর আহ্বান জানিয়ে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজি আলী আজগার টগর বলেছেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে জমি নিয়ে যেকোনো জটিলতা নিরসনে অবিস্মরণীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন। ঘরে বসেই মানুষ জমি সংক্রান্ত যে কোনো সেবা নিতে পারছেন। এ লক্ষ্যে শুরু হয়েছে সপ্তাহ ব্যাপী ডিজিটাল ভূমি সেবা।
ভূমি অফিসে না এসে ডিজিটাল ভূমি সেবা গ্রহণ স্লোগানকে সামনে নিয়ে গতকাল রোববার সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জেলা প্রশাসক মঞ্চের সামনে ডিজিটাল ভূমিসেবা সপ্তাহের অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন হাজি আলী আজগার টগর এমপি। বেলুন উড়িয়ে সপ্তাহের শুভ সূচনার পর উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগর টগর স্টোলগুলো ঘুরে দেখেন। কয়েকজন সেবাগ্রহণকারীর হাতে সেবামূলক সনদও তুলে দেন। উদ্বোধন আনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম (বিপিএম সেবা), জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান।
সহকারী কমিশনার হাবিবুর রহমানের উপস্থাপিত সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শারমীন আক্তার। তিনি ভূমি সপ্তাহের গুরুত্ব তুলে ধরে ভূমি সংক্রান্ত সেবা নিশ্চিত করতে সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের নানা পদক্ষেপের বর্ণনা গুরুত্বসহকারে তুলে ধরেন। বলেন, ভূমি আপনাদের মূল্যবান সম্পদ। যথাযথ রক্ষণা-বেক্ষণ ও ভবিষ্যত জটিতলা এড়ানোর স্বার্থে আপনার কর্তব্য মালিকানা অর্জনের সাথে সাথেই মিউটেশনের মাধ্যমে নিজের অংশের স্বত্বলিপি খতিয়ান সুনির্দিষ্ট করা। এজন্য ভূমি প্রশাসন আপনাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রধান করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। সরকার নির্ধারিত ফি এবং প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র জমা দিয়ে আপনি আপনার উপজেলা ভূমি অফিস থেকে নামজারি সংক্রান্ত যাবতীয় সেবা গ্রহণ করতে পারেন। এসব কার্যক্রম সহজতর করতে সরকার সর্বস্তরে স্বচ্ছ্বতার সাথে দায়িত্বপালনে সরকারি সকল কর্মকর্তা কর্মচারিকে নিদের্শনা দিয়েছে। প্রয়োজনে ঘরে বসেই ডিজিটাল মাধ্যমে সকল প্রকার সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।
উদ্বোধন আলোচনাসভায় বিশেষ অতিথি ছাড়াও বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি সরদার আল আমিন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হাজি আলী আজগার টগর এমপি বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারেই উল্লেখ করেছিলো ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে বাস্তবমূখি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলে দেশবাসীকে ঘরে বসেই সরকারি যাবতীয় সেবা নিশ্চিত করবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী উন্নয়নমূলক সকল কার্যক্রমের পাশাপাশি ভূমি সংক্রান্ত সকল প্রকার জটিলতা নিরসনে কথা রেখেছেন। ভূমি সপ্তাহ পালনের মাধ্যমে যেমন ভূমি সংক্রান্ত সেবা মানুষের ঘরে পৌছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে তেমনই স্লোগন দিয়ে বলা যাচ্ছে ‘চালু হলো ই নামজারি, টাউট দালালদের মাথায় বাড়ি রাখবা নিষ্কন্ট জমি বাড়ি, করবো সবাই ই-নামজারি।’
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান সকলকে ডিজিটাল ভূমি সেবা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, সঠিক সময়ে ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান নাগরিক দায়িত্ব। ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের দাখিলা মালিকানা বা জমির স্বত্ব প্রমাণের অন্যতম গ্রহণযোগ্য একটি দলিল। এ সেবা এখন ঘরে বসেই নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে সরকার। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা দূর হলে সমাজে হানাহানি বহুলাংশে হ্রাস পাবে। গ্রাম বাংলায় যতো বিরোধ বিশৃঙ্খলা তার অধিকাংশই জমি নিয়ে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম টোটন বলেন, সরকারি সেবামূলক কার্যক্রমের প্রচার প্রচারণা জেলা উপজেলা পর্যায় থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে নিতে হবে। এতে মানুষ সরকারি সেবামূলক পদক্ষেপের কথা জানতে পারবে। সেবা গ্রহণে জনগণ এগিয়ে আসবে। সফল হবে সরকারের উদ্যোগ।
আলোচনাসভা শেষে চুয়াডাঙ্গা জেলার শ্রেষ্ঠ ভূমি উপ-সহকারী হিসেবে জীবননগর পৌর ভূমি অফিসের আশরাফুল আলমকে, জেলার শ্রেষ্ঠ ভূমি সহকারী কর্মকর্তা হিসেবে সদর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের রেবেকা সুলতানাকে, জেলার শ্রেষ্ঠ সার্ভেয়ার হিসেবে আলমডাঙ্গা উপজেলার সার্ভেয়ার মো. সাফায়েতুল ইসলামকে, জেলার শ্রেষ্ঠ কানুনগো হিসেবে আলমডাঙ্গা উপজেলার একেএম আমিনুল ইসলামকে, জেলার শ্রেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে আলমডাঙ্গা সহকারী কমিশনার ভূমি রেজওয়ান নাহিদকে সম্মাননা সনদ ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এ সম্মাননা সনদ ও ক্রেস্ট তুলে দেন। এ সময় সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলার সকল সহকারী কমিশনার ভূমিসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই ভালো কাজ করছেন। শ্রেষ্ঠত্বের সনদ যাদেরকে দেয়া হলো এদের সাথে অন্যদের কাজের মানও প্রায় সমান। এরপরও সকলকে উৎসাহিত করার জন্য চূলচেরা বিশ্লেষণ। আগামীতে সকলকে আরও আন্তরিকভাবে সরকারি সেবামূলক কাজ করার অনুরোধ রইলো।
ভূমি সেবা পেতে এবং অভিযোগ করতে প্রয়োজনে ১৬১২২ নম্বরে অথবা ষধহফ.মড়া.নফ এবং পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে +৮৮ ০৯৬৯২-৩৯৬৯২২ নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে। যোগাযোগ করে ভূমি উন্নয়ন কর. ই নামজারি, খতিয়ান পর্চা, জমির ম্যাপ, অনলাইন শুনানি, ভূমি সেবা অ্যাপ, জলমহালের আবেদন, উত্তরাধিকার অ্যাপ, ভূমি সংক্রান্ত অভিযোগ জানাতে, ভূমি বিষয়ক পরামর্শ পেতে পারেন।