স্টাফ রিপোর্টার: কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে সারাদেশে শুরু হওয়া লকডাউনের ষষ্ঠ দিন আজ। লকডাউনের পঞ্চম দিনে রাস্তাঘাটে মানুষজনের সমাগম বেড়েছে। ব্যাংক-বীমা খোলা থাকায় ভিড় বেড়েছে। রাস্তায় বেড়েছে রিকশা, মোটরসাইকেল এবং ব্যক্তিগত যান চলাচল। আগের চার দিনের চেয়ে গতকাল দোকানপাটও বেশি খুলেছে। অলিগলিতে বেশিরভাগ দোকানই ছিলো খোলা। তবে লকডাউন এবং স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নে কঠোর ভূমিকায় রয়েছে জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব এবং পুলিশ। এদিকে, করোনায় অব্যাহত সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধির কারণে সরকার চলতি বিধিনিষেধ আগামী ১৪ জুলাই পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এই বিধিনিষিধের মেয়াদ আগামী ৭ জুলাই শেষ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু বিদ্যমান বাস্তবতায় করোনার বিস্তার ঠেকাতে বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য কোভিড-সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটি সরকারের কাছে প্রস্তাব দেয়। গতকাল সোমবার দেশে সর্বোচ্চ রেকর্ড-সংখ্যক ১৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হলো ১৫ হাজার ২২৯ জনের। বর্তমানে করোনায় সংক্রমণের হার গ্রামগঞ্জে বেশি। মোট আক্রান্তের ৫০ শতাংশই গ্রামে। কিন্তু গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবায় অক্সিজেন, সজ্জা ও আইসিইউর সংকট চরমে। ফলে অনেকেই ছুটছেন ঢাকায়। ঢাকায় এসেও জুটছে না সজ্জা, অক্সিজেন ও আইসিইউ। ফলে সবকিছু মিলিয়ে করোনায় বিপর্যস্ত নাগরিক জীবন। ইতিমধ্যে মানুষকে ঘরে থাকা বাধ্যতামূলক করতে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, আনসার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারা দেশে মোতায়েন করা হয়েছে। জনগণকে সচেতন থাকার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি তারা বিধিনিষেধ ভঙ্গ করার দায়ে জেল-জরিমানা পর্যন্ত করছেন। কিন্তু তাতেও মানুষকে পুরোপুরি ঘরবন্দি করা যাচ্ছে না। নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ, দিনমজুররা ইতোমধ্যে বেকার হয়ে পড়েছেন। সরকারিভাবে কিংবা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও পর্যাপ্ত ত্রাণসহায়তার ব্যবস্থা এখনো হয়নি। ফলে তারা কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ছেন রাস্তায়, বাজারে।
চুয়াডাঙ্গার সড়কগুলোতে ছিলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারি। সকাল থেকে জেলার প্রবেশপথগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে তদারকি করেছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা। লকডাউনকৃত এলাকায়গুলোতে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন ১৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। অপ্রয়োজনে বাইরে আসা ও স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের জরিমানা করছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১২টি মোবাইল কোর্টে ৭৬টি মামলায় ১০১ জনকে ৬২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও ৩ জনকে ৩ দিন করে বিনাশ্রম কারাদ- প্রদান করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। লকডাউন বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ন স্থানে নিয়মিত টহল অব্যাহত রেখেছে ৪ প্লাটুন সেনাবাহিনী ও ৩ প্লাটুন বিজিবিসহ পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। গতকাল দুপুরে চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্বর, আলুকদিয়া ও ভালাইপুরে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করায় ও মোটরসাইকেলের কাগজপত্র না থাকায় ১১ জনকে ৫ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেন। অভিযানে সহযোগিতা করেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) চুয়াডাঙ্গা কার্যালয়ের মোটরযান পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম, সেনাবাহিনী ও আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা।
দর্শনায় লকডাউনের কার্যক্রম পরিদর্শক করেন জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার। এ সময় দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলারা রহমান, উপজেলা চেয়ারম্যান আলী মুনছুর বাবু, দর্শনা থানার ওসি মাহাব্বুর রহমানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যায় সদর উপজেলার বেলগাছি, জাফরপুর, ডিঙ্গেদহ বাজার, সরোজগঞ্জ বাজার, ভান্ডারদহ, ছয়ঘরিয়া, শংকরচন্দ্র এলাকায় অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযান পরিচালনা করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান। এসময় স্বাস্থ্যবিধি না মানার অপরাধে ৪টি প্রতিষ্ঠানকে ২ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাজে সহযোগিতা করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সার্টিফিকেট সহকারি সোবহান আলীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
সরোজগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করায় সরোজগঞ্জ বাজারে ৭ জনের নিকট থেকে ২ হাজার ৮শ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সবুজ কুমার বাসক এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এসময় আদালতকে সহয়োগিতা করেন কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলি আহম্মেদ হাসানুজ্জামান মানিক ও চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ সদস্যরা।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, আলমডাঙ্গায় কঠোর লকডাউনের ৫মদিনে সরকারি বিধিনিষেধ অমান্য করে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হওয়া ও দোকান খুলে ব্যবসা করার অপরাধে ১৩ জনকে জরিমানা করেছে। গতকাল ৫ জুলাই সকাল থেকে শহরে ঢোকার সমস্ত রাস্তা পুলিশের কড়া নজরদাড়িতে বাইরে থেকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনো মানুষ প্রবেশ করতে পারিনি। তবে কিছু মানুষ সরকারি বিধিনিষেধ অমান্য করে মোটরসাইকেল নিয়ে হওয়ার অপরাধে শহরে প্রবেশ মুখে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি হুমায়ন কবীর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করেন। বেলা সাড়ে ১০টা থেকে সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ন কবীর আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত এমএম সেলিম ও সেনাবাহিনীর টহল টিম নিয়ে শহরের বিভিন্ন মোড়ে অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযান পরিচালনাকালে সরকারি বিধি নিষেধ অমান্য করার ১৩ জনকে জরিমানা করেন। জরিমানা প্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন বাদেমাজু গ্রামের চিনির উদ্দিন বিশ^াসকে ৫শ টাকা, মুন্সিগঞ্জের সাব্বিরকে ৫শ টাকা, শাকিলকে ৫শ টাকা, গোবিন্দপুরের তপন চক্রবর্তীকে ৫শ টাকা, ওলিউরকে ৫শ টাকা, মিরপুর উপজেলার মিঠানের সুজনকে ৫শ টাকা, কালিদাসপুরের শেখ আমানুল্লাহকে ৫শ টাকা, সোনাপট্টির সন্তোষকে ৫শ টাকা, পথচারী শরিফুলকে ৫শ টাকা, নায়েব আলীকে ৫শ টাকা, আশিকুর রহমানকে ৫শ টাকা, আব্দুল্লাহ আল মামুনকে ৫শ টাকা, মিয়াপাড়ার ইলিয়াস হার্ডওয়ারের মানোয়ারকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করেন। জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, লগডাউন অমান্য ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে মুখে মাস্ক পরিধান না করায় জীবননগরে আরো ৪ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মহি উদ্দিন ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ৩ জন মোটরসাইকেল চালককে ৩ হাজার ও মাস্ক পরিধান না করায় অপর আর একজনকে ৫শ’ টাকা জরিমানা করা হয়। কঠোর লকডাউন প্রতিপালনে ৫ম দিনে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মহিউদ্দিন জীবননগর শহরে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। কঠোর লকডাউন আইন অমান্য করে কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়া ও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মুখে মাস্ক পরিধান না করার কারণে ৪ জনকে ৩ হাজার ৫শ’ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কঠোর লকডাউন চলাকালে মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে সূত্রে জানা গেছে।
দর্শনা অফিস জানিয়েছে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দর্শনায় দফায় দফায় অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বি, এম,তারিকুজ্জামানের নেতৃত্বে দর্শনা বাস্ট্যান্ডে অভিযান চালান ভ্রাম্যমান আদালত। এ অভিযানে কোনো জরুরি কাজ ছাড়া রাস্তায় বের হওয়া ও স্বাস্থ্যবিধি লংঘনের দায়ে ৯টি মামলাসহ ১৩জনকে ৯ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনের পঞ্চম দিনে মেহেরপুর সদর উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে গণসচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হয়েছে। এদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুল আলমের নেতৃত্বে এ সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হয়। জনসচেতনতামূলক প্রচারণার সময় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুল আলম বলেন, ৭ দিনের লকডাউন চলাকালে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কাঁচা তরিতরকারিসহ মুদিখানার দোকান খোলা রাখা যাবে। এই কঠোর লকডাউন চলাকালে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হোটেলে খাবার বিক্রি করা যাবে, তবে হোটেলে বসে খাবার খাওয়া যাবেনা। অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে এলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়ানুর রহমান এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এদিন সকাল দিকে মেহেরপুর পুলিশের একটি দল শহরের হোটেল বাজার মোড় এবং পুরাতন বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন পয়েন্টে সচেতনতামূলক প্রচারণা ও মাস্ক বিতরণ করা হয়। এ সময় যে সব পথচারী মাস্ক পরেননি তাদেরকে মাস্ক পরতে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন থানা পুলিশের প্রচারণা টিম। এ ছাড়াও মাস্কবিহীন পথচারীদেরকে পুলিশের পক্ষ থেকে মাস্ক পরিয়ে দেয়া হয়।
এদিকে সচেতনতামূলক প্রচারণাকালে মেহেরপুরে পুলিশ সদস্যরা বলেন, বর্তমান সময়ে হঠাৎ করোনার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। করোনার সংক্রমণ রোধে আমাদের এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
এদিন সকাল দিকে মেহেরপুর পুলিশের একটি দল শহরের হোটেল বাজার মোড় এবং পুরাতন বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন পয়েন্টে সচেতনতামূলক প্রচারণা ও মাস্ক বিতরণ করেন। এ সময় যে সব পথচারী মাস্ক পরেননি তাদেরকে মাস্ক পরতে ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখাসহ সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের পরামর্শ দেন থানা পুলিশের প্রচারণা টিম। এ ছাড়াও মাস্কবিহীন পথচারীদেরকে পুলিশের পক্ষ থেকে মাস্ক পরিয়ে দেয়া হয়। সচেতনতামূলক প্রচারণা কালে পুলিশ সদস্যরা বলেন, বর্তমান সময়ে হঠাৎ করোনার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। করোনা সংক্রমণ রোধে আমাদের এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সাতদিনের কঠোর লকডাউনে পঞ্চম দিনেও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের অভিযান মোবাইল কোর্ট চলমান আছে। মুজিবনগরে সর্বাত্মক পালিত হচ্ছে সরকারের দেয়া ঘোষিত লকডাউন । কঠোর লকডাউনের পঞ্চম দিনে উপজেলা প্রশাসন বিজিবি ও পুলিশের সহযোগিতায় দিনব্যাপী পরিচালনা করে মোবাইল কোর্ট। মুজিবনগর উপজেলার কেদারগঞ্জ বাজার, ভবেরপাড়া, সোনাপুর, আনন্দবাস বাজার, দারিয়াপুর, মোনাখালী, কোমরপুর বাজার, মহাজনপুর বাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ৫টি মামলায় ৫ ব্যক্তিকে মোট ৪১০০ টাকা জরিমানা করা হয়।