দর্শনা অফিস: ভারত থেকে পুরোনো ২০টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন উপহার হিসেবে পেয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। গতকাল মঙ্গলবার দুই দেশের রেলমন্ত্রীর এক ভার্চুুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দর্শনা-গেদে বর্ডার দিয়ে ইঞ্জিনগুলো গ্রহণ করা হয়। এ সময় দর্শনা স্টেশন চত্বরে সমবেত হওয়া হাজারো জনতা হাততালি ও ফুল ছিটিয়ে বরণ করে ইঞ্জিনগুলো। আজ বুধবার ইঞ্জিনগুলো ঈশ^রদীর নেয়া হবে। ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী ঢাকায় রেলভবন থেকে এবং ভারতের রেলমন্ত্রী নয়াদিল্লি থেকে যুক্ত হন। সাথে ছিলেন রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হুমায়ুন কবীর। ভার্চুয়াল বৈঠকের ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করে ২০টি ট্রেন ইঞ্জিন বাংলাদেশের উদ্দেশে ছাড়েন। বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ভারত বিনা পয়সার ২০টি পুরোনো ব্রডগেজ লোকোমোটিভ উপহার দিয়েছে। ইঞ্জিনগুলো গড়ে আট বছরের পুরোনো। এই ইঞ্জিনগুলো দেশের রেলের বহরে যুক্ত হবে। মন্ত্রী নূরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরের সময় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর যৌথ বিবৃতিতে ভারতীয় রেলওয়ে থেকে ২০টি ইঞ্জিন অনুদান হিসেবে দেয়ার বিষয়টি আলোচনা হয়। তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে আটটি পথে রেল সংযোগ রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হবে আখাউড়া-আগরতলা পথ। তিনি আরও বলেন, এ সরকারের উন্নয়ন দেখে বিরোধী দল ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশে কোন রকম রেলওয়েতে কোন ভোগান্তি থাকবে না। তিনি আরও বলেন, ভারত-বাংলাদেশ এ উপহার দেয়ায় ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে এবং বাংলাদেশ মনে রাখবে। ২০টি রেলের ইঞ্জিন উপহার দেয়ায় বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সু-সম্পর্ক আরও গাঢ় হলো এবং বাংলাদেশ আরেকধাপ উন্নয়নের দিকে পা বাড়ালো।
অনুষ্ঠানে ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, যেসব ইঞ্জিন দেয়া হয়েছে, সেগুলো আধুনিক ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন, ৩ হাজার ৩০০ অশ্বক্ষমতাসম্পন্ন। দুই দেশের মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময়সহ নানা বিষয় সহযোগিতা বিদ্যমান। বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে ২০টি ইঞ্জিন দেয়া হয়েছে, যা বাংলাদেশের মানুষের রেলভ্রমণে স্বাচ্ছন্দ্য আনবে। ঢাকায় রেলভবনের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. মুস্তাফিজুর রহমান দিল্লির রেলভবন থেকে যুক্ত হন।
দর্শনা আর্ন্তজাতিক স্টেশনে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজমুল হামিদ রেজা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তারেক, দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান আলী মুনছুর বাবু, দামুড়হুদা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সজল কুমার দাস, দর্শনা পৌর মেয়র আতিয়ার রহমান হাবু, দর্শনা পৌর আ.লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রুস্তম আলী, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল হান্নান ছোট। বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী (পশ্চিম) মহাব্যবস্থাপক অসিম কুমার, সিএসটিই মিজানুর রহমান, সিওপিএস আহসানুল হক ভূইয়া, সিসিএস সঞ্জিত কুমার বিশ্বাস, প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হক, সিসিআরএনসি আশরাফুল ইসলাম, প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী কুদরত ই খোদা, পাকশি বিভাগীয় ডিএসটিই এসএম রাজিব বিল্লাহ, ডিকেএম শাহ সুফি মোহাম্মদ, ডিসিও নাসির উদ্দিন, ডিটিও আনেয়ার হোসেন, ডিএমই অশিষ কুমার, ডিএমই মমতাজুর রহমান, ডিইএন নাজির কাইছার, সিআরএনবি মোর্শেদ আলম, দর্শনা আর্ন্তজাতিক স্টেশন ম্যানেজার মির্জা কামরুল হক প্রমুখ। এ সময় ভারতের দেয়া উপহার ২০টি রেলের ডিজেল ইঞ্জিন রেলওয়ে বোর্ড ইন্ডিয়ার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর অশোক কুমার বিশ্বাস বুঝিয়ে দেন ঈশ্বরদী লোকোমোটিভ বিভাগের সিনিয়র সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সরেক জামালের কাছে।
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মির্জা কামরুল হক জানান, ভারত সরকার উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে ২০টি রেল ইঞ্জিন উপহার দিয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে এ উদ্যোগ। ভার্চুয়ালি দুই দেশের রেলমন্ত্রী হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ভারতের উপহার দেয়া ফুলে সজ্জিত রেল ইঞ্জিনগুলো দর্শনা রেল ইয়ার্ডে রাখা আছে। ইঞ্জিনগুলো বুধবার যেকোন সময় ঈশ্বরদির উদ্দেশে ছেড়ে যাবে বলে জানান মির্জা কামরুল হক।
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে জেনারেল ম্যানেজার অসীম কুমার তালুকদার জানান, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সম্পাদনের মাধ্যমে ব্রড গেজ ইঞ্জিনগুলোর সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের বিস্তরিত (স্পেসিফিকেশন) যাচাই, আমদানি ছাড়পত্র গ্রহণ, কাস্টমস ডিউটি, ভ্যাট ও ট্যাক্স প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দেশে আনা হয়েছে। ঈশ্বরদী থেকে পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে ইঞ্জিনগুলো পণ্য পরিবহনে ব্যবহার করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে ভারত থেকে ১০টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ অনুদান হিসেবে আসে। বর্তমানে সেগুলো বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে। গত বছরের ১ জুন নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ ও ভারতের রেলমন্ত্রীর এক বৈঠকে ২০টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন বাংলাদেশকে দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। গত বছর সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর যৌথ বিবৃতিতে ২০টি ইঞ্জিনের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।