ভর্তুকি দেয়ার প্রস্তাব করেছেন দেশের শীর্ষ স্থানীয় অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা
স্টাফ রিপোর্টার: জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে ‘ভর্তুকি’ ছাড়া অর্থনীতির সব সূচকে বড় ধরনের ধাক্কা আসছে। ইতোমধ্যেই কিছু সূচকে নেতিবাচক অবস্থা দেখা দিয়েছে। আগামীতে এর প্রভাব আরও স্পষ্ট হবে। এরই মধ্যে অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে। শিল্পপণ্যের দামও বাড়বে। বেড়ে গেছে গণপরিবহণসহ সব ধরনের পরিবহণ ব্যয়। এতে ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে মূল্যস্ফীতির হার। কমে যাচ্ছে টাকার মান। বেড়ে গেছে জীবনযাত্রার ব্যয়। যাদের আয় বাড়বে না তাদেরও এখন বাধ্য হয়ে কমাতে হবে জীবনযাত্রার মান। ফলে নতুন করে আরও কিছু মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে চলে যাবে-এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
সূত্র জানায়, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ফলে এ খাতে সরকারের ভর্তুকি দেয়া লাগছে না। এতে সরকারের বাড়তি ঋণের বোঝা বইতে হবে না। কিন্তু তেলের কারণে অন্যান্য খাতে ভর্তুকির মাত্রা বাড়াতে হবে। ফলে সরকারের ঋণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই অবস্থায় সরকার যে লক্ষ্য নিয়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সে লক্ষ্য অর্জিত তো হচ্ছেই না, উলটো জনঅষন্তোষ বাড়ছে, ভোগ্যপণ্য ও সেবার বাজারে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে।
বিপিসির (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন) তথ্য অনুযায়ী দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে সমন্বয় করা হলেও আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এখনো বাড়তি দরেই কিনতে হচ্ছে তেল। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছে। এতে অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে আমদানি করতে হচ্ছে সবকিছু। যার প্রভাবে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় চাপ বেড়ে গেছে।
এ অবস্থায় জ্বালানি তেলের মূল্য আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে এ খাতে ভর্তুকি দেয়ার প্রস্তাব করেছেন দেশের শীর্ষ স্থানীয় অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, সরাসরি জ্বালানি তেলে ভর্তুকি না দিয়ে তেলের দাম বাড়ানোর ফলে এখন সব খাতে সেবা ও পণ্যের দাম বেড়ে চলছে। এতে জন অষন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে। এখন হয় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে নয়তো ভর্তুকি আরও বাড়াতে হবে।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম প্রায় ৫০০ শতাংশ বেড়েছে। এ খাতেও হয় ভর্তুকি বাড়াতে হবে, নয়তো দাম বাড়াতে হবে। স্থানীয় বাজারে এগুলোর দাম বাড়ানো হলে পণ্য ও সেবার দাম আরও বাড়বে। তখন কৃষিসহ অন্যান্য খাতে ভর্তুকি আরও বাড়াতে হবে। ৩ নভেম্বর রাতে হঠাৎ করে সরকার ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা করেছে। বৃদ্ধির হার ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ। এর প্রভাবে গণপরিবহণ ভাড়া সরকার বাড়িয়েছে ২৬ শতাংশ। কিন্তু বাস মালিকরা বাড়িয়েছেন ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ। ট্রাক, কার্ভার্ড ভ্যানে ভাড়া বেড়েছে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ। এসব নিয়ে পরিবহণ ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা চলছে। মাছ, মাংস, শাকসবজিসহ প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে গড়ে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ। শিল্প পণ্যের দাম এখনও বাড়েনি। তবে তাদের উৎপাদন খরচ বাড়ার কারণে আগামীতে এসব পণ্যের দামও বাড়বে। এর সঙ্গে সমন্বয় রেখে প্রায় সব খাতেই পণ্য ও সেবার দাম বাড়বে। পণ্য ও সেবার দাম বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় সেপ্টেম্বর পর্যন্ত (পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে) মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এ হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু পণ্য, সেবার মূল্য যেভাবে বাড়ছে, একই সঙ্গে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে তাতে চলতি বছরে এ হার লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাখা সম্ভব না বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। কেননা আগস্টে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। জুলাইয়ে ছিলো ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এ হার এখন ঊর্ধ্বমুখী। জুলাইয়ের তুলনায় প্রতি মাসেই সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছে। নভেম্বরে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে এ ধাপে আরও বেড়েছে পণ্য ও সেবার মূল্য। আগামীতে মূল্যস্ফীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, জ্বালানি এমন একটা পণ্য যার মূল্য বাড়লে মূলত সবকিছুর দামই বেড়ে যায়। এর প্রভাবে জীবনযাত্রার ব্যয়ও বাড়বে। পণ্যের উৎপাদন ব্যয় ও বিপণন খরচ বেড়ে যাবে। বাড়তি দামে পণ্য উৎপাদন করে আবার বাড়তি দামেই বিক্রি করতে না পারলে উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তখন তারা উৎপাদন কমিয়ে দেবেন। তাতে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ সংকট দেখা দেবে। এতে বাজার অস্থির হয়ে উঠবে।
