বৈশি^ক মহামারীকালে সাজেদা ফাউন্ডেশনের আইসিইউ সেবা বন্ধ না করার আহ্বান
স্টাফ রিপোর্টার: ‘চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে সরকারিভাবে স্থায়ী আইসিউ সেবা চালু না হওয়া পর্যন্ত সাজেদা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় চলমান আইসিইউ সেবা অব্যাহত রাখতে হবে। মেহেরপুরসহ দেশের প্রায় সব জেলা সদরের হাসপাতালে সাজেদা ফাউন্ডেশনের আইসিইউ সেবা অব্যাহত রাখলেও চুয়াডাঙ্গা থেকে তা অপসারণ করা হচ্ছে কেন? চুয়াডাঙ্গাবাসী সদর হাসপাতালে সাজেদা ফাউন্ডেশনের আইসিইউ সেবা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানাচ্ছে।’
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল প্রাঙ্গণে গতকাল বুধবার সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধন কর্মসূচি পালনকালে কমিটির আহ্বায়ক চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান চাঁদ উপরোক্ত আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ার কারণে করোনার মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলা করতে যখন জেলার সর্বস্তরের মানুষসহ সদর হাসপাতালের করোনা যোদ্ধা ডাক্তার, নার্স, স্বেচ্ছাসেবক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা যখন বিচলিত; ঠিক তখনই মানবতার দূত হিসেবে আমাদের পাশে সাজেদা ফাউন্ডেশনের আবির্ভাব। তারা সদর হাসপাতালে আইসিইউ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে সেবা দিতে শুরু করে। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাবিদদের বর্তমান অভিমত অনুযায়ী পুনরায় বিশ্বজুড়ে প্রাণঘাতি মহামারী করোনার প্রকোপ আসার সম্ভাবনা একেবারেই অমূলক নয়। যেকোনো সময় অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পুনরায় আঘাত হানতে পরে। এ অবস্থায় চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে আইসিইউ সেবা অপসারণ করবেন তা জেলাবাসীর বোধদয় না। যেখানে বাংলাদেশের মধ্যে সর্বশেষ ও জনসংখ্যার দিক থেকে কনিষ্ঠ জেলা মেহেরপুরসহ অন্যান্য জেলায় আপনার সাজেদা ফাউন্ডেশনের আইসিইউ সেবা চলমান থাকছে। তাহলে আমাদের জেলার বেলায় এতো বৈষম্য? চলমান আইসিইউ সেবা চালু না রাখলে কঠোর আন্দোলন করা হবে।
চুয়াডাঙ্গায় চলমান আইসিইউ রক্ষা কমিটি আয়োজিত মানববন্ধনে আলোচনাপর্ব পরিচালনা করেন কমিটির আহ্বায়ক চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান চাঁদ। মানববন্ধনে সমাপনী বক্তব্যে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার অরিন্দম সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম মালিক বলেন, আমিও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলাম। মহান সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় সকলের দোয়ায় সুস্থ হয়েছি। করোনা ভাইরাস এখনও রয়েছে। টিকাকরণ চললেও ভাইরাস সংক্রমণ থেমে নেই। সংক্রমিত নতুন নতুন রোগী রোজই শনাক্ত হচ্ছে। আবারও ভয়াবহ আকারে ছড়ানোর আশঙ্কা বিদ্যমান। আমি মুক্তিযোদ্ধা এবং দেশের প্রবীন নাগরিক হিসেবে সাজেদা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, সেবার মহান দায়িত্বে চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় আইসিইউ স্থাপন করা হয়েছিলো। বৈশি^ক মহামারী চলমান থাকা অবস্থায় কেনো চুয়াডাঙ্গা থেকে আইসিইউ তুলে নেয়া হবে? যতোদিন চুয়াডাঙ্গায় সরকারিভাবে স্থায়ী আইসিইউ স্থাপন না হচ্ছে ততোদিন সম্ভব না হলেও মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থাকা অবস্থায় তা তুলে না নেয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। মানববন্ধনে বিভিন্ন পেশাজীবী, সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অনেকেই অংশ নেন। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি সরদার আল আমিন, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ, আইসিইউ রক্ষা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পৌরসভার দ্বিতীয় প্যানেল মেয়র উজ্জল হোসেন, কমিটির যুগ্মআহ্বায়ক পৌর কাউন্সিলর মাফিজুর রহমান মাফি, কমিটির সদস্য পৌর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুন্সী আলাউদ্দীন আহমেদ, সদস্য ও পৌর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মহলদার ইমরান, পৌর কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম, পৌর কাউন্সিলর মনোয়ার হোসেন মনু, অরিন্দম সাংস্কৃতি গোষ্ঠীর সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক সেলিমুল হাবিব, সংলাপ সাংস্কৃতিক গোষ্টির সাধারণ সম্পাদক আহসান খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। মানববন্ধন শেষে নেতৃবৃন্দ চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জনের নিকট স্মারকলিপি পেশ করেন। এ সময় সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান বলেন, ইতিমধ্যেই সাজেদা ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা করেছি। লিখিত আবেদনও করেছি। আপনাদের যুক্তিযুক্ত দাবি মেনে সাজেদা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে যাতে আইসিইউ সেবা অব্যাহত থাকে তার জন্য সকল প্রকারের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এছাড়াও যশোর জেনারেল হাসপাতালে অবস্থিত সাজেদা ফাউন্ডেশনের আইসিইউ কোভিড ইউনিটের আরএমও চুয়াডাঙ্গা সমন্বয়কারীর ডা. নাফিজউল্লাহ সানির নিকট প্রদান করা হয়েছে।
কর্মসূচি পালন শেষে চুয়াডাঙ্গায় আইসিইউ রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব সাংবাদিক খায়রুল ইসলাম বলেছেন, চুয়াডাঙ্গাবাসীর স্বার্থে আইসিইউ সেবা রক্ষার জন্য আমরা প্রয়োজনে পরবর্তি কর্মসূচি হাতে নেবো।