দর্শনা অফিস: চুয়াডাঙ্গার দর্শনা পৌর এলাকার পৃথক দুটি স্থানে দুজন বৃদ্ধের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরের দিকে দর্শনা থানা-পুলিশ আধাঘণ্টার ব্যবধানে রামনগর ও পরানপুর গ্রামের পৃথক দুই ভুট্টাক্ষেত থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করে। মারা যাওয়া দুজনই পেশায় কৃষক। তারা হলেন পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের সড়াবাড়িয়া গ্রামের শওকত হোসেন ওরফে ছকো (৬৫) এবং দর্শনা পৌর এলাকার পরানপুর গ্রামের হাফিজুর রহমান (৫৫)। নিখোঁজের ২ ও ৩ দিনের মাথায় দু’ব্যক্তির লাশ উদ্ধারে সৃষ্টি হয়েছে রহস্যের ধুম্রজাল। পুলিশ রহস্য উন্মোচনে শুরু করেছে তদন্ত। লাশ ময়না তদন্ত শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। থানায় কারো বিরুদ্ধে হয়নি অভিযোগ বা মামলা। পুলিশ পৃথক দুটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছে।
পুলিশ জানায়, শওকতের লাশের পাশে কীটনাশকের বোতল এবং হাফিজুরের কপালে কাঁচির ক্ষত আছে। তাদের মৃত্যুরহস্য উন্মোচনে দুজনেরই লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
জানা গেছে, দর্শনা পরাণপুর মাঝপাড়ার গোলাম জোয়ার্দ্দারের ছেলে হাফিজ জোয়ার্দ্দার গত পরশু রোববার দুপুর ১২ টার দিকে গরুর জন্য মাঠে ঘাস কাটতে যান। দুপুর গড়িয়ে বিকেল ও বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা পার হলেও বাড়িতে না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। এক পর্যায়ে গোটা দর্শনা জুড়ে হাফিজ নিখোঁজের মাইকিং করা হয়। পাশাপাশি পরিবারের পক্ষ থেকে দর্শনা থানায় করা হয় সাধারণ ডায়েরি। এক পর্যায়ে সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পরাণপুর ঘড়াভাঙা বেতোগাড়ি মাঠের সানিউলের ভুট্টাক্ষেতে অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ দেখতে পেয়ে খবর দেয়া হয় পুলিশকে। অল্প সময়ের মধ্যেই পুলিশ ও প্রতিবেশীরা ভিড় জমায় ওই মাঠে। পুলিশ লাশ উদ্ধারের আগেই শনাক্ত হয় লাশের পরিচয়।
পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দর্শনা পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের সাড়াবাড়িয়া গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে শওকত আলী ওরফে শকো গত শনিবার বাড়ি থেকে নিখোঁজ ছিলেন। পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণেই রাগ-অভিমান করে শকো বাড়ি ছাড়লেও ৩ দিনের মাথায় ভুট্টাক্ষেতে লাশ পাওয়া যায়। এদিকে শকোর লাশ দেখার মাত্র আধঘণ্টার মাথায় মাঠের জলিল ক্যামিস্টের ভুট্টাক্ষেতে দেখা যায় হাফিজের লাশ। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ পৃথক দুটি ভুট্টাক্ষেত থেকে দুজনের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নেয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে। সন্ধ্যায় ময়না তদন্ত শেষে দুজনের লাশ পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেয় পুলিশ। রাতেই দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে দুজনের লাশ।
পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হাফিজ হৃদযন্ত্র ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যেতে পারে। তবে তিনি সংসার জীবনে ছিলেন চিরকুমার। অন্যদিকে ৩ সন্তানের জনক শকো বিষপানে আত্মহত্যা করতে পারে বলে স্থানীয়দের ধারণা। কারণ হিসেবে জানা গেছে, শকোর লাশের পাশে বিষের আলামত পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কনক কুমার দাস ও দর্শনা থানার ওসি লুৎফুল কবীর সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
দর্শনা থানার ওসি লুৎফুল কবীর জানান, এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে সোমবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে দর্শনা পৌর এলাকার রামনগর গ্রামের একটি ভুট্টাক্ষেত থেকে শওকত হোসেন ও দুপুর সোয়া ১২টায় পরানপুর গ্রামের ভুট্টাক্ষেত হাফিজুর রহমানের লাশ উদ্ধার করা হয়। শওকত হোসেনের লাশের পাশে কীটনাশকের বোতল পড়েছিলো। এছাড়া হাফিজুর রহমানের লাশ উপড় হয়ে পড়েছিলো। তার লাশের পাশে ধারালো কাঁচি (ঘাস কাটার যন্ত্র) ছিলো। তার কপালে কাঁচির ক্ষতচিহ্ন ছিলো। মৃত্যুর রহস্য উন্মোচনে লাশ দুটির ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলেই মৃত্যুরহস্য উন্মোচন হবে।
পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে ওসি লুৎফুল কবীর আরও জানান, শওকত হোসেন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নানা কারণে প্রায়ই ঝামেলা হতো। গত শনিবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে রাগারাগি করে বাড়ি থেকে বের হন কৃষক শওকত হোসেন। এরপর বাড়িতে না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা খোঁজ শুরু করেন। সোমবার রামনগর গ্রামের কয়েক কৃষক গ্রামের মাঠে লাশটি পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন। নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা লাশটি শনাক্ত করেন। প্রতিবেশীরা জানান, রোববার সকাল থেকে শারীরিকভাবে অসুস্থতা বোধ করছিলেন পরানপুরের হাফিজুর। বিকেলে গৃহপালিত পশুর জন্য ঘাস কাটতে বাড়ি থেকে বের হন এবং গ্রামের মাঠে যান। সন্ধ্যায় বাড়িতে না ফেরায় শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। অবশেষে সোমবার তার লাশের সন্ধান মেলে।