স্টাফ রিপোর্টার: ঐতিহাসিক মুজিবনগর ও মেহেরপুর জেলাকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। এজন্য দর্শনা থেকে দামুড়হুদা ও মুজিবনগর হয়ে মেহেরপুর পর্যন্ত নতুন করে ৪১ দশমিক ৭০ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ করতে হবে। এ লাইন নির্মাণে আপাতত সম্ভাব্য খরচ ধরা হয়েছে এক হাজার ৪৩ কোটি টাকা। তবে সমীক্ষা শেষ হলে আর প্রকল্পের বাস্তবায়ন সময় ধরা হলে তখন ব্যয় বৃদ্ধিরও সম্ভাবনা রয়েছে বলে রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দর্শনা থেকে দামুড়হুদা ও মুজিবনগর হয়ে মেহেরপুর পর্যন্ত নতুন ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের জন্য প্রকল্প নেয়া হয়েছে। সমীক্ষা প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ১২ কোটি ৪৮ লাখ ১৩ হাজার টাকা। সংশোধিত মেয়াদে আগামী ২০২১ সালের জুনে প্রকল্পটি সমাপ্ত হওয়ার কথা। তবে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত দুই বছরে অগ্রগতি মাত্র ২৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ। তাই নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটি সমাপ্ত হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে।
সূত্র বলছে, দর্শনা থেকে মেহেরপুর পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণের নিমিত্তে চূড়ান্ত অ্যালাইনমেন্ট নির্বাচনের জন্য পরিদর্শনকরণ সার্ভে সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় দর্শনা থেকে মেহেরপুর পর্যন্ত তিনটি এবং পরবর্তীতে দর্শনা জংশন ও জয়রামপুর স্টেশনের দক্ষিণ ও উত্তর দিক থেকে অপর তিনটি সম্ভাব্য অ্যালাইনমেন্ট নির্ধারণ করে পরিদর্শনকরণ সার্ভে সম্পন্ন করা হয়েছে। দর্শনা থেকে রেললাইন নির্মাণের জন্য সম্ভাব্য তিনটি রেলরুট কার্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়নি। দর্শনা জংশন ও জয়রামপুর স্টেশনের উত্তর দিক থেকে রেললাইন নির্মাণের জন্য সম্ভাব্য রেলরুট কার্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এখানে দুটি অ্যালাইনমেন্ট ১ এ এবং ১ সি নির্ধারণ করা হয়।
অ্যালাইনমেন্ট-ভিত্তিক খরচের হিসাবে দেখা যায়, অ্যালাইনমেন্ট এতে খরচ ধরা হয়েছে এক হাজার ৪২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এখানে রুট হলো বিদ্যমান দর্শনা জংশন স্টেশন থেকে কার্পাসডাঙ্গা ও মুজিবনগর হয়ে মেহেরপুর পর্যন্ত (বাইপাসসহ)। ফলে এখানে বিদ্যমান রেলরুট হলো ৪০ দশমিক ৮১৬ কিলোমিটার। এর সাথে বাইপাস শূন্য দশমিক ৮৮৫ কিলোমিটার। ফলে মোট রেল রুটের দৈর্ঘ্য হলো ৪১ দশমিক ৭০ কিলোমিটার। এখানে প্রস্তাবিত স্টেশন হবে পাঁচটি। এগুলো হলো- বিদ্যমান দর্শনা জংশন, কার্পাসডাঙ্গা, আটকবর, মুজিবনগর, দরিয়াপুর ও মেহেরপুর। ফলে এখানে পাঁচটি ব্রিজের প্রয়োজন হবে। দরকার হবে ৪২টি কালভার্ট। ৪২ লেবেল ক্রসিং থাকবে। এই লাইন বাস্তবায়নে ৬৯২ দশমিক ৪০ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে।
প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ কাজগুলো হলো- বিদ্যমান দর্শনা জংশনে আপ ও ডাউন লাইনে সংযুক্ত নতুন দুটি আপ ও একটি ডাউন লুপ নির্মাণ, স্টেশন ভবন ও প্লাটফর্ম নির্মাণ এবং বিদ্যমান সিগন্যালিং পরিবর্তন বা পরিবর্ধন। নতুন সিগন্যালিং ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ বি ক্লাস স্টেশনে রূপান্তর। আর জয়রামপুর স্টেশনকে বি ক্লাস থেকে ডি ক্লাসে রূপান্তর করতে হবে। তবে স্টেশনটি বর্তমানে বন্ধ আছে।
আর অ্যালাইনমেন্ট ১ সি-তে খরচ হবে এক হাজার ৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এখানে অতিরিক্ত কাজের মধ্যে রয়েছে, জমি অধিগ্রহণ ২১ দশমিক ৬০ একর বেশি। লেভেল ক্রসিং ছয়টি বেশি, তবে কালভার্ট কমবে ছয়টি, ব্রিজ বেশি হবে একটি। লাইনের দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার বেশি।
প্রকল্প পরিচালকের তথ্যানুযায়ী, সমীক্ষা প্রকল্পটির আওতায় সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিশদ ডিজাইনসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কার্যাবলী সম্পন্ন করার জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয় ২০২০ সালের মার্চে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসিই কনসালট্যান্টস লিমিটেড ও জেভি এসএমইসি ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেডের (অস্ট্রেলিয়া) চুক্তি করে। সিডি ভ্যাট ছাড়া চুক্তিমূল্য হলো এক কোটি ৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। কিন্তু মহামারীর কারণে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করতে পারেনি। গত ১ জুন থেকে তারা কাজ আরম্ভ করে। তারা প্রারম্ভিক প্রতিবেদন বা প্রাইমারি ইন্সপেকশন রিপোর্ট দাখিল করেছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় বলছে, ট্রেন অপারেশন হবে এই রুটে, দর্শনা জংশন থেকে মেহেরপুর পর্যন্ত এবং মেহেরপুর থেকে দর্শনা হয়ে সরাসরি যশোর ও খুলনা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল সম্ভব হবে। এছাড়া মেহেরপুর থেকে দর্শনা-যশোর-পদ্মাসেতু হয়ে সরাসরি ট্রেন ঢাকা আসা ও যাওয়া সম্ভব হবে।
রেলওয়ের মহাপরিচালক জানান, অ্যালাইনমেন্ট ১-এ চূড়ান্ত করা যেতে পারে। তবে এতে দর্শনা জংশন স্টেশন থেকে যাত্রী উঠানামার জন্য বাইপাসে স্টেশন স্থাপনের সুপারিশ করেন তিনি।