স্টাফ রিপোর্টার: আগামী কয়েকদিনে তাপমাত্রা বেড়ে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হয়ে তাপপ্রবাহ তীব্র আকার ধারণ করতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা। আগামী ১০দিনের মধ্যে বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনাও দেখছেন না তারা। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, আগামী ২০ এপ্রিলের পর বৃষ্টি হতে পারে। সেই পর্যন্ত তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এরই মধ্যে গরমে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। চুয়াডাঙ্গাসহ সারাদেশেই মানুষ গরমে কষ্ট পাচ্ছেন। গতকাল সোমবার তাপপ্রবাহের আওতা আরও বেড়েছে। গত রোববার দেশের পাঁচ বিভাগ ও এক জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছিলো। সোমবার পাঁচ বিভাগ ও চার জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। গতকাল সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। যা ছিল দেশের ও মরসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। গতপর রোববার ছিলো ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গরমের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কষ্ট একই সঙ্গে বাড়ছে। এদিকে, ধান ও আম রক্ষায় বাড়তি সেচের পরামর্শ দিয়েছে কৃষি অধিদফতর।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ বলেন, আগামী দু-তিনদিন পর দেশের কোনো কোনো স্থানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করতে পারে। আপাতত বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, বৃষ্টি হলেও তা ২০ তারিখের পরে হতে পারে। সেই পর্যন্ত তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। আমরা বলেছি, আগামী সাতদিন তাপপ্রবাহ থাকবে।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, আগামী ১৪ থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত খুলনা, রাজশাহী, ফরিদপুর, মাদারীপুর জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপ প্রবাহের প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। ১৪ থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, যশোর জেলার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। দেশের অন্যান্য জেলাগুলোর তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস তুলে ধরে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। এ সময়ে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান জানান, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগসহ দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম এবং নেত্রকোনা জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রিকে মৃদু, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রিকে মাঝারি ও ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। চুয়াডাঙ্গায় ধাই ধাই করে বাড়ছে তাপমাত্রা। এখানে প্রতিদিনই থাকছে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। সেই সঙ্গে প্রতিদিনই রেকর্ড করা হচ্ছে মরসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গা। যা ছিলো দেশের ও মরসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। চুয়াডাঙ্গায় প্রচ- রোদে দিনভর প্রাণিকূলের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা বিরাজ করছে। কবে নাগাদ তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে তাও এখনই আবহাওয়া অফিস বলতে পারছে না। প্রখর তাপের কারণে দিনের বেলায় ঈদের কেনাকাটায়ও ছেদ পড়েছে। দুপুরে দোকানপাটে তেমন ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, ‘চুয়াডাঙ্গায় প্রতিদিনই তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানকার তাপমাত্রার ধারেকাছেও থাকছে না অন্য জেলার তাপমাত্রা। গত ৮দিন ধরে প্রতিদিনই চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। যা এ মরসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। রোববারও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা এখানে। প্রায় প্রতিদিনই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকছে এখানে। বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ছিলো ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এভাবে প্রচ- দাবদাহে শ্রমিক শ্রেণির মানুষের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। চুয়াডাঙ্গা কোর্টপাড়ার তরমুজ ব্যবসায়ী আনারুল ইসলাম লিল্টন বলেন, ‘প্রচ- রোদে ঘরের বাইরে বেরুনো যাচ্ছে না। দোকানেও তেমন লোকজন আসছে না। দুপুরে ক্রেতা না থাকায় বাড়িতে থাকছি। বিকেলে বেচাকেনা করছি।’ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘প্রচ- রোদ আর গরমে মানুষের আইটাই অবস্থা। তাই ঈদের বাজারেও দুপুরে তেমন ক্রেতা আসছে না। বিকেলে ও সন্ধ্যায় কেনাকাটা জমছে।
এদিকে, ধান ও আম রক্ষায় বাড়তি সেচের পরামর্শ দিয়েছে কৃষি অধিদফতর। এ সময়ে তাপপ্রবাহের ক্ষতি থেকে ধান রক্ষার জন্য বোরো ধানের জমিতে পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখতে হবে। ধানের শিষে দানা শক্ত না হওয়া পর্যন্ত জমিতে অবশ্যই দুই-তিন ইঞ্চি দাঁড়ানো পানি রাখতে হবে। আমগাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত সেচ দিতে হবে। প্রয়োজনে গাছের শাখা-প্রশাখায় পানি স্প্রে করা যেতে পারে। সবজির জমিতে আগামী এক সপ্তাহে মাটির ধরণ বুঝে প্রয়োজন অনুযায়ী দুই থেকে তিনটি সেচের ব্যবস্থা করা। ফল ও সবজির চারাকে তাপপ্রবাহের ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য মালচিং ও সেচ নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি অধিদফতর।