চলতি মরসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে ৪১ দশমিক ২ রেকর্ড : চুয়াডাঙ্গায় ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস
জহির রায়হান সোহাগ: চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের অধিকাংশ এলাকার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি তাপ প্রবাহ। গতকাল রোববার চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মরসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। শুধু চুয়াডাঙ্গারই রেকর্ড ভাঙেনি, চলতি মরসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছে। খুলনায় রোববার যে গরম ছিলো তা গত ৭ বছরে পড়েনি। রাজশাহীতেও তাপমাপা যন্ত্রের পারদ উঠেছে ৪০ এর উপরে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সন্ধ্যা ৬টায় সবশেষ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ মরসুমে এটাই চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। তিনি আরও জানান, গত কয়েক দিন থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রখর তাপের পাশাপাশি অতিরিক্ত বাতাসের আদ্রতা থাকায় গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে। মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এরকমই আভাস দেয়া হয়েছে।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস প্রতিদিন যে তাপমাত্রা রেকর্ড করছে গরম তার চেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে। সূর্যের গনগনে আঁচে হাসফাঁস করছে মানুষ। প্রচ- তাপদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে প্রাণিকুলও। অসহনীয় গরম থেকে একটু স্বস্তি পেতে অনেকেই আশ্রয় নিচ্ছেন গাছের ছাঁয়ায়। শহরে মানুষগুলো খুঁজচ্ছেন শীতাতপ নিয়োন্ত্রিত কক্ষ। যদিও চুয়াডাঙ্গায় বিদ্যুতের লোভোল্টেজের কারণে অনেকেই সে সুযোগ নিতে পারছেন না। প্রবাহমান দাবদাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন রোজাদারও। প্রখর রোদ আর গরম বাতাসে ঘরে বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। গরমে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন শিশু ও বয়স্করা। এতে হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়াসহ নানা ধরণের রোগীর সংখ্যা। তীব্র তাপদাহে খুব প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষগুলো। কর্মজীবী মানুষ বাইরে বের হলেই অতিরিক্ত ঘামে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। এখন স্বস্তির বৃষ্টির আশায় দিন গুনছেন সাধারণ মানুষ। অপরদিকে মাঠে চলছে ধান কাটা ঝাড়ার তোড়জোড়। তীব্র দাবদাহে কৃষকদের অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছেন। হিটস্টোকের ঝুঁকিও বেড়েছে। এদিকে চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্বরে কথা হয় রিকশা চালক আজম আলীর সাথে। তিনি জানান, “এমনিতে রোজার মাস। রোজামুখে রিকশা চালাই। তার উপর খুব গরমে শরীরটা খারাপ লাগছে। মনে হচ্ছে রোজা ভেঙে যাবে। এমন গরম কোনো বছর দেখা যায়নি।”
এদিকে আবহাওয়া অধিদফতর পূর্বাভাসে জানায়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা এবং খুলনা অঞ্চলের উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্ঠাংশসহ ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রংপুর, সিলেট ও বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। ৪৮ ঘণ্টায় সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। ৫ দিনের শুরুর দিকে বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। গতকাল রোববার দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিলো শ্রীমঙ্গলে ১৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দাবদাহে তথা তীব্র খরায় জরুরি কাজ না থাকলে বের হতে বারণ করছেন চিকিৎসকেরা। বেশিক্ষণ একটানা রোগে কাজ করলে হিটস্টোকের ঝুঁকি বাড়ে। রোজা রেখে বেশি রোদে বেশিক্ষণ কাজ করলে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফলে সকলকে বেশি বেশি সতর্ক হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের পর যশোরের তাপমাত্রাই দেশে সর্বোচ্চ। আর আট বছরের মধ্যে ঢাকায় এদিন ছিলো সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান বলেন, “দেশজুড়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এরমধ্যে বৃষ্টিহীন বৈশাখে সবচেয়ে গরম দিন গেলো রোববার। ২০১৪ সালের পর এটা সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড।” এর আগে ২০১৪ সালে চুয়াডাঙ্গায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিলো। একই বছর ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও ৪০ ডিগ্রিতে উঠেছিলো। গত দুই যুগে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠেছিলো যশোরে। তার আগে ১৯৯৫ সালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠেছিলো ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে রেকর্ড ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হয়েছিলো। থার্মোমিটারের পারদ চড়তে চড়তে যদি ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে, আবহাওয়াবিদরা তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলেন। উষ্ণতা বেড়ে ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে বলা হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ। আর তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়।