স্টাফ রিপোর্টার: মৃত্যু কমলেও দেশে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। নমুনা পরীক্ষার আওতা বাড়ার পর থেকে শনাক্তের সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। ফলে প্রতিদিনই ভাঙছে আক্রান্তের রেকর্ড। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৮৬ জন। এ নিয়ে সর্বমোট আক্রান্ত ১০ হাজার ৯২৯ জন। এখন পর্যন্ত একদিনে এটাই সর্বোচ্চ সংখ্যক শনাক্ত হওয়া রোগী। এছাড়া করোনায় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১৮৩ জনে। নতুন করে ১৯৩ জনসহ মোট ১ হাজার ৪০৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশে দিন দিন বাড়ছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যায় গড়ছে নতুন রেকর্ড। এই মুহূর্তে মৃত্যুর সংখ্যা কমা ছাড়া দেশের মানুষের জন্য কোনো সুখবর নেই। বরং বিশ্বে করোনা আক্রান্তের তালিকায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অবস্থান ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এরই মধ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের দিক দিয়ে বিশ্বে ৩৭তম স্থানে চলে এসেছে বাংলাদেশ। এমনই তথ্য দিচ্ছে করোনা ভাইরাস নিয়ে বিশ্বব্যাপী তথ্য দেয়া ওয়ার্ল্ডোমিটার। তাদের ওয়েবসাইটে করোনা আপডেটে দেখা যায়, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ৯২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে বিশ্বে আক্রান্তের তালিকায় ৩৭তম স্থানে আছে বাংলাদেশ। তারপরেই আছে দক্ষিণ কোরিয়া। ১ কোটি ২১ লাখ ৩ হাজার ১০ জন আক্রান্ত নিয়ে তালিকার সবার ওপরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মৃত্যুর দিক দিয়েও শীর্ষে রয়েছে দেশটি (৬৯ হাজার ৯২৫ জন)। আর স্পেন রয়েছে দ্বিতীয়। ইতালির অবস্থান তৃতীয়। ওয়েবসাইটে বলা হয়, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে ১৮৩ জন মারা গেছেন। আর সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৪০৩ জন।
এদিকে মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৭৮৬ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। আর মারা গেছেন একজন। মঙ্গলবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য তুলে ধরেন অধিদফতরটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। তিনি জানান, ৫ হাজার ৭১১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৮৬ জনের দেহে করোনার সংক্রমণ পাওয়া গেছে। মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। সুস্থ হয়েছেন আরও ১৯৩ জন। এর আগের দিন সোমবার আক্রান্ত হন ৬৮৮ জন। ফলে দেখা গেছে দিন দিন বেড়ই চলেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। গত ৫ এপ্রিল বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিলো মাত্র ৭০ জন। আর এক মাসে করোনা রোগী বেড়েছে ১০ হাজার ৮৫৯ জন।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের মধ্যে ৬৮ শতাংশ পুরুষ এবং ৩২ শতাংশ নারী। মৃতদের মধ্যে ৭৩ শতাংশ পুরুষ এবং ২৭ শতাংশ নারী। যারা মারা গেছে তাদের মধ্যে ষাটোর্র্ধ্ব বয়সের ছিলেন ৪২ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ছিলেন ২৭ শতাংশ। এছাড়া ৪১-৫০ বছর বয়সী ১৯ শতাংশ, ৩১-৪০ বছর বয়সী সাত শতাংশ, ২১-৩০ বছর বয়সী তিন শতাংশ এবং ১০ বছরের নিচে দুই শতাংশ মারা গেছেন। করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়া মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে। এরপরই রয়েছে চট্টগ্রাম এবং ময়মনসিংহ বিভাগ। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘এখন স্বাভাবিকভাবেই মার্কেট খোলা হয়েছে। গার্মেন্টস খোলা হয়েছে, দোকানপাটে আনাগোনা বাড়ছে। কাজেই সংক্রমণ যে বৃদ্ধি পাবে, এটি আমরা ধরেই নিতে পারি।’ করোনা রোগী যেন না বাড়ে সে জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চেষ্টা করবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের যতোটুকু সম্ভব এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। জীবন-জীবিকা দুটোই পাশাপাশি যাবে। আমাদের ম্যান্টেড হলো যাতে রোগীগুলো অধিক চিকিৎসা পায়।’ ২৬ এপ্রিল থেকে পোশাক কারখানা খোলা হয়েছে। এদিকে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১০ মে থেকে ব্যবসাকেন্দ্র, দোকানপাট ও শপিংমলগুলো শর্ত সাপেক্ষে সীমিত পরিসরে খোলা হবে।
প্রসঙ্গত গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। দেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হন ৮ মার্চ এবং এ রোগে আক্রান্ত প্রথম রোগীর মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। ২৫ মার্চ প্রথমবারের মতো রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানায়, বাংলাদেশে সীমিত পরিসরে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা সামাজিকভাবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হচ্ছে।