স্টাফ রিপোর্টার: সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর বলেছেন, চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য সংস্কৃতিতেই শুধু নয়, ইতিহাস ঐতিহ্যেও সমৃদ্ধশালী একটি জেলা। এ জেলার মানুষ চমৎকার উচ্চারনে শুদ্ধভাবে বাংলায় কথা বলেন। চুয়াডাঙ্গায় এসে এলাকার মানুষের মুখের কথা শুনে খুব আপন মনে হচ্ছে। সাহিত্য মিলন মেলায় চুয়াডাঙ্গার গুণীজনদের উপস্থিতি সৃজনশীলতার পরিচয় বহন করে। সৃজনশীল চিন্তাধারা জাতিকে সমৃদ্ধ করবে বলেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সারাদেশে পর্যায়ক্রমে সাহিত্য মেলার আয়োজন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ উদ্যোগের প্রথমেই আজ চুয়াডাঙ্গা ও গোপালগঞ্জে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
গতকাল সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গা সাহিদ প্যালেসের চতুর্থ তলায় রাফেল কনভেনশন সেন্টারে দিনের সাহিত্য মিলন মেলা উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সচিব মো. আবুল মনসুর আরও বলেন, সরকার চায়, নগরকেন্দ্রিকতা থেকে বেরিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের কবি-সাহিত্যিকদের জাতীয়ভাবে তুলে ধরতে। কবি-সাহিত্যিকদের একত্রিত করা জররী। জেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কবি-সাহিত্যিকদের খুঁজে বের করে তাদেরকে উপযুক্ত জায়গায় পৌঁছে দেয়াই সরকারের লক্ষ্য। আমরা এসব কবি-সাহিত্যিককে জাতীয়ভাবে তুলে ধরতে চাই। এ কারণেই জেলায় জেলায় সাহিত্য মেলা করছি। ১৫ ফেব্রুয়ারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একুশে বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তার বক্তৃতায় জেলায় জেলায় সাহিত্য মেলা করার নির্দেশনা দেন। সেই নির্দেশনারই ফসল আজকের জেলা সাহিত্য মেলা।’
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রথমবারের মতো চুয়াডাঙ্গায় এই সাহিত্য মেলার আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। এ মেলায় জেলার দুই শতাধিক কবি-সাহিত্যিকের সম্মিলন ঘটেছে। আজ দ্বিতীয় দিন। এদিনে লেখক সাহিত্যিকদের কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর আরও বলেন, ‘বৃহত্তর কুষ্টিয়া বাউলের দেশ। এ কারণে চুয়াডাঙ্গা জেলায় অসংখ্য বাউল আছেন। একুশে পদকপ্রাপ্ত বাউল সাধক খোদা বকশ সাঁই এই জেলার মানুষ। বাউলে বাউলে যেমন আত্মিক সম্পর্ক, তেমনি কবিতে কবিতে আত্মিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটবে এমন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। স্থানীয় কবি-সাহিত্যিকদের সঙ্গে কেন্দ্রের সম্পর্কের উন্নয়নে ভবিষ্যতে এ ধরনের সাহিত্য মেলা অব্যাহত থাকবে।’ চুয়াডাঙ্গার জন্য সুখবর জানিয়ে সচিব মো. আবুল মনসুর বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা জেলা শিল্পকলা একাডেমি ভবন ও মিলনায়তন তৈরির জায়গা নির্বাচন শেষে গত জুনে সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে। শিগগিরই অত্যাধুনিক শিল্পকলা ভবন পাবে চুয়াডাঙ্গাবাসী।’ তার বক্তব্যের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিনি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী পর্বে সূচনা বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. হাসান কবীর। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন। চর্যাপদের গান পরিবেশন করেন চুয়াডাঙ্গার কৃতিশিল্পী সাধিকা সৃজনী তানিয়া এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. সাইমন জাকারিয়া। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাজিয়া আফরীন।
প্রথম দিনের আয়োজনের দ্বিতীয় পর্বে সাহিত্য পাঠ ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সচিব মো. আবুল মনসুরের সভাপতিত্বে প্রাবন্ধিক আবদুল মোহিত ‘চুয়াডাঙ্গা জেলার সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চার পূর্বাপর’, মুন্সি আবু সাইফ ‘চুয়াডাঙ্গা জেলার কবিতা ও ছড়া’ এবং কাজল মাহমুদ ‘চুয়াডাঙ্গা জেলার নাটক, কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. রবিউল হোসেন, চুয়াডাঙ্গা সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড. আব্দুর রশীদ ও চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি নজমুল হেলাল প্রবন্ধের ওপর বিশদ আলোচনা করেন। মধ্যাহ্নবিরতির পর স্থানীয় কবি-সাহিত্যিকরা স্বরচিত লেখা পাঠ করেন। সমগ্র অনুষ্ঠান প্রাণবন্ত উপস্থাপন ও সঞ্চালন করেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক ড. সাহেদ মন্তাজ ও বাংলাদেশ বেতারের সংবাদ পাঠক ও উপস্থাপক জান্নাতুল ফেরদৌসী লিজা। পরে পঠিত লেখার ওপর আলোচনা হয়। শেষে বিকেলে জেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আজ রোববার একই স্থানে চুয়াডাঙ্গার কবি-সাহিত্যিকদের নিয়ে সাহিত্য রচনা বিষয়ে দিনব্যাপী কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে।