স্টাফ রিপোর্টার: প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের (দ্য কমিশন অব এনকোয়ারি অন এনফোর্সড ডিসাপিয়ারেন্স) সদস্যরা। গতকাল রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বৈঠককালে তাকে কমিশন জানায়, এমনকি ছয় বছরের শিশুকেও গুমের বর্ণনা কমিশনের তদন্তে উঠে এসেছে। এসময় কমিশন ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শনের অনুরোধ জানালে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাদের তদন্তে যে ঘটনাগুলো উঠে এসেছে তা গা শিউরে ওঠার মতো। আমি শিগিগরই আয়নাঘর পরিদর্শনে যাব।’ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাকে গুমের ঘটনায় তদন্তেরর অগ্রগতি সম্পর্কে জানিয়ে ‘জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল’ যা ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিতি পেয়েছে, সেগুলো পরিদর্শনের অনুরোধ জানান কমিশনের সদস্যরা। প্রধান উপদেষ্টা ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন করলে গুমের শিকার ব্যক্তিরা আশ্বস্ত বোধ করবেন এবং অভয় পাবেন বলেও জানান তারা। বৈঠকে কয়েকটি গুমের ঘটনার নৃশংস বর্ণনাও প্রধান উপদেষ্টাকে শোনায় গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা আজ সুইজারল্যান্ড যাচ্ছেন : ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে চার দিনের সফরে সুইজারল্যান্ড যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ দিবাগত রাতে দেশটির উদ্দেশে তার ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ২০-২৪ জানুয়ারি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন হবে। এ সম্মেলনে যোগ দেবেন ড. ইউনূস। সম্মেলনে অংশ নেয়া ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টা জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস, বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস ক্যালামার্ড ছাড়াও কয়েকটি সংস্থার প্রধান, বিভিন্ন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী এবং চেয়ারম্যান ও উদ্যোক্তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। পাশাপাশি কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেয়ার কথা রয়েছে তার। এদিকে গতকাল ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূত মার্সেলো সেসা সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। একই দিনে অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নার্ডিয়া সিম্পসন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিদায় সাক্ষাৎ করেন। সেসার সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ফুটবলকে ঘিরে বাংলাদেশ ও আর্জেন্টিনার মধ্যে থাকা আবেগপূর্ণ সম্পর্ককে বাণিজ্য ও দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা সম্প্রসারণে কাজে লাগাতে দেশটির প্রতি আহ্বান জানান। তিনি রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশের সঙ্গে তুলা বাণিজ্য বৃদ্ধি ও এ খাতে সম্পূর্ণ মালিকানাধীন বা যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগ সুযোগ খুঁজে দেখতে এবং জ্বালানি সহযোগিতার সম্ভাবনা অন্বেষণ করার আহ্বান জানান। রাষ্ট্রদূত সেসা আর্জেন্টিনার বুয়েনেস আয়ারেসে বাংলাদেশের দূতাবাস চালুর অনুরোধ জানিয়ে বলেন, দূতাবাস চালু হলে দুই দেশের সুসম্পর্ককে উভয় দেশের কল্যাণে কাজে লাগানো যাবে। তিনি বলেন, বর্তমানে আর্জেন্টিনার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রায় ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য রয়েছে, যা তার দেশের পক্ষে ঝুঁকে আছে। আর্জেন্টিনা সরকার বাংলাদেশ থেকে আমদানি বাড়িয়ে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে সমতা আনার চেষ্টা করছে। রাষ্ট্রদূত তুলা, যৌথ বিনিয়োগ, ওষুধশিল্প, টেক্সটাইল, নারী ফুটবলসহ ফুটবল খেলায় সহযোগিতা বৃদ্ধি, ক্ষুদ্রঋণ, বাণিজ্য প্রতিনিধি দল প্রেরণ, এলএনজি ও ধানের রোগ প্রতিরোধসহ বিভিন্ন খাতে নিবিড়ভাবে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করে। তিনি জোরপূর্বক গুম প্রতিরোধে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক গুমবিরোধী সনদে স্বাক্ষর করার প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেন এবং আর্জেন্টিনায় ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা চালু করার জন্য বাংলাদেশের সহযোগিতা কামনা করেন। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতে অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নার্ডিয়া সিম্পসন গত জুলাই-আগস্ট মাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো স্মরণ করেন এবং দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বাংলাদেশে তার চার বছরের সময়কে ‘অসাধারণ অভিজ্ঞতা’ উল্লেখ করে বলেন, এ দেশের জনগণ অত্যন্ত উদার ও অতিথিপরায়ণ। অধ্যাপক ইউনূস রাষ্ট্রদূত সিম্পসনকে এ বছরের আগস্টে জুলাই গণ অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানান।