রাষ্ট্রপতির সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি সিইসি
স্টাফ রিপোর্টার: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আহমেদকে অবহিত করে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলেছে, সাংবিধানিক দায়িত্ব অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনে তারা ‘বদ্ধপরিকর’। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বঙ্গভবনে নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এদিন দুপুর ১২টায় তারা বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন এবং প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তাদের বৈঠক চলে। পৌনে ১টার দিকে বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সিইসি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চার নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান, বেগম রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর এবং মো. আনিছুর রহমান। জাতীয় নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির এই সাক্ষাৎ বেশ গুরুত্ব বহন করে। ভোটের তফসিল ঘোষণার আগে আগে এই সাক্ষাতের প্রথা রয়েছে। সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের আসার মূল উদ্দেশ্য ছিলো মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে আসন্ন নির্বাচন বিষয়ে যে প্রস্তুতি গৃহীত হয়েছে সেটা অবহিত করা। আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি অবহিত করেছি। উনি শুনেছেন সন্তুষ্ট হয়েছেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি আশা ব্যক্ত করেছেন, আসন্ন নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, সুন্দর, সুষ্ঠু হবে, সুশৃঙ্খভাবে হবে এ ব্যাপারে উনার সহযোগিতার প্রয়োজন হলে উনি আশ্বাস দিয়েছেন, আমরাও বলেছি, প্রয়োজনে আমরাও আপনার সাহায্য-সহযোগিতা কামনা করবো।’ তিনি আরও বলেন, ‘তিনি (রাষ্ট্রপতি) আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, অবাধ নির্বাচনের স্বার্থে যে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা দিতে তিনি সদা প্রস্তুত থাকবেন।’ তিনি বলেছেন, ‘গণতান্ত্রিক যে ধারাবাহিকতা, সাংবিধানিক যে ধারাবাহিকতা এটাকে যে কোনো মূল্যে অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা উনাকে জানিয়েছি, আমরা নির্বাচন কমিশন, আমাদের ওপর সাংবিধানিক যে দায়িত্ব আরোপিত হয়েছে, সেখানে যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে আমরা সে অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে, নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে বদ্ধপরিকর। আমরা উনাকে বলেছি, সকল রাজনৈতিক দল সরকার এবং জনগণের সহযোগিতা কামনা করে যাচ্ছি।’ সম্ভাব্য সময়সূচি নির্ধারণ হয়েছে কি না জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘সম্ভাব্য সময়সূচির বিষয়ে আমরা উনাকে জানিয়েছি, যেটা উনিও জানেন, যে কোনো মূল্যে আমাদের যে সময়সীমা, ২৯ জানুয়ারির আগেই (নির্বাচন) করতে হবে। আমরা জানিয়েছি, নির্দিষ্ট তারিখের ব্যাপারে আমরা এখনো পুরোপুরি সিদ্ধান্ত নিইনি। আমরা আজকে উনার সাথে সাক্ষাৎ করেছি, মতবিনিময় করে গেলাম, আমরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সম্ভাব্য সময়সূচি জানিয়ে দেব।’ দ্রুতই তফসিল ঘোষণা করা হবে জানিয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, কমিশন বসে দিন তারিখ চূড়ান্ত করলেই গণমাধ্যমকে সেটা জানানো হবে। তফসিল ১৫ নভেম্বরের পর নাকি আগে হচ্ছে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি। দ্রুত আমরা তফসিল ঘোষণা করবো। আমরা আশা করি সবার সহযোগিতায় সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার আলোকে যথাসময়ে নির্বাচন সম্পন্ন করতে সমর্থ হবো।’ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলের, ‘আমরা আজকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি, মতবিনিময় করে গেলাম, আমরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সম্ভাব্য সময়সূচি জানিয়ে দেবো। দ্রুতই তফসিল ঘোষণা করা হবে, কমিশন বসে দিন তারিখ চূড়ান্ত করলেই গণমাধ্যমকে সেটা জানানো হবে।’ এদিকে, এমন এক সময়ে নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করলো যখন সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি ও সমমনাদের ডাকে সারা দেশে অবরোধ চলছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধানের বিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা আর সহিংসতার মধ্যে জনমনে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। পশ্চিমা কূটনীতিকরা ছাড়াও বিভিন্ন মহল থেকে সংলাপের আহ্বান জানানো হচ্ছে কিন্তু বিবদমান কোনো পক্ষই তাতে সাড়া দেয়নি। বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কি না, সিইসির কাছে তা জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা। জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আলোচনা হয়নি। সংলাপ নিয়েও কোনো কথা হয়নি। সিইসি বলেন, ‘আমরা শুধু আমাদের কথা বলেছি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে যাতে নির্বাচন হয় সে ব্যাপারে সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছি।’ রাজনৈতিক মতানৈক্য নিয়ে এ সময় কোনো মন্তব্য করতে চাননি সিইসি। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ৩০ জানুয়ারি। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বিধান অনুযায়ী এর আগে ৯০ দিনের মধ্যে ভোট হতে হবে। সেই হিসাবে গত ১ নভেম্বর নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়ে গেছে। ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা আছে।