জানতে চাইলে পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোতে সব কিছুর দাম বাড়বে। এতে নতুন করে আরও কিছু মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে যাবে। যারা দরিদ্র ছিল তারা যাবে অতি দরিদ্রের সীমায়। মধ্যবিত্তদের জীবনযাত্রার মানে আপস করতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় আগস্টে আমদানি ব্যয় ৭৩ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে বেড়েছে ৫০ দশমিক ৫৬ শতাংশ। অক্টোবরেও এ হার ঊর্ধ্বমুখী। গত অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে আমদানি ব্যয় কমেছিল সাড়ে ১১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছে ৪৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের ওই সময়ে এলসি খোলা বেড়েছে ৪৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এসব পণ্য আগামী ১ থেকে ৪ মাসের মধ্যে দেশে আসবে। ফলে আগামীতেও আমদানি ব্যয় আরও বাড়বে।
আমদানি ব্যয় বাড়ার বিপরীতে রপ্তানি আয় বাড়লেও রেমিট্যান্স কমছে। দেশের রপ্তানি আয় দিয়ে আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হয় না। ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি হচ্ছে। প্রতি বছরই এই ঘাটতি বাড়ছে। এ ঘাটতি মেটানো হয় রেমিট্যান্স দিয়ে। এখন রেমিট্যান্স কমায় বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় অস্থিরতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ২২ দশমিক ৬২ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছিল ১ শতাংশেরও কম। অক্টোবরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৬০ দশমিক ৩৭ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে কমেছিল ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ার কারণে আগামীতে রপ্তানি বাড়তে পারে। অক্টোবরে রেমিট্যান্স কমেছে ২১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে বেড়েছিল ২৮ শতাংশের বেশি। গত অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে রেমিট্যান্স বেড়েছিল ৪৩ দশমিক ০৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে কমেছে শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ।
গত অর্থবছরে জুলাই-সেপ্টেম্বরে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের চেয়ে আয় বেশি হয়েছিল বলে বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবে কোনো ঘাটতি হয়নি। বরং উদ্বৃত্ত থেকেছে ৩৪৮ কোটি ডলার। তবে অর্থবছরের শেষ দিকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় কমে খরচ বেড়ে যাওয়ায় বছর শেষে ঘাটতি হয় ৩৮১ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে বৈদেশিক মুদ্রার আয় কমে যাওয়া ও খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে ঘাটতি হয়েছে ২৩১ কোটি ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়েছে চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক সম্পদ কমে ১০ দশমিক ৪ শতাংশ বাড়তে পারে। গত অর্থবছরে এ সম্পদ বেড়েছিলো ২৭ শতাংশ। ফলে চলতি অর্থবছরে এ ঘাটতি আরও বাড়তে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে চলতি অর্থবছর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ৫ হাজার ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। যা দিয়ে ৭ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। কিন্তু গত কয়েক মাসের ব্যবধানে দেখা যাচ্ছে রিজার্ভ কমছে। রিজার্ভ বেড়ে ৪ হাজার ৭০০ কোটি ডলারে উঠেছিল। এখন তা কমে ৪ হাজার ৫০৬ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। যা দিয়ে ৬ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। রিজার্ভ বাড়ে মূলত রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে। এ প্রবাহ কমে গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে চলতি অর্থবছরে রপ্তানি আয় ১৩ শতাংশ এবং আমদানি ব্যয় সাড়ে ১৩ শতাংশ বাড়বে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। অর্থাৎ দুটোই প্রায় সমান হারে বাড়বে। বাস্তবে রপ্তানি আয় বেড়েছে প্রায় ২৩ শতাংশ, আমদানি ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৪৮ শতাংশ।
