মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: সরকার হটানোর আন্দোলনে তৃণমূলের মানুষকে সম্পৃক্ত করতে সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে ‘পদযাত্রা’ করবে বিএনপি। আজ শনিবার সারাদেশে এ কর্মসূচি পালন করবে দলটির স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর থেকে বিএনপির ১৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ বলেছে, বৃহস্পতিবার রাতে দামুড়হুদা পাইলট হাইস্কুল মাঠ থেকে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৭টি বোমা সাদৃশ্য বস্তু ও ১৫টি বাঁশের লাঠি। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গাংনী বামন্দীর এক মাদরাসায় একটি ককটেল বিস্ফোরণের পর সেখান থেকে ৫টি ককটেল ও দেশীয় অস্ত্রসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে মুজিবনগরের গৌরিনগর গ্রামের সড়কের পাশ থেকে ককটেলসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে ককটেল বিস্ফোরণের আলামত এবং অবিস্ফোরিত চারটি ককটেল উদ্ধার করা হয়। পুলিশের দাবি, পৃথক থানা এলাকায় পৃথক অভিযানে গ্রেফতারকৃতরা সকলে সরকার বিরোধী কর্মকা- করার লক্ষ্যে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ে স্ব স্ব এলাকায় অবস্থান করছিলো। এমনকি গোপন বৈঠকের সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।
দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদায় বিএনপির ৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতপরশু বৃহস্পতিবার রাতে দামুড়হুদা পাইলট হাইস্কুল মাঠে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মামলাসহ গতকাল আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, সরকার বিরোধী কর্মকা- করার লক্ষ্যে বিষ্ফোরক দ্রব্য নিয়ে অবস্থান করাকালীন ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ৭টি বোমা সাদৃশ্য বস্তু ও ১৫টি বাঁশের লাঠি উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গার শওকত আলীর ছেলে ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম টুটুল (৩৮), মুন্সিপুর গ্রামের কুতুবউদ্দিনের ছেলে তরিকুল ইসলাম (৩৮), পুরাতন বাস্তুপুর গ্রামের আক্কাচ ম-লের ছেলে আব্দুল হান্নান ওরফে হানাই মেম্বার (৫৫), বিষ্ণুপুর গ্রামের জবেদ আলী ম-লের ছেলে মজিবুল হক (৫২), জয়রামপুর বাগানপাড়ার মৃত আইজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুল মালেক (৪০)।
থানা সূত্রে জানা গেছে, গত পরশু বৃহস্পতিবার দিনগত রাত আনুমানিক ১০টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দামুড়হুদা মডেল থানার এসআই সোয়াদ বিন মোবারক, এসআই মিজানুর রহমান, এসআই আসাদুজ্জামান, এসআই মনজুরুল হক, এসআই তাপস কুমার রায়, এএসআই দিরাজ আলী, এএসআই শেখ আবু হানিফ, এএসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে দামুড়হুদা পাইলট হাইস্কুল মাঠে অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় বিএনপির ৫জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৭টি বোমা সাদৃশ্য বস্তু ও ১৫টি বাঁশের লাঠি।
এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আরও ২০/২৫ জন পালিয়ে যায় বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এ ঘটনায় পরদিন শুক্রবার দামুড়হুদা মডেল থানার এসআই সোয়াদ বিন মোবারক বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫/৩ ধারায় ২২জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২০/২৫ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন।
এসআই সোয়াদ বিন মোবারক বলেন, কিছু দুষ্কৃতীকারী সরকার বিরোধী কর্মকা- করার লক্ষ্যে দামুড়হুদা ইউনিয়ন পরিষদের সম্মুখের ফুটবলমাঠে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ে অবস্থান করছে বলে গোপন সংবাদ পেয়ে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। গ্রেফতার করা হয় ৫ জনকে। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সেখান থেকে আরও ২০/২৫ জন পালিয়ে যায়।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম টুটুলের হাতে থাকা একটি ব্যাগ থেকে ৭টি বোমা সাদৃশ্য বস্তু ও ১৫টি বাঁশের লাঠি উদ্ধার করা হয়। পরে শুক্রবার গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে দামুড়হুদা মডেল থানায় বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলার অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।
গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুর গাংনীর বামন্দীতে মাদরাসায় একটি ককটেল বিস্ফোরণের পর ৫টি ককটেল ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের গোপন বৈঠকের কাছে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে এ ককটেল বিস্ফোরণ বলে জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বামন্দী পুলিশ ক্যাম্পের অদূরের মাদরাসাটিতে এ ঘটনা ঘটে। নাশকতার সাথে জড়িত সন্দেহে বিএনপির ৬ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে বামন্দী বাজারের কিরণ ট্রেডার্সের মালিক মহিবুল ইসলাম পলাশ, ইটভাটা ব্যবসায়ী আব্দুল আল হাসান শাওন, নিশিপুর গ্রামের শাহ আলম, বামন্দী সেন্টারপাড়ার আশরাফুল ইসলাম, বেতবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল হক, কড়–ইগাছি গ্রামের মনিরুজ্জামান। আটককৃতরা বিএনপির নেতাকর্মী বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে গ্রেফতার ও মামলা দায়েরের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি।
গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা বামন্দীর ওই মাদরাসায় গোপন মিটিং করার খবর পেয়ে গাংনী থানার এসআই মাসুদুর রহমান ও বামন্দী পুলিশ ক্যাম্পের এসআই ইসরাফিল আলম একাধিক দল নিয়ে সেখানে ছুটে যান। এ সময় বৈঠককারীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে ২টি রামদা, ৫টি অবিস্ফোরিত ককটেল এবং লাঠিসোটা উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে ওই ৬জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর যারা পালিয়ে গেছে তাদেরকে গ্রেফতারের জোর প্রচেষ্টা অব্যহত রয়েছে।
এদিকে গত রাতেই পুলিশের পক্ষ থেকে গাংনী থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বামন্দী পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই ইসরাফিল আলম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। গ্রেফতার হওয়া শাহ আলমকে প্রধান আসামি করে ১৫ জন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে এ মামলার এজাহারে। এছাড়াও এ মামলায় আরও ২০-২২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, যেকোন মূল্যে এলাকার শান্তি শৃংখলা বজায় রাখা হবে। নাশকতা করে কেউ পার পাবে না। এলাকার মানুষের সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ সতর্ক রয়েছে। গ্রেফতার ৬জনকে নাশকতা মামলার আসামি হিসেবে আজ শনিবার মেহেরপুর আদালতে সোপর্দ করা হবে বলেও জানান ওসি।
এদিকে ঘটনার পর সাংবাদিকদের কাছে বিএনপির পক্ষ থেকে বিবৃতি দেন গাংনী উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১১ ফেব্রুয়ারি শনিবার কয়েকটি ইউনিয়নে পদযাত্রা কর্মসূচি পালনে আমরা পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছিলাম। শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচি ব্যাহত করতেই ককটেল বিস্ফোরণের সাজানো ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের ফাঁসানো হচ্ছে। ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দাবি করেন তিনি।
মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুরের মুজিবনগরেও ককটেলসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত সকলেই যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা বলে জানিয়েছে পুলিশ। শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে গৌরিনগর গ্রামের সড়কের পাশে নাশকতার চেষ্টাকালে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। ঘটনাস্থল থেকে ককটেল বিস্ফোরণের আলামত এবং অবিস্ফোরিত চারটি ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে বলেও দাবি পুলিশের।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে- দারিয়াপুর ইউনিয়ন যুবদলের সহসভাপতি বিদ্যাধরপুর গ্রামের আব্দুল খালেক (৪৩), বাগোয়ান ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়পুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক (৪৮), মোনাখালী ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি শিবপুর গ্রামের শহিদুল হাসান রাহুল (২৭) এবং মোনাখালী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আজিম উদ্দিন গাজী (৫০)।
মুজিবনগর থানাসূত্রে জানা গেছে, গৌরিনগর গ্রামের সড়কের পাশে নাশকতার পরিকল্পনার সংবাদ পেয়ে অভিযান চালানো হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ককটেল ফাটিয়ে পালিয়ে যায় কয়েকজন। সেখান থেকে ওই চারজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। পাশাপাশি চারটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করা হয়।
মুজিবনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদি রাসেল জানান, নাশকতার সাথে জড়িত থাকার দায়ে গ্রেফতার চারজনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়া অজ্ঞাতনামা আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।