জহির রায়হান সোহাগ/শামসুজ্জোহা রানা: চুয়াডাঙ্গা ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস। ছেলেবেলা থেকেই পাখিদের প্রতি যার রয়েছে অকৃত্রিম ভালোবাসা। পুলিশে চাকরির পরও পাখিদের সাথে অটুট রয়েছে তার বন্ধুত্ব। প্রতিদিন ভোরের সূর্য ওঠার আগেই ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিরা দেখা করতে আসে তার সাথে। আসে দল বেঁধে দিনের শুরুর আহারের আশায়। পাখিপ্রেমী মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসের চারপাশে তখন পাখিদের ডানা ঝাপটানোর শব্দ, আর কিচির মিচির ডাকে মুখরিত। চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্বর ও রেলবাজারে নিত্যদিনের অতিথি পাখিদের আপ্যায়নে নিমগ্ন হন তিনি। মাগুরা সদর উপজেলার চেঙ্গারডাঙ্গা গ্রামের প্রবিত বিশ্বাসের ছেলে মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস। ২ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে তিনি মেজো। পুলিশের চাকরিতে যোগদান করেন ৩ জুলাই ২০১১ সালে ঝিনাইদহে। সাতক্ষীরায় ট্রাফিকে বদলি হন ২০১৫ সালের প্রথম দিকে। পরে চুয়াডাঙ্গা ট্রাফিক পুলিশে বদলি হন ১৯ জানুয়ারি ২০১৭ সালে। সেই থেকেই চুয়াডাঙ্গার পাখিরা তার বন্ধু হয়ে ওঠে। করোনা মহামারীর প্রথম দিকে বন্ধ ছিল হোটেল রেস্তোঁরাগুলো। তখন থেকেই পাখিদের আহারের কথা ভেবে দোকান থেকে খাবার কেনেন তিনি। সকাল-দুপুর দু’বেলায় পাখিদের খেতে দেন চাল, শস্যদানা, চানাচুর।
এই শীতের প্রথম থেকেই অতিথি পাখিদের অভয়াশ্রমের কথা চিন্তা করে গাছের ডালে ডালে বাঁধতে শুরু করেন পাখিদের নীড়। পাখিদের অভয়ারণ্য গড়তে নিজ উদ্যোগে চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রতিটি গাছের ডালে নীড় বেঁধে দিচ্ছেন তিনি। ‘পুলিশের বিচরণ যেখানে, পাখিদের অভয়ারণ্য সেখানে’ এ স্লোগানে পাখিদের বাসা গড়ার উদ্যোগ নেন পুলিশ কর্মকর্তা মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস।
গতকাল সোমবার দুপুর ১২টায় চুয়াডাঙ্গা পুলিশ লাইনের সামনে গাছের ডালে মাটির কলস ও বাঁশের তৈরি পাখির বাসা বেঁধে দিয়ে ওই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কনক কুমার দাস, ট্রাফিক পরিদর্শক ফকরুল আলম, শাহাব উদ্দিন মোল্লা, মেহেদি হাসান, মাহফুজ আহমেদসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ। জেলার ৫টি থানা, একটি ফাঁড়ি ও ৩০টি ক্যাম্প ও ৩৯ টি স্থাপনায় পাখিদের অবাধ বিচরণে পাঁচ হাজার মাটির কলস ও বাঁশের খুপড়ি বেঁধে দেয়া হবে। যেখানে বাস করতে পারবে ২০-২৫ হাজার পাখি। দুপুর থেকে পুলিশ লাইন, পুলিশ সুপারের বাসভবন ও পুলিশ পার্কে নিজ হাতে পাখিদের অভয়াশ্রম তৈরিতে ব্যস্ত ছিলেন মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস।
সার্জেন্ট মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস জানান, জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর। এ কথাটি মাথায় রেখে পাখিদের অভয়াশ্রমের কথা মাথায় আসে তার। মহামারী করোনার প্রথম দিকে মানুষ যখন গৃহবন্দী ছিলো তখন হোটেল ও রেস্তোঁরাগুলো বন্ধ থাকায় পাখিদের খাওয়ার কষ্ট হতো। তখন থেকেই দোকান থেকে খাবার কিনে দু’বেলায় পাখিদের খাবার ব্যবস্থা করে দেন তিনি। তবে এবার পাখিদের নিরাপদ বাসস্থান গড়তে নিজ উদ্যোগে ওই ধরণের কর্মকা- শুরু করেছেন তিনি।
পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম জানান, পুলিশের কাজ শুধু মানুষের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করাই নয়, মানবিক কাজগুলোতেও অংশ নিচ্ছে পুলিশ। সে কাজের অংশ হিসেবে পশু পাখিদের প্রতি ভালবাসার ওই উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। পুলিশ শুধু এখন জনগণের নয়, প্রাণিদেরও।
প্রতিদিন সকাল শেষে ব্যস্ত হতে শুরু করে লোকালয় জীবন। এ ব্যস্ততা শুরুর সাথে সাথে মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসের অতিথিরাও ডানা মেলে দেয় শূন্যে। দিনভর এসব পাখিরা প্রকৃতি থেকে খাবার সংগ্রহ করে। তবে সকালের খাবার খেতে ওরা ছুটে আসে মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসের কাছে।
Thanks a Lot.