এ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়ার কারণে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। ফলে আগামীতে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় সংকট বাড়তে পারে। কেননা আমদানির একটি বড় অংশই হচ্ছে জ্বালানি তেল, শিল্পের যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্য ও ভোগ্যপণ্য। আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের দামই বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে জ্বালানি তেল আমদানিতে ডলারের হিসাবে এলসি খোলা বেড়েছে ৭০ দশমিক ৪০ শতাংশ, আমদানি বেড়েছে ৬০ শতাংশ। পরিমাণে একই পরিমাণ আমদানি হলেও দাম বৃদ্ধির কারণে খরচ বেড়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি কমেছিল ৫ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং এলসি খোলা কমেছিল ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের আলোচ্য সময়ে ভোগ্যপণ্য আমদানি বেড়েছিল ১৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি বেড়েছে ৩৭ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং এলসি খোলা বেড়েছে ৬৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। গত অর্থবছরের ওই সময়ে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছিল সাড়ে ১২ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে ওই সময়ে তা বেড়েছে ১৯ শতাংশ এবং এলসি খোলা বেড়েছে ৩৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। শিল্পের মধ্যবর্তী কাঁচামাল আমদানি গত অর্থবছরের ওই সময়ে বেড়েছিল ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছে ৭২ শতাংশ। এলসি খোলা বেড়েছে ৬৫ দশমিক ৫১ শতাংশ। শিল্পের কাঁচামাল আমদানি গত অর্থবছরের জুলাই সেপ্টেম্বরে বেড়েছিল ১১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছে ৫০ শতাংশ এবং এলসি খোলা বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে কৃষিতে বাড়তি খরচ হবে ২ হাজার কোটি টাকা, শিল্প খাতে ৫ হাজার কোটি টাকা, বিদ্যুতে ৩৬০ কোটি টাকা, গৃহস্থালির কাজে বাড়তি খরচ হবে ২০ কোটি টাকা। এসব বাড়তি খরচের কারণে প্রায় সংশিষ্ট সব পণ্য ও সেবার দাম বাড়বে।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বাবদ ৩৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাজেটে জ্বালানি খাতে ভর্তুকি বাবদ কোনো অর্থ রাখা হয়নি। কৃষিতে ১০ হাজার ৯৯ কোটি টাকার ভর্তুকি রাখা হয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে ডিজেলে ভর্তুকি দিয়ে কৃষকের কাছে বিক্রি করা হবে বলে বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থাৎ জ্বালানি তেলে কোনো ভর্তুকি না দিয়ে কৃষিতে ব্যবহৃত ডিজেলে ভর্তুকি দেবেন। ভর্তুকি এক খাতে না দিয়ে অন্য খাতে দিতে হচ্ছে। এছাড়া জ্বালানি তেল নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন খরচ বাড়বে। তখন এ খাতেও ভর্তুকি দিতে হবে। রপ্তানিতে খরচ বাড়ায় বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। এ খাতেও সহায়তা প্রয়োজন।
এ পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, জ্বালানি তেলে সরাসরি ভর্তুকি দিলে সব খাতই উপকৃত হতো। এখন বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি দিলে শুধু ওই খাতই উপকৃত হবে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দাম বৃদ্ধির কারণে জ্বালানি তেলে ভর্তুকি কমবে। কিন্তু জ্বালানির প্রভাবে কৃষি, শিল্প, রপ্তানি ও নিত্যপণ্যের খরচ বাড়বে। ফলে এসব খাতে পরিস্থিতি সামাল দিতে আরও বেশি ভর্তুকি লাগতে পারে। ভর্তুকি বেশি লাগলে তখন ঋণও বেশি করতে হবে। কেননা এবার রাজস্ব আদায়ের অবস্থা ভালো। জুলাই-সেপ্টেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ শতাংশ। গত বছর যেটা ছিল ৪ শতাংশ। কিন্তু সব খাতে খরচ বাড়ায় রাজস্ব দিয়ে সরকারের ব্যয় সামাল দেওয়া যাবে না। উন্নয়ন কাজে টাকার জোগান দিতে হলে ঋণ করতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে সরকার কোনো সুফল পাবে না। বরং এক হাত ঘুরিয়ে খরচ বাড়বে। বাড়বে জন অসন্তোষ।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বাস-লঞ্চের ভাড়া নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ট্রাক-কার্ভাড ভ্যানের ভাড়া নির্দিষ্ট করা হয়নি। ফলে পণ্য পরিবহণে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করা হয়। গার্মেন্ট মালিক ও ট্রাক মালিকদের সম্পর্কের ভিত্তিতে ভাড়া নির্ধারিত হয়। ডিজেলের দাম বাড়ানোর ফলে ১৮ হাজার টাকার ভাড়া বেড়ে এখন হয়েছে ২০ থেকে ২১ হাজার টাকা।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, প্রতিনিয়ত পোশাকের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। উলটো দিকে ক্রেতারা পণ্যের দাম কমাচ্ছে। এতে গার্মেন্ট খাত টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে। এ অবস্থায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে এক্সেসরিজ থেকে শুরু করে সব কিছুর দামই বাড়বে। ফলে উৎপাদন খরচ আরও বাড়বে। করোনার ধকল সইয়ে সবেমাত্র ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল পোশাক খাত। এই সময় গার্মেন্ট মালিক ও সাধারণ মানুষ কারও জন্যই এ সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী ও যুক্তিসঙ্গত হয়নি।