চোখের পলকে ৬ লাখ টাকা নিয়ে চম্পট প্রতারক 

চুয়াডাঙ্গা ইসলামী ব্যাংক থেকে টাকা তুলে মোটরসাইকেল ওঠার সময় প্রতারকচক্রের খপ্পরে পাট ব্যবসায়ী

স্টাফ রিপোর্টার: কাগজপত্র-টাকা পড়ে গেছে বলে বোকা বানিয়ে নগদ ৬ লাখ টাকাভর্তি ব্যাগ নিয়ে সটকে পড়েছে প্রতারক চক্র। গতকাল মঙ্গলবার আনুমানিক সকাল পৌনে ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অদূরে ইসলামী ব্যাংকের সামনে এ ঘটনা ঘটে। সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও দেখে পুলিশ প্রতারকদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তবে গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তিন প্রতারকের একজনকেও ধরতে পারেনি পুলিশ।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার মজলিশপুরের আব্দুল কাদেরের ছেলে সাইদুর রহমান গতকাল মঙ্গলবার ইসলামী ব্যাংক চুয়াডাঙ্গা শাখা থেকে নগদ ৬ লাখ টাকা তোলেন। টাকাগুলো একটি ব্যাগে ভরে তিনি ব্যাংক থেকে বের হন। রাস্তার পাশে রাখা মোটরসাইকেলের হ্যান্ডেলে টাকার ব্যাগ রাখার পরপরই দু’প্রতারক পাশে এসে দাঁড়ায়। একজন বলে, আপনার কাগজপত্র ও টাকা পড়ে গেছে। মোটরসাইকেল থেকে নেমে সাইদুর রহমান পেছনের দিকে তাকিয়ে কাগজ তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এ সুযোগে মোটরসাইকেলের হ্যান্ডেলে বাধানো টাকার ব্যাগ হাতিয়ে নিয়ে একজন প্রতারক অপর প্রতারকের হাতে তুলে দেয়। প্রতারিত সাইদুর রহমান মোটরসাইকেলের হ্যান্ডেলে রাখা টাকার ব্যাগ না দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন। একই ধরণের ব্যাগ নিয়ে অপর একজন পাশ দিয়ে যাচ্ছেন দেখে তার পিছু নিয়ে শহীদ হাসান চত্বরে তাকে থামিয়ে ব্যাগটি তার বলে দাবি করেন। ওই ব্যাগের মালিক ব্যাগটি খুলে দেখালে সাইদুর রহমানের ভুল ভাঙে। তিনি ইসলামী ব্যাংকের সামনে ফিরে প্রতারণার বিষয়টি জানান। সদর থানায় জিডি করেন। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান বিষয়টি আমলে নিয়ে পাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেন। তিনি তার সহকর্মীদের সাথে নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ফুটেজ দেখে তিন প্রতারককে চিহ্নিত করেন। তিন প্রতারকের ছবি দেখে স্থানীয়দের তেমন কেউ চিনতে না পারলেও পুলিশ তা ছড়িয়ে শনাক্তের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিওতে দেখা গেছে, তিনজন সঙ্গবদ্ধ ব্যক্তির দুজনের মুখে মাস্ক, একজন মাস্ক ছাড়া ব্যাংকের সামনে ঘুর ঘুর করছিলেন। টাকা তুলে ব্যাংক থেকে ব্যাগ হাতে বের হন সাইদুর রহমান। ব্যাংকের বিপরীত প্রান্তে তথা থানার দিকে রাস্তার পাশে রাখা তিনি তার মোটরসাইকেলে টাকার ব্যাগ রাখেন। মোটরসাইকেলে উঠে বসেন। এরপরই ওই তিন প্রতারকের দুজন তার পাশে গিয়ে দাঁড়ান। মোটরসাইকেল থেকে নেমে পেছন ঘুরে কিছু একটা কুড়োতে গেলে ব্যাগটি নিয়ে হাতিয়ে নেয় একজন। পাশে থাকা অপরজনের হাতে ব্যাগটি দিয়ে দেয়। ব্যাগটি নিয়ে দ্রুত রাস্তা পার হয়ে ব্যাংকের দিকেরই মার্কেটের ভেতর ঢুকে পড়েন। এরপর পাশে থাকা প্রতারকও সরে পড়েন। টাকার ব্যাগ হারিয়ে ছুটতে শুরু করেন সাইদুর রহমান। টাকা হারানোর বিষয়ে সাইদুর রহমানের নিকট বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি পাট খরিদ করে দেয়ার ব্যবসা করি। দূরের ব্যবসায়ীরা টাকা পাঠান, সেই টাকা দিয়ে পাট কিনে ট্রাকযোগে পাঠিয়ে দিই। ওই ৬ লাখ টাকা দিনাজপুরের এক ব্যবসায়ীর। তিনিও পাট কেনার জন্যই পাঠিয়েছিলেন। টাকা ব্যাংক থেকে তুলে মোটরসাইকেলে ওঠার সময় চালান পড়ে যায়। চালানটা তুলতে গেলে প্রতারকরা টাকার ব্যাগ নিয়ে চম্পট দেয়। মাত্র ৪০ সেকেন্ডেই টাকা নিয়ে সটকে পড়ে প্রতারকচক্র।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ বলেছেন, প্রতারকরা সবসময়ই সুযোগ খোঁজে। সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজ দেখে প্রতারকদের গ্রেফতার করে টাকা উদ্ধারসহ তাদের আইনের আওতায় নেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।

 

Comments (0)
Add Comment